জীবন বাঁচানো নায়কেরা
>
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ, এরপর আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার—এসব কাজ করতে হয় নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। তাঁরা ‘ফায়ার ফাইটার’। ২৮ মার্চ বনানীর অগ্নিকাণ্ডেও দেখা গেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মীদের সাহসী অভিযান। পাশাপাশি সাধারণ মানুষও সাহসের সঙ্গে উদ্ধার করেছেন কয়েকজনকে। আগুনের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করা কয়েকজন নায়কের কথা নিয়ে এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন।
উদ্ধার অভিযানের ছক আঁকেন তিনি
‘বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় তাপমাত্রা ছিল দুই হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ ব্রিদিং অ্যাপারেটাস (শ্বাসপ্রশ্বাসের সুবিধাসহ বিশেষ পোশাক) পরেও ৩৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় কাজ করা যায় না। কিন্তু তাঁরা করেছেন। বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তার কথাও আমাকে ভাবতে হয়।’ ২৮ মার্চ ঢাকার বনানীর বহুতল ভবন এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর অভিযান পরিচালনা নিয়ে এভাবেই বললেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ।
দুর্ঘটনার সংবাদ পেলে মুহূর্তেই শাকিল নেওয়াজকে করতে হয় উদ্ধারকাজ কীভাবে চলবে, কটি ইউনিট কাজ করবে, কে কোন অবস্থান থেকে কাজ করবেন, কোন কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে—অভিযানের এমন সব সিদ্ধান্ত। একটু এদিক-সেদিক হলেই দিতে হবে বড় মাশুল, তাই ভুলের কোনো সুযোগ নেই।
সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনার পাশাপাশি অনেক সময় আগুন নেভানোর কাজও (ফায়ার ফাইটিংও) করেন শাকিল নেওয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমি একজন কমান্ডো, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিই। বাকিরা অনুসরণ করেন। তাঁরা যখন দেখেন, পরিচালক নিজে কাজ করছেন, উৎসাহ পান।’
দুর্ঘটনার সময় প্রিয়জন বা নিজের জীবনের মায়া কাজ করে না। কেবল মাথায় থাকে কী করে অসহায় মানুষদের উদ্ধার করা যাবে। দুর্ঘটনা কত দ্রুত সামাল দেওয়া যাবে। এ কারণেই এই পরিচালকের মুঠোফোন কখনো বন্ধ থাকে না। ‘মাঝরাতেও দেশের যেকোনো জায়গা থেকে দুর্ঘটনার খবর আসতে পারে। ফোন ধরে যখন তাঁদের সাহস দিই, তাঁরা অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করতে পারেন। এই পেশায় ডেডিকেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
শৈশবে বেশ দুরন্তই ছিলেন শাকিল নেওয়াজ। তবে সমানতালে পড়াশোনাটাও করেছেন। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। শেষ পর্যন্ত যোগ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। বাবা সেনাবাহিনীতে থাকায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সাত বছর ধরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশে-বিদেশে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এ কে এম শাকিল নেওয়াজ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার এই বিশেষজ্ঞ পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে ক্লাস নেন, প্রশিক্ষণ দেন।
দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে শাকিল নেওয়াজের পরিবার। শিক্ষক স্ত্রী বুঝতে পারলেও সময় দিতে না পারায় মেয়েরা অনেক সময় অভিমান করে। তবে কিছুক্ষণ পরই তারা বলে, ‘বাবা, তুমি দেশের জন্য কাজ করো। তুমি আমাদের হিরো।’
কথা দিলাম, আমরা ফিরে আসব
বনানী দুর্ঘটনায় প্রথম সাড়াদানকারী (ফার্স্ট রেসপন্ডার) তাঁরা। স্টেশন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম, ফায়ারম্যান সোহাগ চন্দ্র কর্মকার সুউচ্চ মই (ল্যাডার) নিয়ে প্রথম ভবনের ওপরের দিকে উঠেছিলেন। মইটি নিচ থেকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন চালক মো. দেলোয়ার হোসেন। মইটি চালু করতে চার-পাঁচ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু উত্তেজিত জনতা সে সময় দিতে রাজি নয়। ফলে আক্রমণ চালায় তাঁদের ওপর। শহিদুল ও সোহাগ মই দিয়ে ওপরে উঠে যান, কিন্তু চালক কোথায় যাবেন? ফলে মার খেতে হয় তাঁকে। তবে পুরো সময় মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে যান তিনি।
দেলোয়ার বলেন, ‘আক্রান্ত ও উদ্ধারকারী—সবার জীবনের দায়িত্ব থাকে আমার হাতে। তাই যতই কষ্ট হোক, মুখ বুজে কাজ করে যাই।’
শহিদুলের মেয়ের বয়স পাঁচ মাস। তাই বনানী দুর্ঘটনায় আক্রান্ত গর্ভবতী নারীর ‘স্যার, আমার পেটে বাচ্চা, আমাকে বাঁচান’ আকুতি তাঁকে আবেগপ্রবণ করে। যেকোনো মূল্যে তিনি এই নারীকে উদ্ধার করতে চান।
‘এই নারীকে উদ্ধারের পর কান্না আটকে রাখতে পারিনি। তাঁকে জীবিত উদ্ধার জীবনের সেরা অর্জন। খুব ইচ্ছা, এই নারীর সন্তানের মুখ দেখা। কিন্তু তাঁর নাম-ঠিকানা কিছুই জানি না।’ বললেন শহিদুল। যাঁরা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা গেছেন, তাঁদের কথা ভেবে এখনো ঘুমাতে পারেন না তিনি। ‘আমি চিৎকার করে বলেছিলাম, আই প্রমিজ ইউ, আই উইল বি ব্যাক। কিন্তু তার আগেই তাঁরা লাফিয়ে পড়েন ভবন থেকে।’
ঝালকাঠির শহিদুল ইসলাম পত্রিকায় ফায়ার সার্ভিসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে শখের বসে আবেদন করেছিলেন। তারপর এটাই হয়ে যায় কর্মস্থল।
শহিদুলের সঙ্গী হয়ে সোহাগ সেদিন মইয়ের ওপর ছিলেন। মইয়ে একসঙ্গে তিনজনের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা যায় না। কিন্তু আগুনের ভয়াবহতা দেখে ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা একসঙ্গে নয়জনকেও নামিয়েছেন। জায়গা না থাকার পরও এক ব্যক্তিকে মইয়ের ওপর নিয়ে সোহাগ তাঁর পা শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন, যাতে পড়ে না যান। অতিকায় মইয়ের নিরাপত্তা তালা (সেফটি লক) লাগাতে পারেননি। এতে তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি ছিল শতভাগ। আবার উদ্ধারের পর আক্রান্তদের ভয় কাটাতে বুকে জড়িয়ে রাখতে রাখতে চোখের পানি ফেলতেন সোহাগ।
টাঙ্গাইলে বাড়ি সোহাগ চন্দ্র কর্মকারের। তিনি বলেন, ‘উদ্ধারের পর মানুষের মুখের হাসি এবং আশীর্বাদ সব ভুলিয়ে দেয়। মানুষ হিসেবে নিজেকে নিয়ে গর্ব হয়।’
কাচ ভেঙে পড়ছিল বৃষ্টির মতো
বনানীর দুর্ঘটনাস্থলে অগ্নিনির্বাপণের সরঞ্জামাদি বহন করা গাড়িতে করে গিয়েছেন ফায়ারম্যান বিষ্ণু পদ মিস্ত্রি। তিনিসহ দুজন ব্রিদিং অ্যাপারেটাস পরে অগ্নিকাণ্ডের সময় সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে আটতলার ভেতরে ঢোকেন অগ্রবর্তী দলের সদস্য হিসেবে। তখন কাচ ভেঙে পড়ছিল বৃষ্টির মতো। যেকোনো একটি কাচের টুকরার আঘাতে মৃত্যু হতে পারত।
