প্র্যাকটিস ম্যাচেই দেখিয়ে দিল আফগানরা
টি-টোয়েন্টিতে এত দিনে একটাই ম্যাচ হয়েছিল এই দুই দেশের মধ্যে। বিশ্বকাপের সেই খেলায় আফগানিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। দেরাদুনের আনকোরা মাঠের আনকোরা পিচে প্রস্তুতি ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে মনে হচ্ছে, আফগানদের বিরুদ্ধে সাকিবদের ‘আমরা হেলায় নাগেরে খেলাই’-এর দিন বোধ হয় শেষ। ১৬ বল বাকি থাকতে মাত্র ২ উইকেট খুইয়ে আফগানরা শুক্রবার রাতে যেভাবে বুক ফুলিয়ে মাঠ ছাড়ল, তাতে মনে হলো তাদের গর্বের চেয়েও বাংলাদেশ দলের লজ্জা যেন বেশি।
লজ্জাই বটে। মোসাদ্দেক হোসেনের ২২ বলে ৩৮ বাংলাদেশিদের করা সর্বোচ্চ স্কোর। সেকেন্ড হায়েস্ট স্কোরার মুশফিকুর, ৩২ বলে ২৭। স্পিনারকে রিভার্স সুইপ করাটা বোধ হয় তাঁর খুবই পছন্দের শট। জিয়াউর রহমান যে মানের স্পিনারই হোন না কেন, তিনি রশিদ খান কিংবা মুজিবুর রহমান নন। তাঁকে তিন-তিনবার রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ফসকেছেন মুশফিকুর। চতুর্থবার ধরা পড়লেন শর্ট থার্ড ম্যানে। রশিদ বা মুজিবুর কেউই শুক্রবার মাঠে নামেননি। তাঁদের আস্তিনে লুকিয়ে রেখেই আফগানরা সাকিব আল হাসানদের কপালে গভীরতর করে তুলল চিন্তার ভাঁজ।
সৌম্য আউট হলেন মাত্র ২ রানে। ১১ মিনিট মাঠে থেকে পাঁচটি বল খেলে মোহাম্মদ নবির নিরীহ ছোবলে তেকাঠি ফাঁক করে ফেললেন। কী যে হয়েছে তাঁর, তিনিই জানেন। বোর্ডের খোরপোশ হারানোর সঙ্গে সঙ্গে হয়তো হারিয়ে ফেলেছেন নিজের প্রতি বিশ্বাসও। লিটন কট বিহাইন্ড হলেন, এটা জেনেও যে ফরিদ মোহাম্মদ একজনকে স্লিপে মজুত রেখেছেন। মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির রহমান কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু অতি ক্ষণস্থায়ী। ৬ উইকেটে ১৪৫ আর যা-ই হোক সম্মানজনক আয়োজন নয়।
আফগানদের টার্গেট ছিল ১৪৬। প্রথম ওভারেই আবু জায়েদ রাহি একজনকে তুলে নিলেন। পঞ্চম ওভারে রনি তুললেন আরও একজনকে। ২২ রানে ২ উইকেট থেকে হজরতউল্লা জেজাই ও মোহাম্মদ নবি যে ১৪৭ করে ফেলবেন, দশম ওভারেও তার ছিটেফোঁটা ইঙ্গিত কিন্তু ছিল না। হঠাৎই শুরু চরম আগ্রাসন। এতক্ষণ নিজেকে গুটিয়ে রাখা অধিনায়ক সাকিব ১৪তম ওভারে প্রথমবারের মতো হাত ঘোরাতে এলেন। কিন্তু সমীহ তো দূরের কথা, দুই আফগান তাঁকে তাচ্ছিল্যই করলেন।
টি-২০তে তারা কেন বাংলাদেশের চেয়ে দুই ধাপ ওপরে, শুক্রবার রাতে দেরাদুনের প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানরা তা বুঝিয়ে দিল। এই দাপট চূর্ণ করতে গেলে যে পরিক্রম প্রয়োজন, অহংবোধে ঘা খাওয়া বাংলাদেশ রোববারে তা করতে পারবে কি না, সেদিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকতে হবে। তামিম ইকবাল দলে যোগ দিচ্ছেন শনিবার। তাঁর আগমন সৌভাগ্য বয়ে আনুক—এই প্রার্থনায় কোর্টনি ওয়ালশের ছেলেরা শনিবারের সকাল দেখবে।
স্কোরকার্ড:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৫ (লিটন ৮, সৌম্য ২, সাকিব ১৯, মুশফিক ২৭, মাহমুদউল্লাহ ১০, সাব্বির ১৮, মোসাদ্দেক ৩৮*, আরিফুল ১১*; নবী ১/৪, জিয়াউর ১/৯, কায়েস ১/১৪, সরফউদ্দীন ১/১৯, গুলবদ্দীন ১/২২, ফরিদ ১/৪২, মিরওয়াইজ ০/১২, নাভীন ০/২৩)