বিশ্বকাপে নেই তবে বিপুলভাবেই আছে যে দেশ
রাশিয়া বিশ্বকাপে চীন নেই। কিন্তু বিশ্বকাপ দেখতে প্রচুর চীনা ফুটবলপ্রেমীর সমাগম ঘটবে রাশিয়ায়। বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে অংশ নিতে ব্যর্থ হওয়া দেশগুলোর নাগরিকদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টিকিট কিনেছেন চীনের ফুটবলপ্রেমীরা। চীনে ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা নয়, সবচেয়ে জনপ্রিয় জার্মানি
রাশিয়া বিশ্বকাপে চীন নেই। এশিয়া অঞ্চল থেকে বাছাইপর্বের বাধা পেরোতে পারেনি তারা। ফুটবলের লড়াইয়ে পেরে ওঠেনি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সৌদি আরব, ইরানের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে। কিন্তু না থেকেও বিশ্বকাপে খুব ভালো করেই থাকছে তারা। থাকছে দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গেই।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সংখ্যায় বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর সমর্থকদেরও ছাপিয়ে যেতে পারেন চীনা ফুটবলপ্রেমীরা। তার মানে, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল কিংবা জার্মানির সমর্থনে সেসব দেশের ফুটবলপ্রেমীদেরও ছাপিয়ে যাবেন চীনারা।
বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে মাত্র একবারই (২০০২) খেলেছে চীন। সেবার কোনো গোল না করেই প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় তাঁরা। তবে বিশ্বকাপ নিয়ে চীনাদের আগ্রহ বরাবরই প্রবল। বিশেষ করে, দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ফুটবলভক্ত হওয়ায় চীনা ফুটবলের পালেও জোর হাওয়া লেগেছে। ২০৩০ অথবা ২০৩৪ বিশ্বকাপের স্বাগতিক হওয়ার চেষ্টা করছে চীন। বিশ্বকাপ উপভোগেও বিপুল আগ্রহ চীনজুড়ে।
চীনের প্রায় ৪০০ ট্যুর এজেন্সি সে জন্য একযোগে কাজ করছে। এমন একটি এজেন্সির সহায়তা নিয়েই রাশিয়ায় বিশ্বকাপ উপভোগ করতে যাবেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক দাই কুয়ান। শক্তি প্রকৌশলের এই অধ্যাপকের এ জন্য খরচ হবে ১০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৭৮০ টাকা)। দাই কুয়ান আসলে বিশ্বকাপ দেখতে রাশিয়াগামী বিশাল চীনা বহরের অংশ। ফিফার হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বকাপে ১৭ লাখ টিকিটের মধ্যে শুধু চীনারাই কিনেছে ৩৭ হাজার টিকিট। বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে জায়গা পেতে ব্যর্থ হওয়া দেশগুলোর নাগরিকদের মধ্যে টিকিট কেনার হিসেবে হিসেবে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে তাঁরা টেক্কা দিতে পারেনি।
ইতালিয়ান সিরি ‘আ’ দেখে বড় হওয়া দাই কুয়ান ‘বাতিগোল’-এর ভক্ত—মানে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। তিনি আর্জেন্টিনারও সমর্থক। তবে বাংলাদেশের মতো চীনের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার কিন্তু অতটা কদর নেই। ব্রিটেনের অধ্যাপক সাইমন চ্যাডউইকের গবেষণা মতে, চীনে বিদেশি দলগুলোর মধ্যে জার্মানি সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিশেষ করে চীনের নারী ফুটবলপ্রেমীরা নাকি টনি ক্রুস, মার্কো রিউস, হুলিয়ান ড্রাক্সলারদের নিয়ে পাগল।
স্যালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া উদ্যোগ বিভাগের অধ্যাপক চ্যাড্উইকের ব্যাখ্যা, ‘জার্মানি ও চীনের সম্পর্ক এবং “ব্র্যান্ড জার্মানি”র মধ্যে কিছু একটা আছে। চীনারা সব সময় সেরা ব্র্যান্ড ব্যবহার করতে চায়। ফুটবলেও ব্যাপারটা তেমনই। সমর্থকই যদি হতে হয়, তাহলে সেরা দলটার হওয়াই ভালো!
গত বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ব্রাজিলের তুলনায় ভৌগোলিকভাবে রাশিয়া কিন্তু চীনের অনেকটাই কাছাকাছি। বিপুলসংখ্যক চীনা ফুটবলপ্রেমীদের রাশিয়ায় ছুটে যাওয়ার এটাও একটা বড় কারণ। কেবল দর্শকই নন পৃষ্ঠপোষকদের ভিড়েও থাকছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রযুক্তিনির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিভো, ইলেকট্রনিক পণ্যনির্মাতা প্রতিষ্ঠান হাইসেনস ও ডেইরি পণ্য উৎপাদক মেনগুনি ডেইরি।