সৌম্য-ইমরুলকে ডাকার সিদ্ধান্ত জন্ম দিয়েছে বিস্ময়ের
>আজ সন্ধ্যায় এশিয়া কাপ খেলতে দুবাই রওনা হচ্ছেন সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস। এমনিতে টুর্নামেন্ট মাত্র দুই সপ্তাহের। এর মধ্যে দুজনকে হঠাৎ দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চারদিকে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক জানালেন তাঁদের প্রতিক্রিয়া—
দুজন গিয়েছিলেন খুলনায়, চার দিনের ম্যাচ খেলতে। হঠাৎ কাল সন্ধ্যায় তাঁদের জানানো হলো, দুজনকে যেতে হবে দুবাই, এশিয়া কাপ খেলতে। টুর্নামেন্টের মাঝে সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েসকে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চারদিকে। এমনিতে উদ্বোধনী জুটিতে তামিমের একজন যোগ্য সঙ্গী খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত নির্বাচকেরা। এবার তামিম নিজেই চোটে পড়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েছেন। রান নেই লিটন কিংবা তরুণ নাজমুলের ব্যাটেও। হঠাৎ দুই ওপেনারকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার অর্থ, দলের বর্তমান ওপেনারদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন নির্বাচক কিংবা টিম ম্যানেজমেন্ট। এভাবে সৌম্য-ইমরুলের ডাকাটা দলের জন্য কতটা ভালো হলো, সেটিই জানাচ্ছেন বাংলাদেশের সাবেক তিন অধিনায়ক—
‘এটা হওয়া উচিত নয়’
গাজী আশরাফ কাল খবরটি শোনার পরই টিভি চ্যানেলের টকশোতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বাংলাদেশ দলের সাবেক এ অধিনায়কের প্রশ্ন, সমস্যা শুধু ওপেনিংয়েই চিহ্নিত হলো কেন? মিডল কিংবা লোয়ার অর্ডার কি ধারাবাহিক ভালো করতে পারছে? গাজী আশরাফ তাই বলছেন,‘এটা হওয়া উচিত নয়। নির্বাচন প্রক্রিয়াটা নিয়েই পর্যালোচনা করা দরকার। বর্তমান খেলোয়াড়দের ওপর যদি আস্থা না থাকে তবে তাদের নির্বাচন কেন করা হলো? পুরো প্রক্রিয়াটা নিয়েই তো সমস্যা। আমাদের সমস্যা কি শুধু ওপেনিংয়ে? ওপেনাররা যদি দ্রুত আউট হয় তখনো তো ২৮০ বল বাকি থাকে। ২৮০ বল কি যথার্থভাবে সামলানো হচ্ছে? যদি না হয় ওপেনিংয়ে শুধু সমস্যা চিহ্নিত করা হলো, আর সেখানে বিকল্প হিসেবে দুজনকে উড়িয়ে নেওয়া হলো, আর বাইরে আর কোনো সমাধান ছিল না? ’
‘নির্বাচকদের ভূমিকা আছে বলে মনে হয় না’
আরেক সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদও ভীষণ অবাক হঠাৎ দুই ওপেনারের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে। দল গঠনে নির্বাচকদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন বিসিবির সাবেক এ প্রধান নির্বাচক, ‘ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই। আগ থেকে ভাবি না। নির্বাচকদের দূরদর্শী দৃষ্টি নেই, যেটা একটা দলের জন্য কখনোই ভালো নয়। তামিম যখন চোটে পেয়ে ফিরে আসে তখনই একজন অভিজ্ঞ বিকল্প রাখা দরকার ছিল। এখন হঠাৎ দুজনকে উড়িয়ে নেওয়া মানে কোনো চিন্তাভাবনা করে তাদের নেওয়া হচ্ছে না। ভালো করলে ভালো। নির্বাচকদের এখানে কোনো ভূমিকা আছে বলে মনে হয় না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমরা বুঝি কী করতে হবে। কিন্তু কী করিলে কী হইবে, এই চিন্তা তো আগ থেকেই করা উচিত ছিল। নাজমুল দুই ম্যাচ খারাপ করল, তার বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। একজনকে নিতে পারত, দুজন কেন?
‘একেবারে ভুল সিদ্ধান্ত’
বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম দুদিন আগেও দুবাইয়ে ছিলেন। মাঠে থেকে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের দুটি ম্যাচ দেখেছেন। দেখেছেন মাশরাফিদের অনুশীলনও। আজ সকালে ফিরে গেছেন তাঁর বর্তমান আবাস মেলবোর্নে। অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেই শুনেছেন বাংলাদেশ দল বাজেভাবে হেরেছে ভারতের কাছে। সেটির সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর, দলে যোগ করা হয়েছে আরও দুজনকে। কদিন আগেও যে দলকে ভীষণ আত্মবিশ্বাসী দেখেছেন, সেই দলটায় হঠাৎ কী হলো? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমিনুল প্রশ্ন তুললেন পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েই, ‘হঠাৎ সৌম্য-ইমরুলকে ডেকে নেওয়ার কারণটাও ঠিক বলতে পারছি না। হয়তো দুজন সফল হতেও পারে। তবে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কাও আছে। দুজন সবশেষ কবে ওয়ানডে খেলেছে জানিও না। একেবারে ভুল সিদ্ধান্ত। অনেক দিন ধরে আমি এ বিষয়টি কথা বলে যাচ্ছি। একটা জাতীয় দলের নির্বাচন পদ্ধতি সব সময় স্বচ্ছ হতে হয়। আমাদের দুই নির্বাচক তো আছেনই। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ, দলের ম্যানেজার, বিসিবি সভাপতি—সবাই নির্বাচকের ভূমিকায়। এখন শুনছি অধিনায়ক জানেই না যে দুজন খেলোয়াড়কে ডাকা হয়েছে। পুরো বিষয়টা হ-য-ব-র-ল, অগোছালো অবস্থা। একটা দল সব সময়ই ভালো খেলবে না, তবে সিস্টেমটা ভালো থাকলে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সিস্টেমটাই তো নেই। বুঝতে পারি না দল নির্বাচনে এত মানুষ কেন জড়িত? পরের দুইটা খেলায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ খুবই শক্তিশালী। দুই ম্যাচের জন্য দুই ওপেনার উড়িয়ে নেওয়ার মানে নেই। এতে দলের যে স্পিরিট সেটা থাকবে না। যাদের উড়িয়ে নিয়ে হচ্ছে তারা আদৌ খেলবে কি না নিশ্চিত না। হঠাৎ ওই কন্ডিশনে যেয়েই ভালো খেলা কঠিন। হঠাৎ দুজন খেলোয়াড়কে ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার মানে নেই। এটা সম্পূর্ণ ভুল ও অপরিণত সিদ্ধান্ত।’