বিশ্বকাপের প্রথম গোল ক্যারিয়ারেরই প্রথম গোল
>বিশ্বকাপকে আলোকিত করলেন আরেক ইউরি গাজিনস্কি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেই তাঁর প্রথম গোল, আর সেটিও বিশ্বকাপে। কে এই গাজিনস্কি? তাঁর ক্যারিয়ারের গল্পটাও দারুণ!
ইউরি! নামটা রাশানরা ভুলবে না কখনোই। ইউরি নামটা আসলে মিশে আছে পৃথিবীর ইতিহাসে। অমর-অক্ষয় হয়ে আছে। ছোটবেলায় সবাইকেই হয়তো পড়তে হয়েছে সেই মানুষটার জীবনী। ইউরি গ্যাগারিন, প্রথম মানুষ যিনি মহাশূন্যে গিয়েছিলেন। আজ বিশ্বকাপকে আলোকিত করলেন আরেক ইউরি। এবার রাশিয়া কত দূর আর যাবে এমন আলোচনাকে স্তিমিত করে দিয়ে উদ্বোধনী ম্যাচের ১২ মিনিটে গোল করলেন ইউরি গাজিনস্কি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেই তাঁর প্রথম গোল, আর সেটিও বিশ্বকাপে! উদ্বোধনী ম্যাচে রাশিয়া সৌদি আরবকে হারিয়েছে ৫-০ ব্যবধানে! কী উড়ন্ত শুরু রাশিয়ার, কী দুর্দান্ত শুরু গাজিনস্কির!
খুব বড় তারকা তিনি নন। সত্যি বলতে, বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের কজনই বা তাঁকে চিনত! এই বিশ্বকাপের পরও গাজিনস্কিকে ভুলে গেলেও ক্ষতি নেই। ফুটবল ইতিহাসের ছোট্ট একটি তালিকায় তো নাম তাঁর থাকবেই। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রত্যেক আসরের প্রথম গোলদাতার তালিকা খুব বেশি লম্বাও হবে না আগামী ৫০ বছর পরও। সেই তালিকায় ২১ নম্বরে সব সময়ই থাকবে ২৮ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের নাম।
এই আসরের সবচেয়ে দুই নিচু র্যাঙ্কিংয়ের দল। উদ্বোধনী ম্যাচটাই না ম্যাড়ম্যাড়ে হয়! এমনিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা হয়েছে দিনের বেলায় আতশবাজি পোড়ানোর মতোই। কিছুটা গর্জাল, তবে বর্ণচ্ছটায় আলোকিত করল না। দ্রুতই ফুটবলারদের মঞ্চ ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে নাচিয়ে-গাইয়েরা। আর সেই মঞ্চ আলোকিত করতে সময় একেবারেই নেননি। সতীর্থ আলেকজান্দর গোলোভিনের হেড থেকে বল পাঠিয়েছেন জালে। ভিআইপি বক্সে ভ্লাদিমির পুতিনকে সহাস্য করমর্দনের সুযোগ করে দিয়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে। মাঝখানে ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনোকে রেখে দুই যুযুধান দলের রাষ্ট্রপ্রধান বসেছেন খেলা দেখতে। আজকের দিনের জন্য অবশ্য রাশিয়ার চোখের মণি পুতিনও নন; গাজিনস্কি!
আজকের গোলের মতোই ক্যারিয়ারেও অনেকটা শেষ দৃশ্যে পর্দা ফুঁড়ে হাজির হওয়ার মতো নাটকীয়তা মিশে আছে। ক্যারিয়ারের বড় সময় কাটিয়েছেন নিচু সারির দলগুলোয়। এজেন্ট বা স্কাউটদের সুনজরেই যেন পড়ছিলেন না। ক্যারিয়ারের শুরুর ছয় বছর মূল দেশ থেকে অনেক দূরে পূর্বের ফুটবল লিগে খেলে কাটিয়েছেন। শুরুটা করেছিলেন ফরোয়ার্ড হিসেবে। পরে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে এসেছেন। জায়গা বদলের পর ভাগ্যও বদলে যেতে শুরু করে গাজিনস্কির। এখন খেলেন এফসি ক্রাসনদরের হয়ে।
ক্লাবটা বেশি পুরোনো নয়। মাত্র ৯ বছর হলো। এখনো লিগ জেতেনি। তবে গত রাশিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও বেশ লড়াই করেছে। মাত্র ৬ পয়েন্টের জন্য জেতেনি শিরোপা।
এমন দলের খেলোয়াড়ের পক্ষে নিয়মিত জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়াও কঠিন। ২০১৪ সালে ফ্যাবিও ক্যাপেলো থাকার সময়ই অভিষেক হয়ে গেলেও নিয়মিত মুখ ছিলেনও না। নতুন কোচ স্তানিসলাভ চেরচেশভ আসার পর একাদশে জায়গা পোক্ত করেন। আজ তো রাশিয়ার ফুটবল ইতিহাসেই জায়গা পোক্ত হয়ে গেল তাঁর। রাশিয়ায় প্রথম বিশ্বকাপ। আর তাতে প্রথম গোলদাতা কে? কুইজেরই প্রশ্ন হয়ে যেতে পারে এটা।
ইউরি গ্যাগারিন আর ইউরি গাজিনস্কি নাম দুটো তাই ভুলবেন না যেন!