‘ভেতরে প্রচণ্ড তাপ। আমাদের বাঁচাতে তখন একটা পানির পাইপ দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়, অন্য পানির পাইপ নিয়ে আমরা এগিয়ে চলি। এভাবে আটতলা, নয়তলা ও দশতলায় উঠে কাজ করি।’ সেদিনের কথা বলছিলেন সাতক্ষীরার বিষ্ণু। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর তাঁরা উদ্ধারকাজে যোগ দেন।
শহরে যেকোনো দুর্ঘটনায় বিষ্ণু সামনে থেকে আগুন নেভানোর বা উদ্ধারের কাজ করেন। একটানা
আধা ঘণ্টা কাজ করার নিয়ম থাকলেও রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত টানা কাজ
করেছেন। বেশ কয়েকবার বিপদেও পড়েছেন।
ফায়ারম্যান মকবুল হোসেনের বাবা বাড়ি থেকে বের হতে দিতেন না। ঢাকায় ঘুরতে এসে চাকরির পরীক্ষা দেন। চাকরি হয়ে যায়। বাড়ি ছেড়ে এসে শুরুতে মন খারাপ হতো। এখন ঢাকায় দুর্ঘটনা হলে তাঁকে কাজ করতে হবে ভেবে গ্রামে যেতে চান না। মকবুলের এক কথা, ‘মানুষের জন্য কিছু করতে ভালো লাগে। দুর্ঘটনা থেকে কোনো জীবিতকে উদ্ধার করার পর মনে হয়, জন্মটা সার্থক।’
খেলাধুলা ভালোবেসে চ্যালেঞ্জিং পেশায়
মো. তানহারুল ইসলামের কাছে বনানী দুর্ঘটনার খবর আসে ঠিক দুপুরে খাওয়ার আগে আগে। না খেয়েই দলের সদস্যদের নিয়ে ছোটেন ঘটনাস্থলে। কারণ, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে দল নিয়ে বের হতে হয় তানহারুলকে। যানজট ঠেলে যেতে যেতে কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, আরেকবার বুঝিয়ে দেন সবাইকে।
খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা রয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মো. তানহারুল ইসলামের। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষে কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু চ্যালেঞ্জিং কাজ অথচ খেলাধুলার সুযোগ থাকবে—এমন একটি চাকরি করা ইচ্ছা তাঁর। তাই ১৮ বছর আগে তিনি এই বাহিনীতে যোগ দেন। পদোন্নতি পেয়ে এখন হেডকোয়ার্টারের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন।
তানহারুল বলেন, ‘ফায়ার ফাইটারে নির্দেশনা দেওয়া কাজ হলেও
যেকোনো দুর্ঘটনায় আমাকে সামনে গিয়ে কাজ করতে হয়। এতে তাঁরা মনোবল পান।’ তিনি স্পেকট্রাম গার্মেন্টস ধস, রানা প্লাজা ধস, বিডিআর বিদ্রোহ, বিএসইসি ভবনে আগুনসহ বড়
বড় দুর্ঘটনা মোকাবিলায় অংশ
নিয়েছেন।
স্মৃতি হাতড়ে তানহারুল বলেন, রানা প্লাজায় এক মেয়ের হাত এমনভাবে আটকে ছিল যে কোনোভাবেই তাঁকে বের করা যাচ্ছিল না। মেয়েটি তখন বলেন, ‘স্যার, হাতটা কাইট্যাও আমারে বাঁচান।’ কিন্তু এত ছোট একটি মেয়ে হাত ছাড়া বেঁচে থাকবে, বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না। সাহস করে খুব জোরে টান দিলে হাতটি রক্ষা পায়।
সাহসিকতার জন্য দুবার রাষ্ট্রপতি পদক পাওয়া এই কর্মকর্তার দিনগুলো কাটে কর্মস্থল চারদেয়াল আর দুর্ঘটনা নিয়ে। সাপ্তাহিক ছুটি সব সময় না মিললেও রোজ দেড় ঘণ্টা খেলাধুলার সময় পান। ছেলেমেয়ে-স্ত্রী নিয়ে পরিবার।
নাইমের কীর্তি
নাইমের গল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে এখন অনেকেরই জানা। বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগলে অন্য অনেকের মতো ছুটে গিয়েছিল শিশু নাইম ইসলাম। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন রাস্তায় হাজার হাজার উত্সুক মানুষ। তাঁদের বেশির ভাগই দর্শক। কিন্তু নাইম ছিল আলাদা। ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, দুই হাত ও পায়ের সাহায্যে পলিথিন পেঁচিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে পানির পাইপ চেপে ধরে আছে নাইম। চোখেমুখে ভর করে আছে রাজ্যের উদ্বেগ। বয়স তাঁর কতই হবে, ৮ থেকে ১০ বছর।
