ব্যাটে লাগাম পরাচ্ছে বাংলাদেশ
>টেস্ট ক্রিকেটের মেজাজ কখনো কখনো বোঝে না বাংলাদেশ। আজ সংবাদ সম্মেলনে অকপটে স্বীকার করলেন মাহমুদউল্লাহ
ওষুধটাই শেষ কথা নয়, পথ্যটাও জরুরি। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অসুখটা ধরে ফেলেছেন স্টিভ রোডস। ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে আছে দিক-নির্দেশনাও। আর সেই পথ্য মেনে চলতে হবে বাংলাদেশকে। খুব কঠিন কাজ দিয়েছেন কোচ। বাংলাদেশের ক্রিকেটের মেজাজের সঙ্গেই যা যায় না। কিন্তু ১৫ সেশনের খেলা টেস্টে ভালো করতে হলে এর বিকল্পও নেই। কোচের কড়া নির্দেশ, ব্যাটে লাগাম পরাতে হবে সবাইকে। বেশি বেশি শট, অহেতুক ঝুঁকি নেওয়া একদম চলবে না।
আজ ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সংবাদ সম্মেলনেও যে শব্দগুলো জোরের সঙ্গে উচ্চারিত হলো: ধৈর্য, শৃঙ্খলা, ধারাবাহিকতা, নিজ নিজ শক্তি ও দুর্বলতা বোঝা, বড় জুটি গড়া। বাংলাদেশ দল এখনো মনে করে, সিলেটে তারা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলেছে। কিন্তু বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে, যখন যে শট খেলা উচিত ছিল না, তা-ই খেলে আউট হওয়ায়। জিম্বাবুয়ে বোলারদের কৃতিত্ব যতটা না, তার চেয়ে বেশি দায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।
মাহমুদউল্লাহ বললেন, ‘পিচ কন্ডিশন যেমন হবে সেই অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব। কিছু কিছু জিনিস আগেই ঠিক করেছি যে, আমরা সেগুলো করব না। একই সঙ্গে আমাদের শটগুলোও, যার যার যে জায়গাটা শক্তির, সেগুলো বুঝেশুনে শট খেলতে পারলে আমরা ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারব। এই জিনিসগুলোই আমাদের মাথায় কাজ করছে। আমি শেষ সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, এভাবে টেস্ট খেলার কোনো মানে হয় না। এক ধরনের হতাশা কাজ করে, কারণ প্রত্যাশা থাকে আপনি ম্যাচ জিতবেন ঘরের মাঠের কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে। সবারই এমন প্রত্যাশা থাকে, ব্যক্তিগত প্রত্যাশাও থাকে। যদি সেটা পূর্ণ না হয়... প্রতিটা ছেলেই যেভাবে কষ্ট করছে, স্ট্রেংথ ও স্কিল নিয়ে অনেক সময় দিচ্ছে বোলাররা, ব্যাটসম্যানরা... যে যার মতব্যক্তিগতভাবেবে কাজ করছে। একজন আরেকজনকে সাহায্য করছে। সবাই সবার কাজকে প্রশংসিত করছে। আমরা এগুলো করার চেষ্টা করছি যেন আমরা ভালো করতে পারি। এখন একটাই প্রত্যাশা, এই জিনিসগুলো যেন আমরা মাঠে নিয়ে আসতে পারি সঠিকভাবে।’
দলের ব্যাটসম্যানদের জন্য মাহমুদউল্লাহর বার্তা, ‘এখানকার উইকেট এমন না যে বল ব্যাটে আসবে আর আপনি শট খেলতে পারবেন। খুব বুঝেশুনে খেলতে হবে। একেক বোলারের জন্য একেক শট খেলতে হবে, আপনার শক্তি অনুযায়ী।’
বাংলাদেশ যে টেস্টে ভালো করতে পারছে না, এর পেছনেও টেস্টের মেজাজটা ধরতে না-পারাটাকেই কারণ মনে করেন মাহমুদউল্লাহ, ‘অন্য ফরম্যাটে আমরা যেভাবে ভালো খেলছি, ওটার মেজাজ ধরতে পেরেছি, টেস্টে হয়তো সেটা ধরতে পারছি না। কিছু ম্যাচে আমরা ভালো করেছি, কিছু ম্যাচে আবার বাজে পারফর্ম করেছি। এটা থেকে বের হওয়া দরকার, বের হতেই হবে। ধারাবাহিকতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট ক্রিকেটে। ডিসিপ্লিনড হতে হবে আমাদের তিন বিভাগেই। টেস্ট ক্রিকেটে আপনাকে বড় জুটি গড়তেই হবে, ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে। তাহলে আপনার ফলাফল পক্ষে আসবেই।’
পাঁচ দিনের খেলা বলে এখানে মনোযোগ ধরে রাখা সবচেয়ে কঠিন। আর আউট হতে একটা বলই লাগে। মাহমুদউল্লাহ তাই বলছেন, ‘আমার কাছে মনে হয় শৃঙ্খলার অভাবের কারণেই এমনটা হচ্ছে। যেটি আমি আগেই বললাম যে টেস্ট ক্রিকেটে মনোযোগও সেরকম পর্যায়ে থাকতে হবে। তা না হলে পারফর্ম করার সুযোগ অনেক কম। শৃঙ্খলার ব্যাপারটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। টেস্টে আরও ধৈর্য নিয়ে খেলতে হবে।’
কিন্তু এই ‘ডিসিপ্লিন’, এই ধৈর্য শেখার ইশকুলটি কোথায় হবে? বাংলাদেশের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়েই তো প্রশ্ন। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য তা মনে করেন না, ‘আমার মনে হয় না এখানে ঘরোয়া লিগের কোনো অজুহাত দেওয়া যাবে। যেটি বললাম, টেস্ট ক্রিকেটের ধাঁচটি কখনো ধরতে পারি আর যখন ধরি তখন অনেক ভালো খেলি আমরা। যখন আবার এদিক-সেদিক হয়, তখন আবার আমরাও নিজেদের গুঁটিয়ে ফেলি। এই বিষয়গুলোর সমাধানই খুঁজে বের করতে হবে। আর একটাই উত্তর, সেটি হলো ধারাবাহিকতা। মানে ধারাবাহিকভাবে আমাদের পারফর্ম করতে হবে।’