দুয়ারে কড়া নাড়তে শুরু করেছে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ নিয়ে বিশ্বসেরা ৩০ জন ফুটবলার ও কোচের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার ছাপা হচ্ছে শুধুই প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে। আজ প্রকাশিত হলো ইভার রাকিতিচের সাক্ষাৎকার
আধুনিক মিডফিল্ডার বলতে যা বোঝায় ইভান রাকিতিচ তা-ই। বল কাড়তে পারেন, গোলে সহায়তা করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গোলও করেন ক্রোয়েশিয়ার এই মিডফিল্ডার। তাঁর উপস্থিতি দলকে এনে দেয় নির্ভরতা। রাশিয়ায় যাবেন নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে। গ্রুপ পর্বে নিজের ক্লাব-সতীর্থ লিওনেল মেসির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন রাকিতিচ-
প্রশ্ন: লিওনেল মেসির সঙ্গে চার বছর ধরে একই দলে খেলছেন। এবার বিশ্বকাপে তাঁর বিপক্ষে খেলতে হবে। কেমন লাগছে?
ইভান রাকিতিচ: লিওনেল মেসির বিপক্ষে আমি অনুশীলনেও খেলতে চাই না! চার বছর ধরে তার সঙ্গে খেলেছি আর প্রতিদিনই তার অতিমানবীয় সব কীর্তিতে মুগ্ধ হয়েছি। অনেক দিন এমন হয়েছে, তার অবিশ্বাস্য কাণ্ডে ম্যাচের মধ্যেই আমি হেসে ফেলেছি। বার্সেলোনায় আমরা সবাই জানি সে কী এবং দলের জন্য সে কী করতে পারে। তবে নিঝনিতে আমাদের সাক্ষাৎটা আলাদাই হবে। ওই ৯০ মিনিটে লিওকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে না দিতে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: আপনিই কি তাঁকে মার্ক করবেন?
রাকিতিচ: তাকে মার্ক করার মতো কেউ আছে বলে মনে হয় না। যারা চেষ্টা করেছে, তারা যাচ্ছেতাইভাবে ফেল করেছে। সমস্যা হলো, আপনি তাকে ইচ্ছেমতো খেলতে দিতেও পারেন না! তাকে সম্ভবত জোনাল মার্কিংয়ে রাখা হবে। আর তার ধ্বংসযজ্ঞ থামাতে আমাদের কোচও নিশ্চয়ই কোনো পরিকল্পনা করবেন। এটা দারুণ রোমাঞ্চকর ম্যাচই হবে। কারণ হাভিয়েরের (মাচেরানো) সঙ্গেও আমার দেখা হবে। দল-অন্তঃপ্রাণ অসাধারণ এক খেলোয়াড় সে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কী বলবেন?
রাকিতিচ: নকআউট পর্বে পৌঁছানোর সম্ভাবনা বলতে চাইছেন তো? অবশ্যই আমাদের সম্ভাবনা আছে। ২০১৪ বিশ্বকাপটা আমাদের একদম ভালো কাটেনি। ক্যামেরুনের বিপক্ষে জিতলেও ব্রাজিল ও মেক্সিকোর কাছে দুই ম্যাচ হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েছিলাম আমরা। আগেরবারের মতো এবারও আমাদের গ্রুপে দক্ষিণ আমেরিকার (আর্জেন্টিনা) একটি দল আছে, আফ্রিকা (নাইজেরিয়া) থেকেও আছে একটি। পার্থক্য, তৃতীয় দলটা ইউরোপের (আইসল্যান্ড)। লোকে ঠিকই বলে, সবচেয়ে কঠিন গ্রুপ। বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট হয়েও যেমন আর্জেন্টিনাকে পরের পর্বে যেতে সেরা ফুটবলই খেলতে হবে। এখন পর্যন্ত দলের যা অবস্থা, তাতে আমরা আশাবাদী। আমাদের শুধু প্রয়োজন একটুখানি ভাগ্যের এবং মাঠে নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার।
প্রশ্ন: যদি ক্রোয়েশিয়া নকআউট পর্বে ওঠে, তবে আপনাদের দল কত দূর যেতে পারে বলে মনে করেন?
