মুমিনুলকে নিয়ে যে কারণে তোলপাড়
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে যে মুমিনুল হক-মাহমুদউল্লাহ বাদ পড়ছেন—এমন একটা খবর ছড়িয়ে পড়েছিল দল ঘোষণার দুদিন আগেই। দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে তাই এই নিয়ে প্রশ্নের ঝড় উঠবে, এটাও অনুমান করা যাচ্ছিল। অনুমানটা নিশ্চয়ই নির্বাচকেরাও করতে পেরেছিলেন। তাঁরাও বেশ ‘হোম ওয়ার্ক’ করে এসেছিলেন।
‘ঢাল’ হিসেবে দল নির্বাচনী সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচকেরা সঙ্গে এনেছিলেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকেও। যেহেতু কোচ নিজেও দল নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত, তিনি আসতেই পারেন। কিন্তু এর আগেও তো হাথুরুর ইচ্ছাতেই দল হয়েছে। কিন্তু এভাবে কি তাঁকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্তির লড়াইয়ে নামতে হয়েছে?
সংবাদ সম্মেলনের ৯০ ভাগ সময়জুড়েই ছিল মুমিনুল প্রসঙ্গ। বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে কেন নেওয়া হয়নি—প্রশ্নের ঝড়টা এতটাই তীব্র হলো, তাতে হারিয়ে গেল অন্য খেলোয়াড়দের প্রসঙ্গ। মুমিনুলকে নিয়ে কেন এ তোলপাড়? নির্বাচক (বলা ভালো প্রধান নির্বাচক), কোচকে এত প্রশ্নের মুখেই-বা কেন পড়তে হলো? এমন তোলপাড়ের কারণ খুঁজতে গিয়ে হাথুরু নিজে মন্তব্য করেছেন, এমন তো নয় মুমিনুলের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেল। আবারও ফিরে আসার সুযোগ তো তাঁর থাকছেই।
বেশ কয়েকটি কারণেই এমন ঝড় উঠেছে। বড় কারণ, মুমিনুল বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাঁকে টেস্ট ব্যাটসম্যানদের তকমা দিয়ে রঙিন পোশাকে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। এমনকি ঘরোয়া লিগে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে দারুণ খেলেও সুনজর পাননি। বছরে দুটি বা তিনটি টেস্ট খেলার সুযোগ পান যে ব্যাটসম্যান, তাঁর ‘সাম্প্রতিক ফর্ম’ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা যৌক্তিক?
মুমিনুল যদি ফিরে আসতে চান দলে, সে ক্ষেত্রে তাঁর সামনের পথটা কী হবে? সেই বার্তাও অস্পষ্ট। প্রস্তুতি ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে ভালো ব্যাটিং করেও জায়গা পাননি। দুর্বল ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে নির্বাচকেরা খুব একটা গুরুত্ব দেন, এমনটাও মনে হয় না। সেখানে বছরের পর বছর ভালো করলেও জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার অনিবার্য শর্ত হয়ে ওঠে না। ভয়টা এখানেই। মুমিনুলকে সংশয়মাখা এক পথের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো না তো!
কালকের সংবাদ সম্মেলনে ঝড়টা উঠল আরও কিছু কারণে। অনেক দিন ধরেই দল নির্বাচনে একচ্ছত্র আধিপত্য কোচ হাথুরুর। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে, দল গঠনে তাঁর ইচ্ছাই শেষ কথা। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ক্ষমতাটা বিসিবি কেন দিয়েছে হাথুরুকে? শ্রীলঙ্কান কোচ দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ দ্রুত কিছু সাফল্য পেয়েছে, বিশেষ করে ওয়ানডেতে। ধীরে ধীরে ভালো করছে ক্রিকেটের অন্য দুই সংস্করণেও। যেহেতু মাঠের খেলায় সাফল্য আসছে, বিসিবিও তাই কোচের চাওয়া ও ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কাজের স্বাধীনতা তিনি পেতেই পারেন। কিন্তু নির্বাচকদের তাহলে কাজ কী?
সাফল্যের ঝলকে আড়াল হয়ে গেলেও কিছু অন্ধকার দিক হাথুরু ধীরে ধীরে তৈরি করছেন। অপরিণত কোনো খেলোয়াড়কে হঠাৎই খেলিয়ে দেওয়া। আবার কদিন পর তাঁকেই ছুড়ে ফেলা। শুধু বয়সের অজুহাত দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সকে তোয়াক্কা না করা। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সের চেয়ে নেটে ব্যাটিং-বোলিং দেখে কাউকে দলে নেওয়া। পছন্দের কোনো খেলোয়াড় খারাপ করলেও তাঁকে বাড়তি সুরক্ষা দেওয়া, অন্যজনের ক্ষেত্রে সেই অনুগ্রহ না দেখানো।
কোচকে ঘিরে এমন নানা প্রশ্ন দানা বাঁধছিল অনেক দিন ধরেই। কাল সবই যেন একসঙ্গে বিস্ফোরিত হলো।