মেসি বনাম রোনালদো ফাইনাল দেখছেন মরিনহো!
>ক্লাবের ব্যস্ততা তো এখন আর নেই। মরিনহো বিশ্বকাপের সময়টায় কাজ করবেন রাশিয়ান টিভি আরটিতে। সেখানেই তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হলো ভবিষ্যদ্বাণীর। পুরোটা সময় স্বভাবসুলভ ঠোঁটচাপা হাসিতে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। কৌতুকপূর্ণ সব কথায় মনে হচ্ছিল, কাজটা করে মজাও পাচ্ছেন বেশ!
হোসে মরিনহো তাহলে কথা রেখেছেন! প্রমাণ করেছেন তিনি পর্তুগিজ! পাশাপাশি ছাড় দেননি আর্জেন্টিনার ওই ‘লিটল ফেলা’র প্রতি ভালোবাসাতেও। ব্যস, দুটি মিলিয়েই দাঁড়িয়ে গেল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর্তুগিজ কোচের বিশ্বকাপ ভবিষ্যদ্বাণী। ফাইনালে মরিনহো মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল আর লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে।
ক্লাবের ব্যস্ততা তো এখন আর নেই। মরিনহো বিশ্বকাপের সময়টায় কাজ করবেন রাশিয়ান টিভি আরটিতে। সেখানেই তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হলো ভবিষ্যদ্বাণীর। পুরোটা সময় স্বভাবসুলভ ঠোঁটচাপা হাসিতে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। কৌতুকপূর্ণ সব কথায় মনে হচ্ছিল, কাজটা করে মজাও পাচ্ছেন বেশ! তবে যা করেছেন, তাতে তাঁর বিরুদ্ধে ‘স্বজনপ্রীতি’র অভিযোগ উঠলেও অবাক হওয়ার থাকবে না!
তা তিনি পর্তুগিজ কিনা, সেটি প্রমাণের কথা উঠছে কেন? গ্রুপ পর্বে কী হবে, সেটি অনুমান করতে গিয়েই কথাটা বলেছিলেন মরিনহো। পর্তুগালের গ্রুপ ‘বি’-তে তাঁর চোখে সেরা স্পেন, নিজ দেশকে রেখেছিলেন দুইয়ে। তখন বলেছিলেন, ‘আমি পরে দেখাব আমি কতটা পর্তুগিজ!’ আর আর্জেন্টিনা তাঁর দল নয় বলে হয়তো ‘স্বজনপ্রীতি’র অভিযোগ আনা যাচ্ছে না, কিন্তু সেখানেও তো মরিনহোর ব্যক্তিগত পছন্দের ছাপ। ভবিষ্যদ্বাণীর প্রায় পুরো সময়টায় লিওনেল মেসিকে আদর করে ‘দ্যাট লিটল ফেলা’ বলে ডেকে গেছেন। তাঁর দলকেও ভবিষ্যদ্বাণীতে টেনে নিয়ে এলেন ফাইনালে। অথচ বাকি বিশ্ব যেখানে রক্ষণ আর মিডফিল্ডের ‘শক্তি’ বিবেচনায় আর্জেন্টিনাকে সবচেয়ে বড় ফেবারিটদের কাতারে রাখছে না! বাকি বিশ্ব কী, স্বয়ং লিওনেল মেসিই তো রাখছেন না!
শুরুতেই জানিয়ে রেখেছিলেন, ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের যে খেলোয়াড়েরা বিশ্বকাপে আছেন, তাঁরা অনেক দূর যাক সেটা যেমন চান, তেমনি চান তাঁরা দ্রুত বাদ পড়ে ছুটিতেও যাক! সার্বিয়াকে গ্রুপ থেকে বাদ দিলেন যে কারণে। গ্রুপে ব্রাজিলের পাশাপাশি দ্বিতীয় হিসেবে সুইজারল্যান্ডকে বেছে নেওয়ার সময় মজা করে বলছিলেন, ‘দুঃখিত নেমানিয়া (মাতিচ, ইউনাইটেডের সার্বিয়ান মিডফিল্ডার), কিন্তু তোমার ছুটিতে যাওয়া দরকার!’ দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই শুরু হলো তাঁর দেশপ্রেম প্রদর্শন। উরুগুয়ের বিপক্ষে পর্তুগালকে এগিয়ে রাখার চাওয়ার কারণ? ‘আমার হৃদয়’-মরিনহোর উত্তর। কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর হিসেবে পর্তুগালের ম্যাচ হবে ফ্রান্সের বিপক্ষে, সেটির ভবিষ্যদ্বাণীতেও পর্তুগালকে বিজয়ী ঘোষণা কথা মনে করিয়ে দিলেন ২০১৬ ইউরোর ফাইনালের কথা, ‘বাহ! আরেকবার তোমাদের (ফ্রান্সও) হারাতে হবে। আরেকবার তোমাদের আমরা হারাব!’
তা পর্তুগাল তো উঠল, ওদিকে স্পেন-আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনালে কী হবে? স্পেন মরিনহোর হিসেবে ‘বিশ্বকাপের সেরা দল’, আর আর্জেন্টিনা ‘একটা ভালো দল, যে দলে ওই পিচ্চি আছে!’ তাতে আর্জেন্টিনাকেই রাখলেন এগিয়ে। ব্যক্তিগত পছন্দ? হয়তো! সেমিফাইনালের ভবিষ্যদ্বাণীতে অবশ্য মরিনহো নিজেই তা নিশ্চিত করে দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগটা স্বীকারই করে নিলেন, ‘অনেকে বলে আমি নাকি স্বজনপ্রীতি করছি। আমার মনে হয়...কিছুটা তো করছিই!’ বলতে বলতেই ব্রাজিলের বিপক্ষে পর্তুগালকে ‘জিতিয়ে’ দিলেন! পর্তুগাল ফাইনালে! ওদিক থেকে জার্মানির বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে জিতিয়ে দিতে দিতে বলছিলেন, ‘আমি জানি আমি কী চাই!’ কী আর, মেসি-রোনালদো ফাইনাল!
তা তৃতীয় স্থান নির্ধারণীতে ব্রাজিল গত বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ওই ‘মারাকানাজো’ দুঃস্বপ্নের বদলা নেবে বলেই জানালেন। কিন্তু ফাইনালের ভবিষ্যদ্বাণী? ও পথে আর পা মাড়াননি মরিনহো! ‘আমি এটা পারব না!’ জানিয়ে পরে বললেন, ‘অতিরিক্ত সময়, পেনাল্টি, ১১ খেলোয়াড়, সবাই পেনাল্টি নেওয়ার পর একটা করে পেনাল্টি বাকি থাকবে। শেষ পেনাল্টিটা একটা মেসি নেবে, অন্যটা রোনালদো...।’ তারপর কী হবে? মরিনহোর উত্তর, ‘তারপর বাকিটা আমি আপনাদের কল্পনাশক্তির ওপরই ছেড়ে দিচ্ছি।’
কোচ না হয়ে সাহিত্যিক হলে নিশ্চিত ছোটগল্প লিখে নাম করতেন মরিনহো!