ক্রিকেটার লেখকেরা
>লেখকেরা যে সব সময় লেখালেখিতেই দিন গুজরান করতেন, তা নয়, ক্রিকেটও খেলতেন তাঁরা। অন্তর্জাল ঘেঁটে তেমন কয়েকজন বিশ্বখ্যাত লেখক।
তিনি পেশায় ছিলেন চিকিৎসক, পরে হয়েছিলেন জগদ্বিখ্যাত রহস্যোপন্যাস লেখক, শখের বশে আইন ব্যবসাও করেছেন, জিতেছেন দুটি মামলায়, ফুটবল খেলতেন পোর্টসমাউথ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ক্লাবে, গলফ খেলতেন সাসেক্সে, অগাধ জ্ঞান ছিল স্থাপত্যকলার ওপর, নকশা করেছিলেন বেশ কয়েকটি বাগানবাড়ির। সেই স্যার আর্থার কোনান ডয়েল যে একজন ক্রিকেটারও ছিলেন, তা কজন জানেন?
বেশির ভাগ মানুষেরই ধারণা, লেখকেরা অন্তর্মুখী হন, তাঁরা হন ঘরকুনো। দিনমান ঘাড় গুঁজে শুধু লিখেই যান। খেলাধুলায় বিশেষ আগ্রহ থাকে না তাঁদের। কিন্তু এ অনুমান সর্বৈব সত্য নয়। পৃথিবীতে অনেক জনপ্রিয় লেখক ছিলেন, যাঁরা নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন। শার্লক হোমসের স্রষ্টা স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ছিলেন তাঁদের একজন। ডয়েল ১৮৯৯ থেকে ১৯০৭ সালের মধ্যে বিশ্বখ্যাত মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে অন্তত ১০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন। প্রথম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করার রেকর্ড রয়েছে তাঁর। ১৯০৫ সালে স্কটল্যান্ডে যখন ‘লেখক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন তিনি সেখানে ক্রিকেট দলের দলপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এই ক্লাবে খেলেছেন আর্থার কোনান ডয়েল। বোলার হিসেবে অবশ্য ছিলেন অনিয়মিত। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মাত্র একটি উইকেটই পেয়েছিলেন তিনি। আর সেটি ছিল বিখ্যাত ক্রিকেটার ডব্লিউ জে গ্রেসের। গ্রেসকে বলা হয় ক্রিকেটের অমর চরিত্র।
ক্রিকেট খেলতেন স্যামুয়েল বেকেটও। বিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী নাট্যকার, যিনি ওয়েটিং ফর গডো লিখে বিশ্বসাহিত্যে অমরত্ব লাভ করেছেন, সেই বেকেটও ছিলেন একজন স্বনামধন্য ক্রিকেটার। তিনিই একমাত্র নোবেলজয়ী লেখক, যিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতেন। ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এবং বাঁহাতি মিডিয়াম পেস বোলার।
পিছিয়ে ছিলেন না কবিরাও। ভাবুক বলে যাঁদের অখ্যাতি দুনিয়াজোড়া, তাঁরাও খেলেছেন ক্রিকেট। এ তালিকায় প্রথমেই স্মরণযোগ্য হয়ে আছেন রোমান্টিক কাব্যান্দোলনের পুরোধা কবি লর্ড বায়রন। ব্রিটিশ এই কবি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত, উদ্দাম এক অভিযাত্রিক। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই খেলতেন ক্রিকেট। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ইটন বনাম হ্যারোর ম্যাচে সব সময় তিনি হ্যারোরের হয়ে খেলেছেন। পরবর্তী সময়ে এই ম্যাচ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হিসেবে পরিচিত হয়। যাহোক, বায়রন তখন কী নামে খেলতেন, জানেন? জর্জ গর্ডন নোয়েল বায়রন। কারণ, এটিই ছিল তাঁর কেতাবি নাম। পরে বড় হয়ে যখন তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন, তখন লর্ড বায়রন নাম নেন রোমান্টিক এই কবি।
নারী লেখকেরাও কি খেলতেন? তা-ও আবার ক্রিকেট? আপনার কুঞ্চিত ভ্রু এবার সোজা হয়ে যাবে যখন শুনবেন খোদ ভার্জিনিয়া উলফ খেলতেন ক্রিকেট! সেই উলফ, যাঁর পুরো নাম অ্যাডেলাইন ভার্জিনিয়া স্টিফেন উলফ, জন্মেছিলেন লন্ডনের দক্ষিণ কেনসিংটনে ২২ হাইড পার্কের একটি বাড়িতে ১৮৮২ সালের ২৫ জানুয়ারি, তাঁর ক্রিকেট খেলা কিছুটা অবিশ্বাস্যই বটে; বিশেষত সময়টা যখন আঠারো শতক। সেই সময় ক্রিকেট ছিল একান্তই ছেলেদের খেলা। কিন্তু ভার্জিনিয়া যাঁর নাম, তিনি কেন গতানুগতিক হবেন? তাই ছোটবেলাতেই প্রথা ভেঙে ব্যাট-বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন উনিশ শতকের আধুনিকতাবাদী এই লেখক। বয়স যখন পাঁচ-ছয়ের কোঠায়, তখন ভাই আদ্রিয়ান ও বোন ভানেসার সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে উলফ বলেছেন, ‘শৈশবে ভানেসা আর আমি ছিলাম যাকে বলে টমবয়। পাহাড়ে ওঠা, গাছে চড়া আর ক্রিকেট খেলা ছিল আমাদের নিত্যদিনের কর্ম।’
ক্রিকেটকে নিত্যদিনের কর্মে পরিণত করেছিলেন আরেক বিখ্যাত নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টার। নোবেলজয়ী ব্রিটিশ এই নাট্যকার ছিলেন গাইয়েটিস ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি। দলকে উজ্জীবিত রাখতে নানা কসরত করতেন তিনি। প্রচণ্ড ক্রিকেটামোদী পিন্টার বলেছেন, সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে যে কয়েকটি ভালো জিনিস সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে ক্রিকেট অন্যতম।
সূত্র: স্পোর্টসকিডা ডটকম