একাদশ নির্বাচনে কি ভুলই করল আর্জেন্টিনা?
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা একদমই ভালো গেল না আর্জেন্টিনার। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসা আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ ড্র করল। ম্যাচে সুপার ফ্লপ লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হলেন। না হলে পুরো ৩ পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়ত আর্জেন্টিনা। এই ম্যাচে মেসিকে নিয়ে অনেক কাটা-ছেঁড়া হবে। তবে পুরো ম্যাচে একের পর এক শট নিয়েও গোলমুখ মুখ থুবড়ে পড়া আর্জেন্টিনার একাদশ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। বিশেষ করে মাঝমাঠে তেমন ধার ছিল না। একই ধাঁচে খেলে গেছে আর্জেন্টিনা। কাজ হচ্ছে না দেখেও অপশন বি, কিংবা অপশন সি-তে পৌঁছাতে পারেনি। হোর্হে সাম্পাওলি ঠিক রণকৌশল নিয়েছিলেন তো!
আজকের ম্যাচে খেলেননি পাওলো দিবালা আর লো সেলসো। ক্রিস্টিয়ান পাভোন শেষ ২০ মিনিটে সুযোগ পেয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে আগে নামালে ধারটা বাড়ত। গোলবারের নিচে কাবায়েরোকে নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকলেও কোচ আস্থা রেখেছেন তাঁর ওপরেই। কাবায়েরোর নড়বড়ে গোলপ্রহরা বেশ কয়েকবার বুক কাঁপিয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনার।
দল গোছাতে হোর্হে সাম্পাওলি সময় পেয়েছিলেন এক মাস। আর তাই আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা আশা করছিলেন, মেসি-দিবালার নতুন রসায়ন অন্য দলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু তা আর হলো কই! সাম্পাওলির সুনজরে না থাকা জুভেন্টাসের নাম্বার টেনের জায়গায় যে হয়নি একাদশে। অথচ এই মৌসুমেও গোল করে এবং করিয়ে জুভেন্টাসের মূল ভরসা হয়ে উঠেছিলেন এই তরুণ।
অন্যদিকে গত কয়েক ম্যাচে আর্জেন্টিনার একাদশগুলো দেখে যে মূল একাদশ ধারণা করা হচ্ছিল, সে ধারণায় জল ঢেলে দিলেন হোর্হে সাম্পাওলি। স্পেনের সঙ্গে ম্যাচে উইলি কাবায়েরোর হাস্যকর সব ভুলের পরও তাঁর ওপরেই আস্থা রাখছেন কোচ। বিশ্বকাপে কাবায়েরোই কি আর্জেন্টিনার গোলপোস্টের মূল ভরসা হতে যাচ্ছেন? এখন তো তা-ই মনে হচ্ছে। ৩৭ বছর ছুঁই ছুঁই এই গোলরক্ষকের ওপর খুব একটা ভরসা নেই আর্জেন্টিনা সমর্থকদের। ধারণা করা হয়েছিল, রিভার প্লেটের ফ্রাঙ্কো আরমানিকে কোচ সাম্পাওলি হয়তো একটি সুযোগ দিতেও পারেন। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমও আরমানির কথাই বলছিল জোরেশোরে।
আর্জেন্টিনার লিগে খেলা আরমানির জায়গা না হলেও একাদশে জায়গা হয়েছে মেজার। এখানেও চমক। বিশ্বকাপের আগে পাভোনকে নিয়ে কত হইচই। খোদ মেসি প্রশংসা করেছেন পাভোনের। সাম্পাওলি বলেছেন, অবশেষে মেসির খেলা বুঝতে পারে, এমন একজনকে পেল আর্জেন্টিনা। কিন্তু তাঁরও জায়গা হলো না। পাভোন আর পিএসজির উঠতি তারকা লো সেলসোর জায়গা হলো বেঞ্চে। হাভিয়ের মাচেরানো জান লড়িয়ে দিয়ে খেলেছেন। যদিও লানজিনির চোটে হুট করে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে, সেখান থেকে সরাসরি প্রথম একাদশে চলে আসা লুকাস বিগলিয়া একটুও জ্বলে উঠতে পারেননিঅ। মেজা অবশ্য মাঝমাঠ মোটামুটি ভালোই সামলেছেন।
৪-২-৩-১ ফরম্যাটে দল সাজানো সাম্পাওলির ছক। আসলে সাম্পাওলির ফুটবলে মানিয়ে নিতে সব দলেরই একটু সময় লাগে। কিন্তু প্রস্তুতি-প্রীতিসহ আর্জেন্টিনাকে মাত্র ১১ ম্যাচে খেলিয়েছেন সাম্পাওলি। এমনকি বিশ্বকাপের আগেও আর্জেন্টিনা প্রস্তুতি ম্যাচ বলতে পেয়েছে হাইতির মতো র্যাঙ্কিংয়ে ১০৪-এ থাকা দলকে। মেসি আর দিবালা একসঙ্গে ৯০ মিনিটও খেলেছেন কি না সন্দেহ। দুজনের বোঝাপড়া তৈরির সুযোগই হয়নি। মেসিকে তাঁর পছন্দের ডান উইংয়েই জায়গা করে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। দিবালার তাই জায়গা হলো না। তিনিও ঠিক একই জায়গায় খেলেন।
আর্জেন্টিনার পরের দুটি ম্যাচ নাইজেরিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। আইসল্যান্ড বাধাই যদি টপকাতে না পারে, বাকি দুই প্রতিপক্ষ তো আরও কঠিন। ক্রোয়েশিয়া এ প্রজন্মের সেরা মিডফিল্ডারে সাজানো এক দল। আক্রমণভাগেও আছে মারিও মানজুকিচের মতো তারকা। ক্রোয়েশিয়া-পরীক্ষায় ফেল মেরে যেতেও পারে আর্জেন্টিনা। আর নাইজেরিয়া? মাত্র কদিন আগে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ৪-১ গোলে হেরেছে আর্জেন্টিনা।
প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকাতে পারবে তো মেসির দল?