ব্রাজিলের ১০ কিশোর ফুটবলারের নাম জানা গেল

>ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোর স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আগুন লেগে মারা গিয়েছেন ১০ জন। গুরুতর আহত ৩ জন।
সেই দশ ফুটবলার, যাদের স্বপ্নটা শেষ হয়ে গেল এক লহমায়। সংগৃহীত ছবি
সেই দশ ফুটবলার, যাদের স্বপ্নটা শেষ হয়ে গেল এক লহমায়। সংগৃহীত ছবি

গতকাল ফুটবলের জন্য একটি ভয়ংকর দিন ছিল। প্রথমে এমিলিয়ানো সালার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গেল, শেষ হয়ে গেল রূপকথার আশা। সে খবর তাজা থাকতে থাকতেই এল ব্রাজিলের ফ্ল্যামেঙ্গোতে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার খবর। ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ক্লাবের স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছেন ১০ জন! আহত হয়েছেন তিনজন। ক্লাব সভাপতি রোডোলফো ল্যান্ডিম তো এ দিনটিকে ক্লাবের ১২৩ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে দিন বলেই দিয়েছেন।

রিও ডি জেনিরোর পশ্চিমে ভারগেম গ্রান্দে অবস্থিত ফ্ল্যামেঙ্গোর স্পোর্টস কমপ্লেক্স। এখানে যুব একাডেমির খেলোয়াড়রাই থাকে। ১৪ থেকে ১৭ বছরের কিশোর ফুটবলারদের আবাসস্থল এটি। স্থানীয় সময় ভোর ৫টাইয় সেখানে আগুন লেগে যায়। তখন কিশোর ফুটবলাররা সকলেই গভীর ঘুমে। সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের কাছে সহযোগিতার জন্য ফোন করা হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় লেগেছে তাঁদের। রিওর পুলিশ বিভাগের মতে সেখানে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে হয়েছে। তিনজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর মাঝে একজনের অবস্থা গুরুতর, তার শরীরের ৩০ ভাগই পুড়ে গেছে।

ক্লাব সভাপতি আজ সরাসরি এসেছেন মিডিয়ার সামনে, ‘আপনাদের সবাইকে অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত। আমাদের ক্লাবের ১২৩ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ঘটনা এটি। এখন আমাদের সকলকে এই ঘটনার আবেগ যতটা কমানো যায়, তার চেষ্টা করতে হবে। ফ্ল্যামেঙ্গো তাঁদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এই ঘটনার শোক থেকে বের হয়ে আসার জন্য। ঘটনার মূল কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে আমরা তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

প্রথমে জানা গিয়েছিল দুর্ঘটনায় নিহত ১০ জনের ৪ জন ক্লাবের একাডেমির খেলোয়াড়, ২ জন ক্লাবে ভর্তি হওয়ার জন্য ট্রায়াল দিতে এসেছিল। বাকি ৪ জন কর্মকর্তা। কিন্তু আজ নিহত দশজনেরই পরিচয় মিলেছে। সবার বয়সই ১৪ থেকে ১৬ এর মাঝে। নিহত খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছেন ভিক্টর ইসাইয়াস, বার্নার্দো পিসেতা মতো সম্ভাবনাময় তরুণ। ক্রিশ্চিয়ান এসমেরিও তো এই ১৫ বছরেই ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-১৭ দলেই ডাক পেয়েছিলেন। ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলো এর মাঝেই এই গোলরক্ষকের খেলা অনুসরণ করছিল। কিন্তু এসমেরিওর স্বপ্নটা যে শেষ হয়ে গেল ভয়ংকর এই দুর্ঘটনায়। 


এই ফ্ল্যামেঙ্গো থেকেই উঠে এসেছেন জিকো। এ মৌসুমেই ফ্ল্যামেঙ্গো ছেড়ে ইউরোপে নাম লিখিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়ুস ও এসি মিলানের পাকুয়েতা। নিহতদের মাঝে আর্থার ভিনিসিয়ুস নামে ১৪ বছরের এক কিশোরও রয়েছে। প্রিয় ক্লাবের এ ঘটনায় বেশ বড় ধাক্কা পেয়েছেন ভিনিসিয়ুস নিজেও। টুইটারে বলেছেন, ‘সে জায়গাতে থাকার কথা মনে করলেও গা শিউরে উঠছে। আমি এখনো ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছি না।’

পুরো ব্রাজিলিয়ান ফুটবল এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ। পেলে লিখেছেন, ‘আমার দিনের শুরু হলো এমন একটা খবর দিয়ে। ফ্ল্যামেঙ্গোর ট্রেনিং গ্রাউন্ড, যেখানে হাজারো খেলোয়াড় আসে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের জন্য একটি শোকের দিন।’ এ ঘটনার কারণে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের এই সপ্তাহের সকল খেলা স্থগিত করা হয়েছে।

দুর্ভাগা সেই ১০ ফুটবলার: আর্থার ভিনিসিয়ুস, থিলা পাইক্সো, বার্নার্দো পিসেতা, ক্রিশ্চিয়ান এসমেরিও, ভিক্টর ইসাইয়াস, পাবলো হেনস্রিক, জর্জে এদুয়ার্দো, স্যামুয়েল থমাস, গেডসন সান্তোস, রিকেলমে ভিয়ানা।