মরিনহোর যত উদ্ভট উদ্যাপন
চ্যাম্পিয়নস লিগে জুভেন্টাসের মাঠে মরিনহোর উদ্যাপন নিয়ে কথা কম হয়নি। মাঠে দর্শকদের ‘দুয়োধ্বনি’র জবাবে ম্যাচ শেষে তিনি যা করেছে, তা এখন ফুটবল ইতিহাসের অংশ। কিন্তু ব্যাপারটি যে অনেকেরই ভালো লাগেনি, সেটি কিন্তু স্পষ্ট। মরিনহো যতই বলুন, দর্শকেরা তাঁকে গ্যালারি থেকে গোটা ম্যাচে ‘অপমান’ করেছে বলেই জয়ের আনন্দে তিনি ওই ভঙ্গিটা করেছেন, কিন্তু লোকে এটি মানবে কেন!
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচের এমন উদ্যাপনের অবশ্য কারণ আছে। ম্যাচের ৮৫ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়েই ছিলেন। কিন্তু শেষ পাঁচ মিনিটে বদলে গেল সকল হিসেব নিকেশ। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার পরেই সেই অদ্ভুত উদ্যাপন করলেন মরিনহো। কানের কাছে হাত দিয়ে যেন শুনতে চাইলেন, প্রতিপক্ষ সমর্থকেরা কি বলতে চাচ্ছেন। এরপর হাত দিয়ে বোঝালেন, না শুনতে পাই না। নিজের নিন্দুকদের পাত্তাই দেন না, এমনটাই যেন বোঝাতে চাইলেন। তবে পর্তুগিজ এই কোচের এমন কাণ্ড কিন্তু নেহাতই নতুন নয় সেটা তো অতীতের দিকে তাকিয়েই জানা যায়...
পোর্তো বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২০০৪
২০০৪ সাল ছিল মরিনহোর উত্থানের সময়। চ্যাম্পিয়নস লিগে পোর্তোকে নিয়ে সেমিফাইনালে মুখোমুখি হন তখনকার বিক্রমশালী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে। প্রথম লেগে ২-১ গোলে জয় পায় তাঁর দল। কিন্তু ওল্ড ট্রাফোর্ডে খেলতে এসে ১-০ গোলে পিছিয়ে পরলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ত্রাতা হয়ে ওঠেন কস্তিনহো, একেবারে শেষ মুহূর্তে। এমন অভাবনীয় গোলের পর পোর্তো সমর্থকদের সঙ্গে উদ্যাপনে মেতে ওঠেন মরিনহো। রীতিমতো উন্মাতাল উদ্যাপন। ডাগ আউট থেকে মাঠের দিকে দৌড়ে যান। সেদিন অনেকটা দৌড়েই মাঠে পৌঁছতে হয়েছিল তাঁকে।
চেলসি বনাম বার্সেলোনা ২০০৬
কোচিং ক্যারিয়ারের হাতেখড়ি হয়েছিল বার্সেলোনার মাঠেই। লুই ফন গালের সহকারী হিসেবে বার্সেলোনাতেই ছিলেন দুই বছর। কিন্তু দিনে দিনে বার্সেলোনার চরমতম শত্রু হয়ে ওঠেন তিনি। যার সূচনা হয় ২০০৬ সাল থেকে। গ্রুপ পর্বের প্রথম দেখাতে ৯০ মিনিটে করা দিদিয়ের দ্রগবার গোলে ম্যাচ ড্র করে চেলসি। সে গোলের পর নিজের আবেগ সামলাতে পারেননি মরিনহো। হাঁটুতে ভর দিয়ে দুই হাত শূন্যে ছুড়ে চিৎকার করা শুরু করেন।
ইন্টার মিলান বনাম বার্সেলোনা ২০০৯
২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে আবারও মুখোমুখি হন বার্সেলোনার। প্রথম লেগে ৩-১ গোলে এগিয়ে থাকায় ম্যাচ নিয়ে চিন্তাই ছিল মরিনহোর। ৮৪ মিনিটে গোল হজম করার পরও এগিয়ে ছিল ইন্টার। রেফারির শেষ বাঁশি বাজানোর পরই শুরু হলো উদ্যাপন। এক হাত উঁচু করে পুরো মাঠ দৌড়ে বেড়ালেন মরিনহো। কিন্তু বার্সেলোনার গোলরক্ষক ভিক্টর ভালদেস প্রতিপক্ষ কোচের এই উদ্যাপন সহ্য করতে পারেননি। তাঁকে বাধা দিতে ছুটে আসেন তিনি। লেগে যায় তর্কাতর্কি। সেই তর্কাতর্কি অনেকক্ষণ ধরে চলার পরেও তিনি উদ্যাপন থামাননি।
