বাংলাদেশের জন্য এমন খবরের শিরোনাম এখনো স্বাভাবিক: ‘রংপুরে টিসিবির পণ্য বিক্রি না করে গুদামে’ এবং ‘বদলগাছিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৪ বস্তা চাল জব্দ’। মঙ্গলবারের মাত্র দুটি খবর, আরও এ ধরনের খবর নিশ্চয়ই রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে ধন্যবাদ যে তাঁদের হস্তক্ষেপে দুটি অসাধু চক্র ধরা পড়েছে। দুটি ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন দুজন।
নওগাঁর বদলগাছিতে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির ১৪ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাড়ির মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ন্যায্যমূল্যে বিক্রির জন্য টিসিবির বিপুল পরিমাণ পণ্য রংপুর নগরের বাবুপাড়া এলাকার একটি গুদাম থেকে জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। খোলাবাজারে বিক্রি না করে এসব পণ্য অবৈধভাবে মজুত করা হয়েছিল। এ ঘটনায় মোহাম্মদ সামি নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। এর আগের দিন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় কালোবাজারির দায়ে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি হতদরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২৮৮ বস্তা চাল সরিয়ে নেন। তবে চালের বস্তাগুলো আজ আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।
এগুলো হয়তো হিমশৈলের চূড়ামাত্র। তলায় আরও অনেক অনিয়ম–দুর্নীতির ঘটনা থাকা সম্ভব। নিয়মিতভাবে গণমাধ্যমে এসব খবরের ছিটেফোঁটা প্রকাশিতও হচ্ছে। এতে করে যাঁরা অভাবী, তাঁদের জীবনে চাপ যেমন বাড়ছে, তেমনি জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ–আশঙ্কা। ত্রাণ ও সরকারি সহায়তার খাদ্য চুরির ঘটনায় কেবল দুস্থরা আরও সংকটে নিপতিতই হন না, সরকারের প্রতি আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকা মানুষেরা হতাশ হন। এ রকম সময়ে জনমনে আস্থা ধরে না রাখতে পারলে সামাজিক নৈরাজ্য বাড়বে বৈ কমবে না।
এ–জাতীয় দুর্যোগে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে কম দামে বিক্রি হওয়া চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের প্রধান ভরসা। সেখানেও যদি চুরি-দুর্নীতি চলে, তাহলে জীবনধারণ কতটা কঠিন হয়ে যায়? চোরদের সেই হুঁশ না থাকলেও সরকারি সংস্থাগুলোর এখন বাড়তি সতর্কতা ও নজরদারি দরকার। বিশেষ করে জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরদারি খুব জরুরি। এই ভয়াবহ দুর্যোগে যখন মানুষের নিজেদের সাহায্য করার জন্য বের হওয়ার সুযোগ কম, যখন বেসরকারি সাহায্যও অপ্রতুল, তখন সরকারই সবার প্রধান ভরসা। সরকারি সব সাহায্য কর্মসূচি তাই নিশ্ছিদ্র ও যথাযথ হওয়া বাঞ্ছনীয়।