রাকিতিচ: যদি! এটা অনেক বড় একটা যদি! আমাদের গ্রুপটাই এমন যে অনেক প্রশ্ন, অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা কোয়ালিফাই করলে কীভাবে করব? গ্রুপসেরা হয়ে নাকি রানার্সআপ হয়ে? নকআউটে আমাদের প্রতিপক্ষ কারা হবে? তো সবচেয়ে ভালো, এখনই এসব নিয়ে চিন্তা না করা। আমাদের হাতে তিনটি ম্যাচ আছে। আপাতত এই চেনা প্রতিপক্ষের দিকেই মনোযোগ দিতে হবে। মূল কথা হলো আমরা কঠিন একটি গ্রুপে পড়েছি এবং পরের পর্বে যেতে আমাদের খুবই ভালো খেলতে হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু বাছাইপর্বে আপনারা তো আইসল্যান্ডকে হারিয়েছেন...
রাকিতিচ: হারিয়েছি, কিন্তু তারাও তো আমাদের একবার হারিয়েছে। এখন তাই ১-১-এ সমতা। তাদের আমরা হারিয়েছিলাম ঘরের মাঠে। এবার খেলা হবে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। তাই যেকোনো কিছু হতে পারে। বিশ্বকাপে তারা নবাগত হতে পারে। কিন্তু ২০১৬ ইউরোতে তাদের পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। আর বিশ্বকাপে আপনি কোনো প্রতিপক্ষকেই হালকাভাবে নিতে পারেন না।
প্রশ্ন: আপনার দলকে একপাশে রাখলে, অন্য কোন দল বিশ্বকাপ জিততে পারে?
রাকিতিচ: প্রথম কথা হলো, ফুটবলের দুই পরাশক্তি ইতালি ও হল্যান্ডকে রাশিয়ায় আমি মিস করব। আজ্জুরি ও কমলা-ভক্তদের ছাড়া বিশ্বকাপ কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। হল্যান্ড গতবারের সেমিফাইনালিস্ট। ব্রাজিলকে হারিয়ে সেবার তারা তৃতীয় হয়েছিল। হল্যান্ড ফাইনাল খেলেছে তিনবার। আর ইতালি তো চারবারের চ্যাম্পিয়ন। এই রকম ফুটবল ঐতিহ্যসম্পন্ন দলই যখন বিশ্বকাপে জায়গা পায় না, তখন আপনি ফেবারিট বেছে নেবেন কী করে?
প্রশ্ন: আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলবেন। আপনার সাবেক ক্লাব সতীর্থকে নিয়ে কী বলবেন?
রাকিতিচ: আন্দ্রেসের সঙ্গে এই চার বছর খেলাটা একই সঙ্গে আনন্দের ও সম্মানের ছিল। সে অনন্যসাধারণ এক খেলোয়াড়। আমার তো সব সময় মনে হয় সে বলের সঙ্গে নৃত্য করে। উফ, কী দুর্দান্ত! আর তার ড্রিবল নিয়ে কী বলব! তার কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়া খুবই কঠিন। তার পাসিং-সৃজনশীলতা অতুলনীয়। তার সঙ্গে বার্সেলোনায় খেলেছি বলেই এসব বলছি না। সে একজন চ্যাম্পিয়ন। আর শেষ বিশ্বকাপটা স্মরণীয় করে রাখতে সে সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করবে। আর এটাই অন্য দলগুলোর ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
একনজরে |
পুরো নাম: ইভান রাকিতিচ, |
দল: ক্রোয়েশিয়া |
জন্ম: ১০ মার্চ ১৯৮৮ |
জন্মস্থান: মোলিন, সুইজারল্যান্ড |
পজিশন: মিডফিল্ডার |
বর্তমান ক্লাব: বার্সেলোনা |
পেশাদার ফুটবলে অভিষেক: ২০০৫ |
জাতীয় দলে অভিষেক: ২০০৭ |
ম্যাচ: ৯১, গোল: ১৪ |
ক্লাব ক্যারিয়ার |
ম্যাচ: ৫৪৫ গোল: ৯১ |
ক্লাবে অর্জন |
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ (১) |
লা লিগা (৩) |
কোপা ডেল রে (৪) |
ক্লাব বিশ্বকাপ (১) |
ইউরোপা লিগ (১) |