জার্মান ফুটবলে ওলটপালটের আলামত
জার্মানির ডাগআউটে তিনি আছেন ১৪ বছর ধরে। চৌদ্দ বছর! অনেক লম্বা সময়। প্রথমে এসেছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানের সহকারী হয়ে। ক্লিন্সমান নিজ দেশে আয়োজিত ২০০৬ বিশ্বকাপে হতাশ করার পর উত্তরসূরি হিসেবে জোয়াকিম লোকে বেছে নেওয়া হয়। সেই লো অবশেষে এক যুগ ধরে জার্মানির কোচের দায়িত্ব পালন করার পর সরে যাচ্ছেন। এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে আসতে বাকি নেই। ছাঁটাই হওয়ার আগে লো নিজেই সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।
আজ দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে অঘটনের শিকার হয়ে ২-০ গোলে হেরেছে জার্মানি। দুটি গোলই এসেছে যোগ করা সময়ে। তাতেই বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে তাদের। অথচ এই লোর হাত ধরে ২০১৪ বিশ্বকাপ জিতেছিল জার্মানি। ১৯৯০ সালের পর তাদের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা। কিন্তু এবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পর জার্মানির দায়িত্বে লো থেকে যাবেন কি না, তা-ই এখন প্রশ্ন।
২০২২ সাল পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও লো সরে যাবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। লো যদিও পরিষ্কার ধারণা দেননি। আজ হেরে যাওয়ার পর ৫৮ বছর বয়সী এই কোচ বলেছেন, ‘এখনই এই প্রশ্নের (অবসর নেবেন কি না) উত্তর দেওয়া আমার জন্য কঠিন। পুরো ব্যাপারটা ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। এখন হতাশাচ্ছন্ন হয়ে আছি। আগামীকাল ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলব। তখন দেখা যাবে কী হয়।’
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিদায় নেওয়া অবশ্য একদমই নতুন ঘটনা নয়। বিশেষ করে ইউরোপের দলের জন্য। এ নিয়ে টানা চার ইউরোপিয়ান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিল। ২০০২ সালে ফ্রান্স, ২০১০ সালে ইতালি আর ২০১৪ বিশ্বকাপে স্পেন প্রথম রাউন্ডে বিদায় নিয়েছিল। এবার জার্মানি। ১৯৩৮ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারল না জার্মানি। অথচ তারা ফাইনাল খেলেছে ৭ বার, সেমিফাইনাল খেলেছে ১৩ বার, কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে ১৬ বার। জার্মানির মতো এত ধারাবাহিক দল বিশ্বকাপেই আর নেই!
জার্মানি নিজেদের ভাগ্যকেও দুষতে পারছে না। প্রথমে মেক্সিকোর কাছে ১-০ গোলে হেরেছে। সুইডেনের বিপক্ষে ড্র করতে করতে বেঁচে ফিরেছে টনি ক্রুসের অবিশ্বাস্য ফ্রিকিকে। কিন্তু তাতে লাভ হলো কী? আজ দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বিশ্বকাপের দুর্বল দলের কাছে যোগ করা সময়ে ২-০ গোলে হেরেছে জার্মানি। অথচ জার্মানি এবার ছিল সবচেয়ে ফেবারিট দলগুলোর একটি। টানা দুবার বিশ্বকাপ জয়ের ইতালিয়ান ও ব্রাজিলীয় কীর্তি জার্মানি ছুঁয়ে ফেলবে বলে কতশত আলোচনা।
স্বয়ং জোয়াকিম লো মানছেন, জার্মানি নিজেদের ভাগ্যকেও দুষতে পারবে না, ‘গ্রুপের দুই প্রতিপক্ষ সুইডেন আর মেক্সিকোকে অভিনন্দন জানাই (পরের রাউন্ডে যাওয়ায়)। আমাদের বাদ পড়াটাই পাওনা ছিল। আমরা অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলাম। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে পারিনি।’