এবারের ইংকটোবার
এক তরুণীর মাথায় একটা মুরগি বসে আছে। মুরগিটার কাছে তরুণীর প্রশ্ন, ‘পক একে?’
মুরগির জবাব, ‘পক!’
তরুণীর দ্বিতীয় প্রশ্ন, ‘পক দুগুনে?’
মুরগি বলছে, ‘পক পক!’
এই ‘চিত্র’ দেখা গেল ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার এডওয়ার্ড এম কেনেডি (ইএমকে) সেন্টারে গিয়ে।
বিস্ময়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ অফিসে এসব হচ্ছেটা কী!’ বলে হতাশ হবেন না। আক্ষরিক অর্থেই এমন কিছু ‘চিত্রের’ প্রদর্শনী চলছে সেখানে। ‘ইংকটোবার বাংলাদেশ ২০১৮’ নামের এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে ২ নভেম্বর থেকে। শেষ হবে আজ শনিবার। চলবে বেলা তিনটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। এর আয়োজক আঁকিয়ে–দল ‘কার্টুন পিপল’। তবে এ বছর ইংকটোবার প্রদর্শনী শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। নভেম্বরের ১, ৪ ও ৫ তারিখে প্রদর্শনীটা হয়েছে চারুকলার ভেতরেই।
ইংকটোবার কী?
ইংকটোবার হলো অনলাইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক আঁকাআঁকির একটি চ্যালেঞ্জ। ২০০৯ সালে এর শুরু করেছিলেন ব্রিটিশ শিল্পী জেক পার্কার। তারপর থেকে বিশ্বের বহু দেশের আঁকিয়েরা বছরের অক্টোবর মাসজুড়ে কালি, তুলি দিয়ে প্রতিদিন একটি করে সাদাকালো ছবি আঁকার চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে শুরু করেন; অর্থাৎ ৩১ দিনে ৩১টি ছবি আঁকার চ্যালেঞ্জটাই হলো ইংকটোবার। ইংক + অক্টোবার = ইংকটোবার। ফেসবুক, টুইটার আর ইনস্টাগ্রামের এই সময়ে চ্যালেঞ্জটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে ইংকটোবার
শুরু করেছিলেন কার্টুনিস্ট মেহেদী হক। ২০১৫ সালের কথা বলছিলেন তিনি, ‘অনেক দিন ধরেই ইউটিউবে জেক পার্কারকে ফলো করতাম। একসময় দেখলাম, অনলাইনে ইংকটোবার নামে একটা চ্যালেঞ্জ শুরু করেছেন তিনি। তারপর আঁকান্তিসে (আঁকিয়েদের দল) আমরাও শুরু করলাম। ডিজিটাল এই সময়ে আমরা শিল্পীরা কালি, কলম দিয়ে কমই খাতা ভরাই। আমার নিজেরই জলরঙে হাত শক্ত হয়ে গিয়েছিল। ফলে ইংকটোবার শুরু হওয়ায় খুব লাভ হয়েছে। প্রতিবারই আমি ৩১ দিনে ৩১টি ছবি আঁকছি। এখন দেশের পেশাদার–অপেশাদার অনেক শিল্পীই ইংকটোবারে অংশ নিচ্ছেন।’
চারুকলায় ইংকটোবার
২০১৫ সালে মেহেদী হককে ইংকটোবারে অংশ নিতে দেখেছিলেন চারুকলার শিক্ষার্থী প্রসূন হালদার। ২০১৬ সাল থেকে তিনিও এতে অংশ নেন। আর ২০১৭ সালে কেবল অংশই নয়, সঙ্গী–সাথিদের যুক্ত করে দলটাও ভারী করে ফেলেন। প্রসূন বলছিলেন, ‘তখন ভাবছিলাম, ইংকটোবারকে শুধু অনলাইনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে না রেখে উৎসবে রূপ দেওয়া যায় কি না। তাই অল্প সময়ের মধ্যে ছয় বন্ধু মিলে ৩১টা করে ছবি এঁকে প্রদর্শনীটা শুরু করে ফেলি।’
আর এ বছর আরও বড় পরিসরে, চারুকলার ২৪ জন শিক্ষার্থীর ৭৪৪টি আঁকা নিয়ে প্রসূনরা আয়োজন করে ফেলেন ‘ইংকটোবার শোডাউন চারুকলা’। তাঁদের দেখাদেখি একই রকম প্রদর্শনীর আয়োজন করেন চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
কার্টুন পিপলের আয়োজন
‘ইংকটোবার বাংলাদেশ ২০১৮’ আয়োজন করতে গিয়ে মাথার ঘাম তো বটেই, অতিরিক্ত কিছু চুলও বোধ হয় ফেলতে হয়েছে তরুণ কার্টুনিস্ট ঐশিক, ইশমাম ও রাকিবকে! এই কার্টুনিস্টদের দল, অর্থাৎ কার্টুন পিপলের দলনেতা কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম বলছিলেন, ‘ওদের প্রস্তাবে এবং উৎসাহে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ইংকটোবার চ্যালেঞ্জটা বেশ কঠিন। তাই আমরা ভেবে দেখলাম, এটাকে একটা উৎসব হিসেবে উপস্থাপন করতে পারলে মন্দ হয় না। প্রসূনরা গত বছর থেকে শুরু করেছেন। তবে সেটা কেবল চারুকলার শিক্ষার্থীদের নিয়েই। আমরা সারা দেশের শিল্পীদের কাছে আঁকা আহ্বান করেছিলাম। জমা পড়েছিল এক হাজারের বেশি!’
সেখান থেকে অনেক কষ্ট করে ১৭৫টি ছবি বাছাই করতে পেরেছে কার্টুন পিপল। আর বাছাই করা স্কেচবুক ছিল ২৫টি। মোট শিল্পীর সংখ্যা ৭২। তন্ময় জানানোর পর দেয়ালে চোখ বুলিয়ে দেখা গেল, প্রদর্শনীতে অনেক নারী শিল্পীই অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন অনিন্দিতা ইসলাম একটি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ছোটবেলা থেকেই আঁকেন। কিন্তু মাঝে বেশ কয়েক বছর বলতে গেলে আঁকেনইনি। তাই ইংকটোবার তাঁর কাছে বড় জ্বালানি, ‘ইংকটোবার শুরু হওয়ার পর আমি আবার আঁকতে শুরু করেছি। এটা যতটা না চ্যালেঞ্জ, তার চেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা।’