সালাহ আশা দিলেন, সালাহ হতাশ করলেন
>ভোলগাগ্রাদে মিসরকে ২-১ গোল হারিয়েছে সৌদি আরব। ২২ মিনিটে মোহাম্মদ সালাহর গোলে এগিয়ে যায় মিসর। সালমানের গোলে সৌদি আরব সমতায় ফেরে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে। ম্যাচটি জিতেছে তারা ৯০ মিনিটের যোগ করা সময়ে। জয়সূচক গোলটা করেছেন সালেম
এই ম্যাচে হারানোর কিছু ছিল না দুই দলের। মিসর-সৌদি আরব—দুই দলেরই রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজেছে আগেই। তবু ভোলগাগ্রাদ থেকে আনন্দদায়ী স্মৃতি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল দুই দলের। শেষ পর্যন্ত সৌদি হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে পারলেও মিসর পারেনি। বারবার ক্লোজআপে দেখানো মোহাম্মদ সালাহর মুখে আঁধার। গোল করে তিনি যেমন আশা দেখিয়েছেন মিসরীয়দের, তিনিই আবার সুযোগ হাতছাড়া করে হতাশায় ডুবিয়েছেন!
প্রথম ২০ মিনিটে মিসর খুব একটা আক্রমণ রচনা করতে পারেনি, যেটা সৌদি আরব করেছে। সৌদির আক্রমণ যদিও সুসংঘবদ্ধ ছিল না। মিসরের সবচেয়ে বড় সুযোগটাই আসে ২২ মিনিটে। প্রায় মাঝমাঠ থেকে দেওয়া আবদাল্লাহ সাইদের ক্রস দ্রুতগতিতে দৌড়ে দুই সৌদি ডিফেন্ডারকে হার মানিয়ে রিসিভ করেই গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে আলতো টোকায় দৃষ্টিগ্রাহী এক গোল। মিসরকে এগিয়ে নেন দলের বড় তারকা সালাহ।
গোলের পর সালাহকে বেশ নির্লিপ্ত দেখাল, উদ্যাপনে কোনো উচ্ছ্বাস নেই; বরং ‘এ আর এমন কী’ ধরনের অভিব্যক্তি চোখেমুখে! সালাহ স্কোরলাইন ২-০ করে ফেলার দারুণ এক সুযোগ পেলেন মিনিট দুয়েক পরেই। ত্রেজেগের ডিফেন্স চেরা পাসটা নিয়ে এগোতে থাকলেন সৌদির গোলপোস্টের দিকে। সামনে শুধু গোলকিপার, এ সুযোগটাই কিনা কাজে লাগাতে পারেননি লিভারপুল তারকা! সালাহ গোলটি যদি করতে পারতেন, ম্যাচটা অন্তত হারতে হতো না মিসরকে।
সালাহ বড় তারকা বলে তাঁর কথাটি আসছে আগে। মিসরের সমর্থকেরা কাঠগড়ায় সবার আগে তুলবেন ত্রেজেগেকে। মিসরীয় মিডফিল্ডার যেন সুযোগ হাতছাড়া করতেই আজ মাঠে নেমেছেন। ৩৩ ও ৩৪ মিনিটে দারুণ দুটি সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। বিশেষ করে ৩৪ মিনিটে সালাহ তাঁকে যে পাসটা দিয়েছেন, গালে তুলে খাওয়ানোর সঙ্গেই যেটির তুলনা চলে!
ত্রেজেগের আফসোস কিছুটা কমার কথা সৌদি আরবের ফাহাদ আল-মুয়াল্লাদকে দেখে। বক্সে আহমেদ ফাতেহির হ্যান্ডবল হওয়ায় পেনাল্টি পায় সৌদি আরব। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে আজ মাঠে নামা মিসরের গোলরক্ষক এসাম এল-হাদারি ঠেকিয়ে দিলেন ফাহাদের পেনাল্টি। তবু শেষরক্ষা হলো না মিসরীয়দের। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে বক্সে আলী গাবর ফাউল করলেন ফাহাদকে। ভিএআরের সহায়তায় পেনাল্টি রিভিউ হলো। এবার সৌদি হাতছাড়া করেনি। সালমান আল ফারাজ পেনাল্টি কাজে লাগিয়ে সমতায় ফেরালেন দলকে।
দ্বিতীয়ার্ধে সৌদি বেশ কবার হানা দিয়েছে মিসরের রক্ষণে। মিসর সে তুলনায় সুযোগ তৈরি করতে পেরেছে কম। সালাহকে প্রায় নিষ্ক্রিয় করে রাখে সৌদির মাঝমাঠ ও রক্ষণ। তবে ত্রেজেগে যথারীতি হাতছাড়ার ধারাটা ধরে রাখেন। ৯০ মিনিটেও ম্যাচের ফল ১-১। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে সমতায় ফেরা সৌদি যেন আজ জার্মানির পথ অনুসরণ করল। ৯০ মিনিটের যোগ করা সময় প্রায় শেষের দিকে, এ সময়ে বক্সে অসাধারণ বিল্ডআপে সালেম আল-দাওসারির ফিনিশিং। গোল দিয়েই সালেম সতীর্থদের মানা করলেন তাঁর কাছে আসতে। কেন? তিনি একটু অন্যভাবে গোল উদ্যাপন করবেন। শূন্যে ডিগবাজি খাওয়া সালেমের উদ্যাপনটা আসলেই দেখার মতো হলো।
শেষ মুহূর্তে গোল খেলে কি আর ম্যাচে ফেরা যায়? মিসরও পারেনি। সালাহরা মাঠ ছাড়লেন তাই বিষণ্ন মুখে।