দেবী চলচ্চিত্রের নীলু চরিত্রের কথা অনেকেরই জানা। একেবারে কেন্দ্রীয় চরিত্র রানুর মতোই সমান্তরাল। এটি আমার প্রথম প্রযোজিত ছবি। শুটিংয়ের আগে আমরা পুরো টিম মিলে সেই নীলু চরিত্রের জন্য যখন অভিনেত্রীর কথা ভাবছিলাম, তখন অনেকটা সম্মিলিতভাবে শবনম ফারিয়াকে বাছাই করি। শবনম ফারিয়া ছাড়া আর কারও কথাই এই ‘অতিসাধারণ পাশের বাড়ির মেয়ে’ চরিত্রের জন্য আমাদের কল্পনাতেও আসেনি।
দেবীর কাজ করতে গিয়ে প্রথমে ওর একটু জড়তা ছিল। ওই যে ছবির ট্রেলারে প্রথম দেখায়, আমি গাড়ি থামিয়ে ফারিয়াকে বললাম, ‘আজকে গাড়িতে করে কোথাও যাবেন না, প্লিজ’—সেটা ছিল এই ছবির জন্য নেওয়া প্রথম শট। এরপরই জড়তা কাটিয়ে ও বেশ সহজ আর সাবলীল হয়ে যায়। মেকআপ নিতে নিতে, খেতে খেতে বা গল্প করতে করতে আমাদের মধ্যে বেশ একটা বোঝাপড়া হয়ে গেল। অবশ্য, ‘মেক আপ’ বললে ভুল বলা হবে। হুমায়ূন আহমেদের নীলু তো কালো, দেখতে অতটা ভালো না, একেবারে পাশের বাড়ির মেয়েটা। আর ফারিয়া এত মিষ্টি আর সুন্দর যে সময় নিয়ে ওর ‘মেক ডাউন’ করে মিষ্টতা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে।
সেই কাজ করতে গিয়েই অভিনেত্রী শবনম ফারিয়াকে আরও কাছে থেকে চেনা হলো। ওর ভেতরে একটা সরলতা আছে। মনের এই সরলতা একজন শিল্পীর জন্য খুব দরকার। মন থেকে চাইব সে যেন তাঁর এই দিকটার যত্ন নেয়।
নীলু আর শবনম ফারিয়া কিন্তু একেবারে বিপরীত চরিত্রের দুজন মানুষ। আমি সেটে ওকে শুধু বলেছি, অস্থিরতা কমিয়ে শান্ত হতে আর কম অভিব্যক্তি দিতে। সে সেটা করেছে। আর ও যে কী করেছে, সেটা বুঝতে পারল সিনেমাটা মুক্তি পাওয়ার পর। এই যে একটা ছবিতেই মানুষ ওকে তাঁদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন দিল, সেটা এখন ওকে ধরে রাখতে হবে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের দেশের অনেক শিল্পী মনে করেন, শুটিং–ডাবিং শেষ, তো তাঁর দায়িত্ব শেষ। কিন্তু, প্লাস্টার করা ভাঙা হাত নিয়ে ফারিয়া আমাদের সঙ্গে চট্টগ্রামে গিয়েছে। প্রতিটি প্রচারণায় সময় দিয়েছে। এই আত্মনিবেদনটা সব সময় পাওয়া যায় না। তাই আমার মনে হয়েছে, আমাদের মেধাবী অভিনয়শিল্পী হয়তো আছেন, কিন্তু সব সময় তারা কাজের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিশীল নন। শবনম ফারিয়া সেই বিরল অভিনয়শিল্পীদের একজন, যিনি একই সঙ্গে অভিনয়গুণে ‘মেধাবী’ এবং ‘প্রতিশ্রুতিশীল’।
ফারিয়ার যে দিকটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে, তা হলো ফারিয়ার সাহস। এখনকার দিনের তারকাদের অনেকের ভেতর একটা বিষয় মোটেই দেখা যায় না, যা ফারিয়ার মধ্যে আছে। আর সেটা হলো, ও খুব সংবেদনশীল। সবকিছুতেই ওর একটা অবস্থান আছে। তাঁর এই সাহসী মনোভাবে আমি মুগ্ধ। সে রকম সুযোগ হলে, ভালো চিত্রনাট্য পেলে আমি ভবিষ্যতে ওর সঙ্গে আরও কাজ করতে চাই।
তাই আমি চাই, ফারিয়া বেশি বেশি সিনেমা করুক। একজন শিল্পীর জন্য কোন কাজটা করা উচিত আর কোনটা উচিত নয়—এই সিদ্ধান্তটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বোধটা ফারিয়ার খুব ভালো। আমি জানি, ফারিয়া বুঝেশুনে ধীরেসুস্থে শান্তভাবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে। অল্প হোক, কিন্তু দুর্দান্ত কিছু কাজ উপহার দেবে। নীলুর ভেতর আমি একটা দারুণ সম্ভাবনা দেখেছি। এই অনন্য প্রতিভা যেন বৃথা না যায়। ব্যক্তিজীবন, সংসার আর ক্যারিয়ার দারুণভাবে ভারসাম্য করে ও এগিয়ে যাক।
ফারিয়ার জন্য হৃদয়ের গভীর থেকে শুভকামনা। আমি ওর সর্বোচ্চ সাফল্য কামনা করছি, আর সেই যাত্রায় সব সময় পাশে আছি।
অনুলিখিত
জয়া আহসান: অভিনেত্রী এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক