নিকট অতীতে বেসিক ব্যাংকে যা ঘটেছে, তা সাধারণ অনিয়ম ও দুর্নীতির কাতারে ফেলা যায় না। এটা এক বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি। ব্যাংকটি এর আগে ভালোভাবে পরিচালিত হলেও সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাইয়ের আমলে কথিত ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। সে সময়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের চৈতন্যোদয় হয়নি। এমনকি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে তাঁকে ‘সসম্মানে’ প্রস্থান করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
সোনালী ব্যাংকে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর বেসিক ব্যাংকের লুটপাট ছিল বর্তমান সরকারের আমলে সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দেরিতে হলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেসিক ব্যাংকের নিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। এই তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে এবং অপরাধীরা শাস্তি পাবে, সেটাই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু সাবেক চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে দুদকের মামলার সুপারিশ সবাইকে দারুণভাবে হতাশ করেছে।
উল্লেখ্য, দুদক যে ব্যক্তিকে বেসিক ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে বাদ দিয়েছে, খোদ অর্থমন্ত্রী তাঁকে ‘ডাকাত’ বলে অভিহিত করেছিলেন। আবদুল হাই চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ব্যাংকটিতে যেসব আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে, তার দায় তিনি কোনোভাবে এড়াতে পারেন না। নাটের গুরুকে বাদ দিয়ে দুদক মামলা করলে অন্য অভিযুক্তরাও সহজেই ছাড় পেয়ে যাবেন। দুদক যদি সেটি না চায় তাহলে তাদের উচিত হবে সাবেক চেয়ারম্যানসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরাই যুক্ত ছিলেন, তাঁদের সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। দুদকের কাজ প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা, লোক দেখানো তদন্ত করে কাউকে ‘সৎ’ বলে সার্টিফিকেট দেওয়া নয়।