বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় জার্মানি সত্যিই বাদ পড়েছে!
১৯৯৮ বিশ্বকাপ। ফাইনালে জিদানের জোড়া হেডে ব্রাজিলকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল ফ্রান্স। ২০০২ সালে কী হয়েছিল? ফ্রান্স বাদ পড়ে গেল গ্রুপ পর্ব থেকেই। প্রথম ম্যাচে সেনেগালের সঙ্গে ১ গোলে হার, দ্বিতীয় ম্যাচে উরুগুয়ের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র, আর শেষ ম্যাচে ডেনমার্কের সঙ্গে ২ গোলের হারে বিদায় নিয়েছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলটি।
২০০৬ সালের বিশ্বকাপের কথা। ফাইনালে মাতেরাজ্জিকে ঢুস দিয়ে জিদান দেখলেন লাল কার্ড। আর টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে ইতালি জিতে নিল নিজেদের চতুর্থ শিরোপা। কিন্তু পরের বিশ্বকাপ ২০১০ এ ইতালি পায়নি একটি জয়ও। দুই ম্যাচে ড্র আর এক ম্যাচে হার, ২ পয়েন্ট নিয়ে বিদায় নেয় প্রথম রাউন্ড থেকেই।
২০১০ বিশ্বকাপ। টিকিটাকা ছন্দে ফুটবলবিশ্বকে মুগ্ধ করে স্পেন জিতেছিল নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ। ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো জিতে তাদের ফুটবল বৃহস্পতি তখন তুঙ্গে। কিন্তু ২০১৪ সালে স্পেনও অনুসরণ করল নিজের মহাদেশের পূর্বসূরিদের। প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে যায় দলটি। ৫-১ গোলের ব্যবধানে। নেদারল্যান্ডস ২০১০ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালের প্রতিশোধ পরের বিশ্বকাপে যেভাবে নিয়েছিল, তা অনেক বছর মনে রাখবে স্প্যানিশ ফুটবল। চিলির সঙ্গে হারের পর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সান্ত্বনার জয়ও এড়াতে পারেনি স্পেনের বিদায়।
ফ্রান্স, ইতালি, স্পেনরা যে পথে এগিয়েছে, সেই পথে হাঁটল জার্মানি। এ নিয়ে টানা তিনবার ইউরোপের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিল। গ্রুপ চ্যাম্পিয়নদের প্রথম পর্ব থেকে বিদায় অবশ্য একেবারেই নতুন কিছু নয়। তা চলে আসছে অনেক আগে থেকে। ১৯৩০ বিশ্বকাপজয়ী উরুগুয়ে খেলেনি পরের বিশ্বকাপে। ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপের জয়ী দল ইতালি নিজেদের ১৯৫০ বিশ্বকাপ শুরু করেছিল সুইডেনের কাছে হেরে। ১৯৫০ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সুইডেনের কাছে ৩-২ গোলে হেরে প্রথম পর্ব থেকেই বিদায়ের পথ চিনে নিতে হয়েছিল ইতালিকে।
এবার জার্মানি সেই পথ অনুসরণ করল। জার্মানি প্রথম পর্বে বাদ! বিশ্বকাপে এ এক অনন্য ঘটনা। জার্মানি কখনোই গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ যায়নি। ১৯৩৮ বিশ্বকাপে প্রথম পর্বে বাদ পড়েছিলেন জার্মানরা। কিন্তু সেবার বিশ্বকাপ শুরুই হয়েছিল এখনকার ফরম্যাট অনুযায়ী শেষ ষোলো দিয়ে। প্রথম থেকেই নকআউট। তা হিসাবে না–ও নিতে পারেন। সেটা তো আর গ্রুপ পর্ব ছিল না। গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ এক অর্থে এবারই প্রথম অভিজ্ঞতা হলো সাতবার ফাইনাল খেলা দলটির জন্য।
অথচ জার্মানি এবারও ছিল বিশ্বকাপের সেরা ফেবারিট। গ্রুপ এফ জার্মানির জন্য হিসাবমতো খুব কঠিন কিছু ছিলও না। কিন্তু জার্মানি শুরু থেকেই পথ হারিয়েছে। যে মেক্সিকোকে কনফেডারেশনস কাপে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে, তাদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছে প্রথম ম্যাচে। ১-০ গোলের হার দিয়ে শুরু হয়েছিল। পরের ম্যাচে জার্মানিকে বাঁচিয়েছে টনি ক্রুসের সেই অবিশ্বাস্য ফ্রিকিক। কিন্তু আজ দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তারা হেরে গেল ২-০ গোলে! এই প্রথম বিশ্বকাপে কোনো এশিয়ান দল জার্মানিকে হারাল। আর তাতেই বেজে গেল বিদায়ঘণ্টা।
জার্মানি প্রথম পর্বে বাদ পড়েছে, এ যেন এখনো অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য ঘটনা। জার্মানি কমপক্ষে শেষ চারে গেছে ১৩ বার। ধারাবাহিকতার দিক দিয়ে তারা ব্রাজিলের চেয়েও কোথাও না কোথাও এগিয়ে। বিশ্বকাপ মানে জার্মানির জন্য অন্তত শেষ চারের নিশ্চয়তা। ১৯৫৪ বিশ্বকাপ থেকে ২০১৪, আগের ষোলোটি আসরে একবারই কমপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা। মাঝে আগের পনেরোটি আসরে কমপক্ষে শেষ আটে উঠেছে জার্মানি। তারাই এবার প্রথম রাউন্ডে বাদ! সেই জার্মানিকে এশিয়ার একটি দল বিদায় করে দিল! চোখ কচলে তাকালেও যে বিশ্বাস হতে চায় না!