লন্ডনে বসে তেঁতুলিয়ার চা পান
যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের নান্দনিক এলাকা কোভেন্ট গার্ডেন। গলি-ঘুপচি ধাঁচের পথ, নানা দেশের রেস্তোরাঁ, অভিজাত ফ্যাশন হাউস আর নামীদামি থিয়েটার হলের উপস্থিতির কারণে বছরে প্রায় সাড়ে চার কোটি পর্যটকের আনাগোনা এখানে। ব্যস্ততম কোভেন্ট গার্ডেনের গলিপথ নিল স্ট্রিটে গেলেই চোখে পড়বে একটি দোকানের সামনে লাগানো বাংলা শব্দ—চা। যতই এগিয়ে যাই কৌতূহল আরও বাড়ে। দরজা খুলে প্রবেশ করতেই দোল খেল শচীন দেববর্মনের গান, ‘বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছ দোলা!’
চারপাশের দেয়ালজুড়ে থরে থরে রাখা চায়ের বয়ামে বাহারি নকশায় আঁকা বাংলা বর্ণমালা। নানা স্বাদের চায়ের সুবাসে ভরে উঠছে মন। হরেক জাতের চায়ের সব কটিই বাংলাদেশের। তা–ও আবার একটি বাগানের। যেখানে চা তৈরি হচ্ছে তার পাশের দেয়ালে সাঁটা ঘোষণা—‘সব চা বাংলাদেশের তেঁতুলিয়ায় নিজস্ব বাগানে বিশুদ্ধভাবে (অরগানিক) উৎপাদিত।’ সব মিলিয়ে দোকানটি যেন বহুজাতিক লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে বাংলার জয়গান গাইছে।
লোগো হিসেবে ‘চা’ শব্দটি ব্যবহার করা হলেও দোকানটির নাম ‘তেঁতুলিয়া’। তেঁতুলিয়া বানানে কায়দা করে ইংরেজি ‘টি’ (চা) শব্দটি জুড়ে দেওয়া। ভিনদেশিরা উচ্চারণ করেন ‘টিটুলিয়া’। ফলে ইংরেজিতে লেখা দোকানের নামটিই বলে দিচ্ছে চা নিয়েই এর কারবার।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে যখন দোকানটিতে প্রথম গেলাম, তখন ক্রেতাদের বেশ ভিড়। বসার জায়গা পাওয়া গেল না। স্বত্বাধিকারী আহসান আকবর নিয়ে গেলেন পাশেই অবস্থিত নিজ কার্যালয়ে। সঙ্গে টেকওয়ে কাপে করে ‘মসলা চা’। সেই চায়ে চুমুক দিতে দিতেই শুনলাম এই চায়ের কারবারের গল্প।
নানা স্বাদের চা
বিলেতবাসী যে কত রকমের চা পান করেন, তার আঁচ পাওয়া গেল এখানে। আহসান আকবর জানালেন, আট স্বাদের চা পরিবেশন করেন তাঁরা। এগুলো হলো ব্ল্যাক বা কালো চা, গ্রিন বা সবুজ চা, জিনজার বা আদা চা, জেসমিন, টারমারিক বা হলুদ চা এবং উলং চা—এর স্বাদ ধোঁয়াটে (স্মোকি)। এ ছাড়া চায়ের ছয় প্রকারের ককটেল আছে, যেগুলো অ্যালকোহলযুক্ত। আর অ্যালকোহলমুক্ত মকটেইল আছে চার প্রকারের। আছে মসলা চা। ক্রেতারা বিনা মূল্যে চেখে দেখে তারপর অর্ডার করতে পারেন।
জনপ্রিয় ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, কেবল চা নিয়ে এত আয়োজন লন্ডনে এক নতুন সংযোজন। লন্ডনের টাইম আউট ডটকম এটিকে কোভেন্ট গার্ডেনের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
অন্যান্য কফিশপের সঙ্গে টেক্কা দিতে চায়ের দামও বেশ প্রতিযোগিতামূলক এখানে। ছোট কাপ ৩ পাউন্ড (৩০০ টাকা)। বড় কাপ ৫ পাউন্ড (৫০০ টাকা)। চাইলে কৌটাভর্তি চা কিনতে পাওয়া যায়। অথবা উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য এসব কৌটা বিনা মূল্যে প্যাকিং করে দেন তাঁরা। ৮০ গ্রাম চায়ের প্রতিটি কৌটা বিক্রি হয় ১৫ পাউন্ড (১ হাজার ৫০০ টাকা)। পরবর্তীকালে মাত্র ১০ পাউন্ডে (১ হাজার টাকা) কৌটা রিফিল করা যায়। কৌটার পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা বলে জানালেন আহসান।
যেভাবে লোগো হলো ‘চা’
একটি ছোট্ট সুন্দর বাংলা শব্দ ‘চা’। শুনতেও বেশ চমৎকার লাগে। অথচ এটি কেউ লোগো হিসেবে কপিরাইট করেনি। এই সুযোগকেই কাজে লাগালেন আহসান আকবর। তিনি বলছিলেন, ‘চীন ও জাপানের মানুষেরা লন্ডনে তাদের ব্যবসার পাশাপাশি নিজ নিজ ভাষাকে গর্বের সঙ্গে উপস্থাপন করে। আমিও আমার বাংলা ভাষাকে সে রকমভাবেই তুলে ধরার চিন্তা করলাম।’
শুধু চা শব্দটিই নয়, চায়ের কৌটায় সুন্দর নকশা করা বাংলা বর্ণমালায়। যেমন কালো চায়ের (ব্ল্যাক টি) কৌটায় বড় করে লেখা ‘কা’। সবুজ চা (গ্রিন টি)–এর গায়ে লেখা ‘স’।
২০১৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে এই চায়ের কারবার। যেখানে বাংলাদেশের ইতিবাচক দিক তুলে ধরার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন উদ্যোক্তারা।