রিয়াল মাদ্রিদ বনাম ভ্যালেন্সিয়া ২০১১
এই উদ্যাপন অবশ্য নতুন নয়, নিয়মিতই খেলোয়াড়দের করতে দেখা যায়। কিন্তু একজন কোচ যখন এমন উদ্যাপন করেন, তখন কেমন দেখায়? ভ্যালেন্সিয়া বিপক্ষে ম্যাচে ভালো অবস্থানেই ছিল রিয়াল মাদ্রিদ, কিন্তু শেষদিকে সোলদাদো ম্যাজিকে প্রায় হারতে বসেছিল তারা। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে যখন গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস একটি কর্নার ঠেকিয়ে দেন, তখনই উদ্যাপনে মেতে ওঠেন মরিনহো। সোজা গিয়ে হোসে কায়েহনের পিঠে চড়ে বসেন মরিনহো। খেলোয়াড়দের এমন উদ্যাপন চোখে লাগবে না, কিন্তু একজন কোচ করলে, তা চোখে পড়তে বাধ্য।
রিয়াল মাদ্রিদ বনাম ভিয়ারিয়াল ২০১১
ম্যাচের বিশ মিনিটেই ১-২ গোলে পিছিয়ে যাওয়ার মতো হতাশা কি-ই বা হতে পারে? তাও আবার নিজেদের মাটিতে। ম্যাচে হারের শঙ্কা ছিল পুরোটা সময়। তাঁর ওপর প্রতিপক্ষ সমর্থকদের দুয়োধ্বনি, কিন্তু সে ম্যাচেই যদি শেষ পর্যন্ত জয় পাওয়া যায়, তাহলে মরিনহোর মতো ‘খ্যাপা’ কোচ উদ্যাপনটা কেমন করবেন, সেটা সহজেই অনুমেয়। কাকার গোলে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর ভিয়ারিয়াল ডাগ-আউটের সামনে গিয়ে হাত ছুড়ে উদ্যাপন করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দেখো আমি কি করতে পারি।
রিয়াল মাদ্রিদ বনাম ম্যানচেস্টার সিটি ২০১২
ক্যাম্প ন্যু মরিনহো যে উদ্যাপন করেছিলেন, সেটিই যেন ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। নিজেদের ঘরের মাঠে ৮৫ মিনিট পর্যন্ত ২-১ গোল পিছিয়ে থাকা ম্যাচটিই করিম বেনজেমার গোল জয় পেল রিয়াল। গোলের পর আবারও সেই হাঁটু গেড়ে দুই হাত শূন্যে ছুড়ে উদ্যাপন।
সর্বশেষ সংযোজন জুভেন্টাসের মাঠে নিন্দুকদের পাত্তা না দেওয়া। দলের জয়ের পরপর এ রকম উদ্যাপন তার জন্য তো সাধারণ ঘটনা। এ ছাড়াও গোলের পর হুট-হাট মাঠে ঢুকে পড়া, নিজের দলের খেলোয়াড়দের জন্য রেফারির সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া সবকিছুই আসে নিজের ভেতর থেকে। এই তো সেদিনই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চেলসির এক কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাদের জড়ালেন। ‘স্পেশাল ওয়ান’, ‘অনলি ওয়ান’, ‘জ্যা মারিও’, যে নামেই ডাকুন না কেন হোসে মরিনহোর এই পাগলাটে ধরনের উদ্যাপন দেখলে হাসির পাশাপাশি আলাদা মুগ্ধতাও চলে আসবে। দলের প্রতি এতটা প্যাশন নিয়ে কোচিং করানো সহজ কাজ নয়। যে কাজ মরিনহো করে আসছেন কোচিং ক্যারিয়ারের শুরু থেকে।
দেখে নিন মরিনহোর কিছু পাগলাটে উদ্যাপন: