বিশ্বকাপে সহজ বলে কিছু নেই

এবারও নেইমার ভরসা করে থাকবে ব্রাজিল। ছবি: এএফপি
এবারও নেইমার ভরসা করে থাকবে ব্রাজিল। ছবি: এএফপি
>চার বছর আগে সেমিফাইনালে তাঁর অনুপস্থিতি ব্রাজিলকে কেমন অসহায় করে ফেলেছিল, জার্মানির বিপক্ষে ৭-১-এ হারের লজ্জা তার প্রমাণ। চার বছর পেরিয়ে আরেকটি বিশ্বকাপের ফেবারিটের তালিকায়ও যথারীতি ব্রাজিল। আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দু সেই নেইমার। বাংলাদেশে বিশেষ সাক্ষাৎকার ছাপা হচ্ছে কেবল প্রথম আলোর প্রিন্ট সংস্করণে

প্রশ্ন: আরেকটি বিশ্বকাপ চলেই এল। এবার কি পারবে ব্রাজিল?
নেইমার: আমি তো সব সময়ই বিশ্বাস করি, আমরা পারি। দুর্দান্ত একটা দল আমাদের। তা ছাড়া আমরা পরিশ্রমও করেছি অনেক। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের সেই সামর্থ্যটা আছে।
প্রশ্ন: এভাবে বলতে পারছেন কীভাবে?
নেইমার: দেখুন, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আমরাই প্রথম মূল পর্ব নিশ্চিত করেছি। অন্তত ১৮ মাস ধরে বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন কন্ডিশনে আমাদের ম্যাচগুলো খেলতে হয়েছে। ফুটবলারদের জন্য এটা একটা বিরাট পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় আমরা দারুণভাবে পাস করেছি। কয়েক ম্যাচ হাতে রেখেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে ফেলেছি। সবার জন্য এই ব্যাপারটা বিশেষ কিছু। আমি চাইব, রাশিয়াতে এমন কিছুই যেন আমরা করতে পারি।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ব্রাজিলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন আপনি। কিন্তু পিএসজির জন্য খেলতে গিয়ে চোট পেলেন, পায়ে অস্ত্রোপচার হলো। ব্রাজিলে তো হাহাকারই শুরু হয়ে গিয়েছিল...
নেইমার: আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। তবে হ্যাঁ, দুশ্চিন্তার বিষয় তো ছিলই। বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। যা হোক, সেই দুঃসময় কাটিয়ে মাঠে ফিরেছি। বিশ্বকাপে নামার জন্য আর তর সইছে না।
প্রশ্ন: ২০১৪ বিশ্বকাপের চোটের কারণে সেমিফাইনাল খেলতে পারলেন না। আর ব্রাজিলও বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় হারের লজ্জায় পড়ল...
নেইমার: দেখুন, সেখান থেকে অনেক দূর পথ পেরিয়ে এসেছি আমরা। সেটি হজম করা তো কঠিন ছিলই। বিশেষ করে আমার জন্য আরও বেশি, চোটের কারণে আমি ম্যাচটা খেলতে পারলাম না। আর এমন চোট যে, আমার ক্যারিয়ারের শেষও হয়ে যেতে পারত ওখানে। আঘাতটা দুই সেন্টিমিটার ডান দিকে লাগলেই হয়েছিল! বাকি জীবনটা হুইলচেয়ারে কাটাতে হতো আমাকে। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, চোট সারিয়ে দ্রুতই ফিরে এসেছিলাম আমি। আর ফিরে এসে সেটাই শুরু করতে পেরেছিলাম, যেটা করতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি আমি। এই দেখুন, আরেকটি বিশ্বকাপ চলে এসেছে আর আমরাও চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত।
প্রশ্ন: ‘ই’ গ্রুপে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা আর সার্বিয়া। তিন গ্রুপ প্রতিপক্ষকে নিয়ে কী ভাবছেন?
নেইমার: আচ্ছা, এটা তো বিশ্বকাপ। আর সেখানে সেই ৩২ দলই খেলবে, যারা এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো ফুটবল খেলছে। সোজা কথায়, বিশ্বকাপে সহজ বলে কিছু নেই।

ব্রাজিলের এই দলটাকে বলা হচ্ছে এবারের সেরা দল। ছবি: এএফপি
ব্রাজিলের এই দলটাকে বলা হচ্ছে এবারের সেরা দল। ছবি: এএফপি

সুইজারল্যান্ডের একটা সমৃদ্ধ ফুটবল ইতিহাস রয়েছে। সার্বিয়া যেদিন থেকে আলাদা দেশ হিসেবে নাম লিখিয়েছে, সেদিন থেকে তাদের ফুটবলও নিজস্ব একটি ছাপ রেখে চলেছে। আর কোস্টারিকা? শুধু ভাবুন যে রাশিয়া বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের জায়গা হয়নি, হয়েছে কোস্টারিকার। তাদের ফর্মটা একবার ভেবে দেখুন। কঠিন গ্রুপ, সবচেয়ে কঠিন গ্রুপগুলোর একটি। নকআউট পর্বে পৌঁছাতে আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ভালো খেলতে হবে।
প্রশ্ন: স্পেনে যখন খেলেছেন, তখন তো লিওনেল মেসির সঙ্গে আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিপক্ষে নিয়মিতই খেলেছেন। তাঁদের বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ কেমন দেখছেন?
নেইমার: দুজনই অনন্যসাধারণ খেলোয়াড়। নিজেদের প্রজন্মের সেরা। মেসির সঙ্গে আমি খেলতে পেরেছি, সেটা আমার জন্য বিশাল একটি সম্মান। একজন ফুটবলার হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে তাঁকে আমি ভীষণ পছন্দ করি। মেসির সঙ্গে খেলব, সেই স্বপ্ন অনেক দিন আগে থেকেই দেখে এসেছি আমি। আমার কাছে তিনি সব সময়ই সেরা। তাই বলে আপনি ক্রিস্টিয়ানোকে কখনোই বাদ দিতে পারবেন না। তাঁর রেকর্ডও একই রকম অসাধারণ। যা হোক, আর্জেন্টিনা ও পর্তুগাল দুই দলের জন্যই বিশ্বকাপে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। কিন্তু এই দুই জাদুকর নিজ নিজ দেশকে সেরা ফল এনে দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই নিজেদের নিংড়ে দেবেন।
প্রশ্ন: আপনার চোখে এবারের বিশ্বকাপের ফেবারিট কারা?
নেইমার: নিঃসন্দেহে ব্রাজিল। আরও বেশ কটি দল আছে। আমাদের মহাদেশ থেকে আর্জেন্টিনা আছে, উরুগুয়ে আছে। আর এবারের বিশ্বকাপ যেহেতু ইউরোপে, বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশও থাকবে ফেবারিটের তালিকায়। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স…বেলজিয়াম আছে, পর্তুগাল আছে। নির্দিষ্ট কোনো একটি দেশকে ফেবারিট বলা খুব কঠিন।

বিশ্বকাপে নেইমার

বিশ্বকাপ ১ 

২০১৪

ম্যাচ ৫

জয় ৩

ড্র ২

হার ০

গোল  ৪

হলুদ কার্ড ১

লাল কার্ড ০

বাছাইপর্বে

১৪ ম্যাচে ৬ গোল