নাইম ঢাকার আনন্দ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। থাকে কড়াইলের বৌবাজারে। বাবা রুহুল আমীন ডাব বিক্রেতা, মা গৃহকর্মী। ছোট এক বোন আছে। আগুন লাগার কথা শুনে ২৮ মার্চ বেলা দুইটার দিকে ছুটে এসেছিল ঘটনাস্থলে। পৌঁছে দেখে, আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। তখনই সে দেখে, তার পাশে যে পাইপটা আগুন নেভানোর কাজে পানি সরবরাহ করছে, তা ফুটো। নাইম সেটা চেপে ধরল। সাধ্যমতো পানির অপচয় রোধ করল। ২০ মিনিট পানির পাইপ ধরে রাখে নাইম।
জীবন বাঁচানো জসিম
বনানীর আলো-বাতাসেই বেড়ে উঠেছেন জসিম উদ্দিন। ৩২ বছর বয়সী এই তরুণ এখনো বনানীর এক ফুটপাতের চায়ের দোকানি। বাড়তি আয়ের খোঁজে কেনাবেচা করেন পুরোনো আসবাবও। বনানীতে অগ্নিকাণ্ডের দিন তাঁর চায়ের দোকানেই ছিলেন জসিম। খবর শুনে ছুটে গিয়েছিলেন এফ আর টাওয়ারের সামনে। জসিম উদ্দিন বলছিলেন, ‘গিয়া দেখি হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় দাঁড়াইয়া আছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন পানির পাইপ জোড়া দিচ্ছিল। কিন্তু উদ্ধারে কেউ যাচ্ছিল না।’
জসিম ভাবলেন, তাঁর কিছু একটা করা দরকার। জসিম বলছিলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের লম্বা মই তখনো আসে নাই। আমি ফায়ার সার্ভিসের ভাইদের বললাম পানির পাইপ নিয়ে আমি উপরের ওইঠা যামু।’
গেলেনও দোতলার কাছাকাছি। কিন্তু পানিভরা পাইপের এতটাই ওজন, যা জসিমের পক্ষে বেয়ে নিয়ে ওপরে ওঠা অসম্ভব হয়েছিল। এরই মধ্যে তিনি দেখতে পান একজন নারী তার ধরে ধরে নিচে নামার চেষ্টা করছেন। তিনি প্রায় সাততলা পর্যন্ত নেমে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র রাখার কাঠামোতে দাঁড়িয়েছেন। জসিম তাঁকে থামতে বললেন। তার বেয়ে যেন নিচে না নামেন, সে কথাটুকু তাঁকে জানালেন। জসিমের কথা শুনলেন সেই নারী। জসিম বলছিলেন, ‘জুতা খুলে ভবনের রেলিং বেয়ে আমি সাততলায় চলে যাই। আপুকে বললাম, আমি আপনাকে ধরে নামাব। আপনি আমার পায়ে (ঊরুতে) পা দিয়ে রেলিং শক্ত করে ধরেন।’
এরই মধ্যে পাশের ভবন থেকে একজন জানালা খুলে দেন। সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন আরও দু-একজন, যাঁদের মধ্যে ছিলেন জসিমের বন্ধু লোকমান। তখন তাঁরা সেই নারীকে কায়দা করে রেলিং ধরে পাশের ভবনের জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করান। শুধু সেই নারীকেই নয়, এভাবে আরও তিনজনকে উদ্ধার করেন জসিম, যাঁদের একজন ছিলেন শ্রীলঙ্কান নাগরিক। এই উদ্ধার তৎপরতার মধ্যেই তিনি প্রত্যক্ষ করেন মর্মান্তিক ঘটনা। জসিম বলছিলেন, ‘তিনজনকে উদ্ধারের পর দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার পাশ দিয়েই পরপর দুজন মানুষ নিচে পড়ে যান। তাকিয়ে দেখি তাঁরা মারা গেছেন।’ তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন জসিম উদ্দিন। ভেবেছিলেন, এই পরিণতি তাঁরও হতে পারত। মুঠোফোনের ওপাশ থেকে জসিম উদ্দিন বলছিলেন, ‘এখন ভাবি আমার দুই সন্তানের কথা, ভাইবোনদের কথা। সেদিন মারা গেলে কে দাঁড়াত আমার পরিবারের পাশে? আবার এ-ও ভাবি, আমি যা করেছি, ঠিক তখন মানুষ হিসেবে সেটাই তো করা উচিত ছিল।’