৫০৮ রানে থামল বাংলাদেশ
>মাহমুদউল্লাহর ১৩৬, সাকিবের ৮০, সাদমানের ৭৬ আর লিটনের ৫৪ রানে মিরপুর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫০৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ
শেষ পর্যন্ত ইনিংস ঘোষণাটা আর করা হলো না সাকিব আল হাসানের। জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে মাহমুদউল্লাহ আউট হলেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ইনিংস ঘোষণাটা করতে না পারলেও মিরপুর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশ যে সংগ্রহটা তুলেছে, তাতে অধিনায়ক হিসেবে সাকিব আনন্দিত হতেই পারেন। গোটা দুই দিন ব্যাটিং করে প্রথম ইনিংসে ৫০৮ অবশ্যই প্রতিপক্ষের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের ৫০৮ রানের ইনিংসে সবচেয়ে বড় অবদানটা মাহমুদউল্লাহ। গতকাল প্রথম দিনের শেষ বিকেলে যখন ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন কাল টেস্টের প্রথম দিন বিকেলের দিকে তিনি যখন মাঠে নামলেন, বাংলাদেশ কিন্তু খুব শক্তিশালী জায়গায় ছিল না। ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর ১১১ রানের জুটি বাংলাদেশকে সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে দেয়। এরপর লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ আর তাইজুল ইসলামের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনিই বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন শক্ত অবস্থানে। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে আমিনুল ইসলামের ৩৮০ বল খেলা এখনো পর্যন্ত ক্রিকেটের বড় সংস্করণের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি বল খেলা। কাল নিজের টেস্ট অভিষেকে সাদমান ইসলাম ১৯৯ বল খেলেছিলেন। আজ মাহমুদউল্লাহ তাঁকে ছাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত খেলেছেন ২৪২ বল। চা বিরতির ঠিক আগেই সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন মাহমুদউল্লাহ। আউট হওয়ার আগে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১৩৬। এটি তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস। ২০১০ সালে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। দীর্ঘ আট বছর টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরির দেখা তিনি পাননি। কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আট বছর পর সেঞ্চুরি পেলেন। এক মাসের মধ্যেই পেয়ে গেলেন তৃতীয়টি।
কাল বাংলাদেশ দিন শেষ করেছিল ৫ উইকেটে ২৫৯ রান নিয়ে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। আজ দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকেই যথেষ্ট আক্রমণাত্মক ছিলেন এছাড়া দুজন। নির্দিষ্ট করে বললে সাকিব। ১৩৯ বলে ৮০ রান করে ফিরেছেন সাকিব। সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ১১১ রানের জুটি ভাঙার জন্য দায়ী কেমার রোচ। রোচের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে সাকিবের ক্যাচটি চলে যায় গালিতে শাই হোপের হাতে। সাকিব যখন ফেরেন বাংলাদেশ তখনো বিপদ থেকে মুক্ত নয়—স্কোরবোর্ড রান তখন ৩০১।
লিটন দাস মাঠে নামলেন। কিন্তু লিটনের ওপর কী খুব বেশি ভরসা করার ছিল? জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি টেস্ট আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ব্যর্থতার পর এই টেস্টে বাদই পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই টেস্ট মুশফিকুর রহিম কিপিং করতে পারবেন না বলেই লিটনের অন্তর্ভুক্তি। সে হিসেবে বড় একটা চাপ লিটনের ওপর ছিল। লিটন সে চাপ দারুণ ভাবে মোকাবিলা করেছেন। ফিফটি পেয়েছেন। যদিও ৫৪ রানে ফিরেছেন তিনি। কার্লোস ব্রাফেটের বলে রিভার্স সুইপটি যদি না করতেন লিটন আজ হয়তো আরও অনেক দূরই যেতে পারতেন। তাঁর ব্যাট হাসছিল প্রথম থেকেই। সে হিসেবে বড় একটা সুযোগ তিনি হেলায় হারিয়েছেন।
মিরপুর টেস্টে দুটি দারুণ জুটির অংশ মাহমুদউল্লাহ। প্রথমে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ১১১ যোগ করার পর লিটনকে নিয়ে তাঁর অবদান ৯২। লিটন যখন ফেরেন, তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৯৩। প্রশ্নটা চাউর ছিল, কতদূর যেতে পারে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ তখনো ছিলেন। ইনিংসটাকে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন দারুণভাবে। তাইজুল ইসলামকে নিয়ে ৫৩ রানের আরও একটি জুটিতে দলের সংগ্রহটাকে নিয়ে গেলেন শক্ত অবস্থানে। তাইজুল মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গ দিয়ে ২৬ রান করেছেন। তাইজুল ফেরার পর নাঈম এসেও ২৯ বল খেলে করেছেন ১২ রান।
মিরপুরে একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। এক দিক দিয়ে দারুণও রেকর্ডও সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড সব ব্যাটসম্যানের পাশেই দুই অঙ্কের রান—টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এর আগে এমন ঘটনাই ঘটেছে মাত্র ১৪টি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের চার বোলার নিয়েছেন ২টি করে উইকেট— কেমার রোচ ৬১ রানে, জোমেল ওয়ারিক্যান ৯১ রানে, দেবেন্দ্র বিশু ১০৯ রানে আর কার্লোস ব্রাফেট ৫৭ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট পেয়েছেন শেরমন লুইস ও রোস্টন চেজ।
ক্যারিবীয়দের রান পাহাড়ের নিচে চাপা ফেলে বোলিংয়ের শুরুটাও দারুণ করেছে বাংলাদেশ। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোরবোর্ডে ১৭ রান তুলতেই হারিয়ে ফেলেছেন ৩ উইকেট। সাকিব আল হাসান ২টি আর মেহেদী মিরাজ একটি উইকেট তুলে নেন। আউট হয়ে ফিরেছেন ক্রেইগ ব্রাফেট, কাইরন পাওয়েল আর সুনীল আমব্রিস।