টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামের গ্যালারির নিচে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম গড়ে ওঠার খবরটি আমাদের বিস্মিত করেছে। যেখানে বসে হাজার হাজার দর্শক খেলা দেখেন, তার নিচে এ রকম গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম গড়ে ওঠে কীভাবে?
সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামের গ্যালারির নিচে ৯০টি বড় দোকান রয়েছে। সামনের দিকের দোকানগুলোতে ইলেকট্রনিকস, আসবাব ও ওয়েল্ডিং ব্যবসা গড়ে উঠেছে। কিন্তু পেছন দিকের (পশ্চিম দিক) বেশির ভাগ দোকান গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত ১০টি দোকানে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন কোম্পানির পরিবেশকেরা গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার এনে মজুত করে রাখেন। পরে এখান থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে সিলিন্ডারগুলো সরবরাহ করা হয়। স্টেডিয়ামের পাশেই আবাসিক এলাকা। এমন এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম থাকায় এলাকার মানুষ ভীতির মধ্যে রয়েছে।
গ্যাস সিলিন্ডার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অতিপ্রয়োজনীয় একটি বস্তু হলেও এর বিপদ সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। পত্রপত্রিকায় প্রায়ই সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের খবর প্রকাশিত হয়। সে বিবেচনায় স্টেডিয়ামের নিচে গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম গড়ে ওঠাটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। গুদামের কোনোটিতে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে স্টেডিয়াম ও আশপাশের বাড়িঘরের বাসিন্দাদের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪-এর অধীনে গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা ২০০৪-এর ৭০ ধারা অনুযায়ী গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি এবং অগ্নিনিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম মজুত রাখতে হবে। কিন্তু টাঙ্গাইলের এসব গুদামে কোনো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। সেদিক থেকে এভাবে গুদাম গড়ে তোলাটা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তবে শুধু টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে নয়, আইন অমান্য করে দেশের যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম গড়ে উঠেছে। এমনকি আবাসিক এলাকায় এলপি গ্যাসের গুদাম গড়ে উঠেছে। অনেক আবাসিক বাড়ির ফ্ল্যাটও গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এসব গুদামে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি না থাকায় আবাসিক এলাকায় ঝুঁকি বাড়ছে।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, টাঙ্গাইল স্টেডিয়াম মার্কেটের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী জনবহুল এই এলাকা থেকে গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম উচ্ছেদের জন্য স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু এখনো সেই দাবি পূরণ হয়নি। এ ক্ষেত্রে কোনো গড়িমসি কাম্য নয়। সরকারের বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনেরও এ ব্যাপার দায়দায়িত্ব রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। শুধু টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামের নিচের এই গুদাম অপসারণ নয়, আর কেউ যাতে এভাবে অবৈধভাবে গ্যাস সিলিন্ডারের কোনো গুদাম গড়ে তুলতে না পারে, সেটাও তাদের দেখতে হবে। নিয়মনীতি ছাড়া কেউ এভাবে সিলিন্ডারের গুদাম গড়ে তুললে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।