আজই জার্মানির ফাইনাল ম্যাচ!
মেক্সিকোর কাছে প্রথম ম্যাচেই হেরে বিপাকে জার্মানি। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় সুইডেনের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচই এখন ‘ফাইনাল’!
ষাটের দশকের ব্রাজিলকে ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে রাশিয়া এসেছিল জার্মানি। অথচ এক ম্যাচ যেতেই উঁকি দিচ্ছে তিরিশ দশকের জার্মানির দুঃস্বপ্ন!
আরেকবার বিশ্বকাপ ঘরে নেবে, হয়ে যাবে ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপে পেলের ব্রাজিলের পর টানা দুই বিশ্বকাপজয়ী প্রথম দল, সব মিলিয়ে তৃতীয় (১৯৩৪ ও ১৯৩৮-এ ইতালি)...বিশ্বকাপের আগে জার্মানির এই স্বপ্নগুলো সত্যি না হওয়ার কোনো কারণই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অথচ মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ১-০ গোলের হারের পর শঙ্কা, এই জার্মানি না ১৯৩৮ বিশ্বকাপের জার্মানি হয়ে যায়। জার্মানদের বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়ার সর্বশেষ ও একমাত্র অভিজ্ঞতাটা সেই ৮০ বছর আগে!
সেটি না হতে দিতে চাইলে কী করতে হবে—অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যার যা বলছেন, ছয় ম্যাচ পর ১৫ জুলাইয়ের যে ফাইনালে খেলার পরিকল্পনা ছিল, তাতে ‘ছোট্ট’ একটা বদল এনে ‘ফাইনাল’ খেলা শুরু করতে হবে এখন থেকেই। এখন যেসব ম্যাচই জার্মানির ফাইনাল!
ওই হারের পর নয়্যারই বলেছিলেন, ‘এখন থেকে শুরু করে সব ম্যাচই আমাদের ফাইনাল। আমাদের দেখাতে হবে আমরা কী করতে পারি।’ দলের ডিরেক্টর অলিভিয়ের বিয়েরহফেরও একই সুর, ‘দলের সবাই বুঝতে পারছে যে এটা আমাদের প্রথম “ফাইনাল”। এত তাড়াতাড়ি সেটা আসাটা কিছুটা অস্বস্তির, তবে এটা আমাদেরই ডেকে আনা।’
মেক্সিকোর বিপক্ষে ১৭ জুনের সেই ম্যাচে জার্মানি কেন হেরেছে, তার অনেক বিশ্লেষণই হয়েছে। খেলায় গতি ছিল না, রক্ষণে সংগঠন ছিল না, খেলোয়াড়দের বোঝাপড়া ঠিক ছিল না। সহজ ভাষায়, জার্মানি ‘জার্মানি’ ছিল না। তবে সেসব অতীত, নয়্যারদের চোখ ভবিষ্যতে। জার্মান গোলকিপারই দুই দিন আগে বলেছিলেন, ‘যা হয়েছে তা নিয়ে কাটাকুটি করলে তো আর সেটা বদলে যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব এটা পেছনে ফেলা দরকার।’
হারটাকে এক পাশে সরিয়ে রেখে জার্মানি আজ আহত বাঘের মতো ঝাঁপাবে, এমন স্বপ্ন দেখছেন যে জার্মান–সমর্থকেরা, তাঁদের জন্য আশার বাণী হতে পারে নয়্যারের পরের কথাটা। ‘লম্বা একটা টিম মিটিং হয়েছে। আমরা কেউ কথা চেপে রাখিনি। কারণ, সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচটাতে আমরা সবকিছু ভালো করতে চাই। দলের মধ্যে এর আগে কখনো এত স্পষ্ট কথাবার্তা হয়নি। এই মিটিংগুলো খুব ভালো। বুক হালকা করা একটা অনুভূতি এনে দেয়, কোচের কাছ থেকেও অনেক দিকনির্দেশনা আসে’—বলেছেন গোলপোস্টের নিচে জার্মানির ভরসা।
অমন হারের পর দেশের সংবাদমাধ্যমে, সাবেকদের কথায় জার্মানির অনেক সমালোচনা হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। হয়েছেও। তবে নয়্যারের কথা, সুইডেন ম্যাচেই সব জবাব দেওয়া হবে। সতীর্থদের উদ্দেশেও বললেন, ‘প্রত্যেক খেলোয়াড়ের এখন নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত, “আমি কি সবটুকু দিচ্ছি?”’
দলে বদলের ডাকও আসছে। মেক্সিকো ম্যাচে অনুজ্জ্বল মেসুত ওজিল আর সামি খেদিরাকে বাদ দেওয়ার কথাই বলেছেন বিশেষজ্ঞ-সাবেকরা। তবে আপাতত সবচেয়ে বড় গুঞ্জনটা এই, মেক্সিকো ম্যাচে বদলি নামা উইঙ্গার মার্কো রয়েস এই ম্যাচে শুরুর একাদশেই থাকতে পারেন। সেটি ওজিলের বদলেই প্লে-মেকার হিসেবেই হোক, বা ইউলিয়ান ড্রাক্সলারের বদলে লেফট উইংয়ে। যা-ই হোক, নামলে অবশেষে হবে ‘দুর্ভাগা’ রয়েসের সত্যিকারের বিশ্বকাপ-বোধন।
দুর্ভাগ্য তাঁকে ব্রাজিলে গত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়নের পদকটা গলায় পরতে দেয়নি। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন। দুই বছর পর ইউরোতেও তা-ই। সেবার রয়েসের স্বপ্নহন্তারক কুঁচকির চোট। এবারও চোট থেকেই উঠে বিশ্বকাপে এসেছেন। নয় মাসের লম্বা চোট কাটিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতেই ফিরেছেন। ফর্মে আছেন অবশ্য বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এই উইঙ্গার, লিগে ১১ ম্যাচেই করেছেন ৭ গোল। মেক্সিকো ম্যাচেও জার্মানির যে অল্প কজনের মধ্যে জয়ের তাড়নাটা দেখা গেছে, রয়েস তাঁদের একজন।
তাঁকে দলে আনতে দেশে যে আলোচনা হচ্ছে, রয়েস তা জানেন। তবে সব ছেড়ে দিচ্ছেন কোচের ওপরই, ‘এটা আমার হাতে নয়। অনুশীলনে চেষ্টা করছি, নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছি। অবশ্যই চাই যাতে খেলতে পারি, দলকে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচে দলকে সাহায্য করতে পারি। সেটা কোন পজিশনে খেলে, তা নিয়ে আমি ভাবি না।’
সেটা লোই ভাবুন। কে জানে, এই ভাবনাই হয়তো বদলে দেবে ম্যাচের ফল!