১২৯ বছরের লজ্জা থেকে প্রোটিয়াদের মুক্তি দিল আফগানরা
>টেস্ট আঙিনা কতটা পিচ্ছিল, বেঙ্গালুরুতে প্রতি সেশনে সেটি বুঝছে আফগানিস্তান। দুই ইনিংস মিলিয়ে ২১২ রানে অলআউট হয়ে মনে করিয়ে দিল ১২৯ বছরের পুরোনো রেকর্ড। নিজেদের টেস্ট অভিষেকে ম্যাচে এটাই সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগে যে লজ্জায় পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা
বেঙ্গালুরুতে নিজেদের অভিষেক টেস্টে আফগানিস্তান আজ প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে ১০৯ রানে। ফলোঅনে পড়া আফগানরা টেস্ট হেরে গেছে দুই দিনেই। টেস্টে অভিষেকে ব্যাটিংটা এতটাই খারাপ হয়েছে, আফগানিস্তান মনে করিয়ে দিয়েছে ১২৯ বছরের পুরোনো রেকর্ড।
যে রেকর্ডটার কথা আফগানিস্তান মনে করিয়ে দিয়েছে, সেটি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বড় অস্বস্তির। ১৮৮৯ সালে পোর্ট এলিজাবেথে নিজেদের টেস্ট অভিষেকে দুঃস্বপ্নের সূচনা হয়েছিল প্রোটিয়াদের। স্কোর কার্ডে কোনো রান জমা না হতেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা! ১৭ রানে ৫ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকার ৫০ হওয়া নিয়েই অনিশ্চয়তা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা ইনিংসটা থামল ৮৪ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসও ভালো হলো না, করতে পারল ১২৯। টেস্টটা ছিল তিন দিনের। পুরো দুই দিনও খেলতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই ইনিংস মিলিয়ে তুলেছে ২১৩ রান।
এই লজ্জার রেকর্ডটা যে ১২৯ বছর ধরে অক্ষত থাকবে, তা কি আর প্রোটিয়ারা ভেবেছিল! টেস্ট অভিষেকে ৮৪ রানে অলআউটের রেকর্ডটা আজ আবার মনে করিয়ে দিল আফগানরা। আজ ৫৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর আফগানরা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল এই রেকর্ডটার কথা। শেষ পর্যন্ত তা এড়াতে পারলেও দুই ইনিংস মিলিয়ে সবচেয়ে কম রানের রেকর্ডের লজ্জায় তাদের পড়তে হয়েছে মাত্র ২ রান কম তোলায়। আজ এই রেকর্ডটা সঙ্গী হলো আফগানিস্তানের (১০৯ ও ১০৩)।
আফগানিস্তানের সান্ত্বনা, অনভিজ্ঞতা হোক কিংবা স্নায়ুচাপ—টেস্ট অভিষেকটা বেশির ভাগ দলেরই ভালো হয়নি। আজ বেঙ্গালুরুতে যাদের বিপক্ষে আফগানরা কাঁপছে, সেই ভারত ১৯৩২ সালে লর্ডসে নিজেদের টেস্ট অভিষেকে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছিল ১৮৯ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিল ১৮৭। হেরেছিল ১৫৮ রানে। ১৯৫২ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের মাঠে পাকিস্তানের টেস্ট অভিষেক। দিল্লিতে পাকিস্তানের শুরুটা ছিল বড় বাজে। ১৫০ রানে অলআউট, হানিফ মোহাম্মদের ৫১ রান যা একটু লড়াইয়ের সাক্ষ্য দেয়। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান অলআউট ১৫২ রানে। শ্রীলঙ্কারও অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসটা বলার মতো নয়। ১৯৮২ সালে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কানরা প্রথম ইনিংসে অলআউট ২১৮ রানে।
আফগানিস্তানকে একটা ধন্যবাদ দিতে পারে নিউজিল্যান্ড। নিজেদের টেস্ট অভিষেকের প্রথম ইনিংসে এত দিন দক্ষিণ আফ্রিকার পরই ছিল নিউজিল্যান্ড। ১৯৩০ সালে ক্রাইস্টচার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে অলআউট ১১২ রানে। ম্যাচটা নিউজিল্যান্ড হারে ৮ উইকেটে। কদিন আগে ডাবলিনে টেস্ট অভিষেক হওয়া আয়ারল্যান্ডের শুরুটাও বাজে। আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংসে অলআউট ১৩০ রানে। ফলোঅনে পড়ে অবশ্য ঘুরে দাঁড়ায় আইরিশরা। কেভিন ও’ব্রায়েনের সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ইনিংসে আয়ারল্যান্ড অলআউট ৩৩৯ রানে। পাকিস্তানকে ১৬০ রানের লক্ষ্য দিয়ে খেলা ভালোই জমিয়ে তোলে আয়ারল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত হারে ৫ উইকেটে। টেস্ট অভিষেকে অনভিজ্ঞতা আর স্নায়ুচাপে ভেঙে পড়ার আরেকটি উদাহরণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯২৮ সালের জুনে লর্ডসে নিজেদের প্রথম ইনিংসে তারা অলআউট ১৭৭ রানে।
ইতিহাসের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়া জিতলেও তারাও কিন্তু প্রথম ইনিংসে আড়াই শ করতে পারেনি। আহত অবসরে যাওয়ার আগে চার্লস ব্যানারম্যান একাই করলেন ১৬৫ রান। তবু অস্ট্রেলিয়া অলআউট ২৪৫ রানে। দলীয় স্কোরের প্রায় ৬৮ শতাংশ রানই ব্যানারম্যানের। অস্ট্রেলিয়া তবু ২০০ পেরিয়েছিল, ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস তো দুই শও পেরোল না। অলআউট ১৯৬ রানে। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ফলও দেখল। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া জিতল ৪৫ রানে।
নিজেদের টেস্ট অভিষেকের প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে দুর্দান্ত খেলা দলটির নাম জিম্বাবুয়ে। ১৯৯২ সালের অক্টোবরে হারারেতে ডেভ হটনের সেঞ্চুরি আর অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের ফিফটিতে প্রথম ইনিংস জিম্বাবুয়ে ভারতের বিপক্ষে অলআউট হওয়ার আগে করে ৪৫৬। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ড্র করেছিল জিম্বাবুয়ে। এই তালিকায় জিম্বাবুয়ের পরেই আছে বাংলাদেশ। ২০০০ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে অসাধারণ ব্যাটিং করে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। আমিনুল ইসলামের ১৪৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে করল ৪০০ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ রানে অলআউট না হলে নিজেদের অভিষেক টেস্টের গল্পটা আরও রঙিন হতে পারত বাংলাদেশের।
অভিষেক টেস্টে সর্বনিম্ন স্কোর
| প্রতিপক্ষ | ১ম ইনিংস | ২য় ইনিংস | মোট রান | সাল |
আফগানিস্তান | ভারত | ১০৯ | ১০৩ | ২১২ | ২০১৮ |
দ. আফ্রিকা | ইংল্যান্ড | ৮৪ | ১২৯ | ২১৩ | ১৮৮৯ |
নিউজিল্যান্ড | ইংল্যান্ড | ১১২ | ১৩১ | ২৪৩ | ১৯৩০ |