সালাহ লিভারপুলেই থাকছেন, নেইমারের পিএসজিতে থাকা অনিশ্চিত

পিএসজি ছাড়তে পারেন নেইমার। গুঞ্জন চলছে যোগ দিতে পারেন রিয়ালে। ছবি: এএফপি
পিএসজি ছাড়তে পারেন নেইমার। গুঞ্জন চলছে যোগ দিতে পারেন রিয়ালে। ছবি: এএফপি
>মোহাম্মদ সালাহকে ঘিরে কয়েক মাস ধরেই রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার গুঞ্জন চলছে। কিন্তু মিসরের এই ফরোয়ার্ড নিজেই জানিয়েছেন, তিনি কোথাও যাচ্ছেন না। থাকছেন লিভারপুলেই। এদিকে নেইমারের পেছনেও ছুটছে রিয়াল। ব্রাজিলিয়ান এ ফরোয়ার্ড তাঁর কাছের মানুষদের কাছে বলেছেন, প্যারিসে যাওয়াটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তবে নেইমারকে কিনতে হলে বেশ ঝামেলা পোহাতে হবে রিয়ালকে।

পুরস্কারগুলো যে সব মোহাম্মদ সালাহই পাবেন, তা তো জানাই ছিল। খেলোয়াড় ও ক্রীড়ালেখকদের ভোটে প্রিমিয়ার লিগেরই মৌসুমের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন, আর নিজের ক্লাব লিভারপুলের মৌসুম-সেরা হবেন না! লিভারপুল লেফটব্যাক অ্যান্ডি রবার্টসন তো অনুষ্ঠানে ঢোকার মুখে ক্যামেরার সামনে মজা করে বলছিলেনও, ‘লিভারপুল প্লেয়ার্স অ্যাওয়ার্ড নাইটে সবাইকে স্বাগত। নাকি বলব মো সালাহ অ্যাওয়ার্ড নাইট?’ 

বললেও ক্ষতিবৃদ্ধি হতো না। সমর্থক ও খেলোয়াড়দের ভোটে এখানেও মৌসুম-সেরার পুরস্কার দুটি উঠেছে এবারই লিভারপুলে আসা সালাহর হাতে। তবে সেটি নয়, পুরস্কার নিতে এসে সালাহ যা বললেন, সেটিও মৌসুমে তাঁর ৪৩ গোলের চেয়ে কম আনন্দ দেয়নি লিভারপুল সমর্থকদের। কয়েক মাস ধরেই তো তাঁর রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার গুঞ্জন । তাঁর দেশ মিসরের সাবেক কোচ-খেলোয়াড়, এমনকি রাষ্ট্রপ্রধানরাও সালাহর রিয়ালে যাওয়া উচিত বলে গুঞ্জনের পালে বাতাসটা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে এত গুঞ্জনের মধ্যেই পরশু সালাহ বলে দিলেন, ‘আমি কোথাও যাচ্ছি না!’
‘আমি এখানে অনেক খুশি। সবকিছুই ভালোভাবে চলছে। অবশ্যই লিভারপুলকে নিয়ে ভবিষ্যতে আমার অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে। দেখতেই পাচ্ছেন, আমাদের অসাধারণ একটা মৌসুম কেটেছে, আমরা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছি। তবে এটা মাত্র শুরু!’—পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সালাহর কথা। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল যদি ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের ‘দারুণ কিছু’র শুরু হয়, তবে সেটি রিয়াল মাদ্রিদকে দিয়েই হচ্ছে। ২৬ মে কিয়েভে যে লিভারপুলের প্রতিপক্ষ টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার লক্ষ্যে দৌড়ানো জিনেদিন জিদানের দল।

লিভারপুলে কেবল নিজের শুরু দেখছেন সালাহ। ছবি: এএফপি
লিভারপুলে কেবল নিজের শুরু দেখছেন সালাহ। ছবি: এএফপি

তা রিয়ালের প্রসঙ্গেই আসছে আরেকটি দলবদলও। ধারে-ভারে সালাহর চেয়েও যেটি বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ার কথা। নেইমার! এই মৌসুমেই বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে গেছেন। কিন্তু আগামী মৌসুমেই আবার স্পেনে ফিরতে চান নেইমার, সে গুঞ্জন তো আর নতুন নয়। নতুন যা খবর, সেটি হলো, তাঁর পিএসজি ছাড়ার কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম যেটিকে নাম দিয়েছে রিয়ালের ‘অপারেশন নেইমার!’ এমনকি এই দলবদল সম্পন্ন করার জন্য ফুটবলের ‘সুপার এজেন্ট’দের একজন পিনি জাহাভিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জটিলতা রয়েছে এমন দলবদল করায় যাঁর খ্যাতি আছে। এমনকি রোমান আব্রামোভিচের চেলসির মালিকানা নেওয়ার সময়ও জাহাভির ভূমিকা ছিল।
অনেক নাটকই হচ্ছে নেইমারের পিএসজিতে থাকা না-থাকা নিয়ে। স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা জানাচ্ছে, পিএসজি সভাপতি নাসের আল-খেলাইফিকে কয়েক দিন আগেই নেইমারের ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্রাজিলিয়ান তারকা কেন প্যারিস ছাড়তে চান, সেটিও জানিয়েছে মার্কা। ২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড নাকি এরই মধ্যে কাছের মানুষের কাছে স্বীকার করেছেন, প্যারিসে যাওয়াটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। পিএসজির ড্রেসিংরুমে আর্জেন্টাইন সতীর্থদের সঙ্গে এমনকি উরুগুইয়ান এডিনসন কাভানির সঙ্গেও তাঁর মিলছে না। অনুভূতিটা পারস্পরিকই, সতীর্থরাও নেইমারের ওপর ক্ষুব্ধ।
শুধু এটাই তো আর একমাত্র ঝামেলা নয়। বার্সেলোনায় নেইমারের চুক্তিতে যেমন ‘রিলিজ ক্লজ’ ছিল, যেটি পরিশোধ করে বার্সার অনিচ্ছা সত্ত্বেও নেইমারকে নিয়ে গেছে পিএসজি, ফ্রেঞ্চ ক্লাবটিতে নেইমারের চুক্তিতে তেমন শর্ত নেই। পিএসজিকে রাজি করানোর ওপরই তাই নির্ভর করছে সবকিছু। পিএসজির নিয়ন্ত্রণ যাঁদের হাতে, তাঁদের অন্যতম তামিম বিন হামাদ আল থানির ইচ্ছা-অনিচ্ছা আর অহমের ওপর তাই অনেক কিছু নির্ভর করছে। এক বছর পরই বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিতে হলে কাতারের আমির তামিমের অহমে লাগতেই পারে।
আর দামের ব্যাপারটা তো আছেই। বার্সেলোনা থেকে ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো দিয়ে দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে নেইমারকে নিয়ে গিয়েছিল পিএসজি। রিয়াল জানে, এখন তাঁকে কিনতে গেলে ২৫-২৬ কোটি ইউরোর বেশিই খরচ করতে হবে। সঙ্গে যোগ করে নিন বেতন। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চেয়ে বেশি হওয়া যাবে না নেইমারের বেতন, আবার পিএসজিতে যা পেতেন, তার চেয়ে কম হওয়া যাবে না। আবার দলবদল, বেতন...সবকিছুই করতে হবে উয়েফার আর্থিক সামঞ্জস্যতার (ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে) নীতি মেনে। খেলোয়াড়টির নাম নেইমার বলেই হয়তো রিয়াল এত ঝামেলা সইতেও রাজি।