ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রীনিবাসে এ ধরনের নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, গুরুতর নৈতিক অবক্ষয়ের কথাও মনে করিয়ে দেয়। গত জানুয়ারিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী পদে ৬০ লাখ টাকার নিয়োগ–বাণিজ্যের অভিযোগ এসেছিল; যার সঙ্গে জড়িত ছিল ছাত্রলীগেরই কতিপয় নেতা-কর্মী। এ নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ মারামারিতেও লিপ্ত হয়েছিল।
রোকেয়া হলে যাঁদের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা হলেন হল সংসদের ভিপি ইসরাত জাহান, জিএস সায়মা প্রমি, হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তার, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী ইসলাম ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপসম্পাদক ইশাত কাশফিয়া। গত ২৫ জুলাই রোকেয়া হলে চারটি পদে কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা।
গত মঙ্গলবার হলের কয়েকজন ছাত্রী প্রথমে সংবাদ সম্মেলন করে ২১ লাখ টাকা নিয়োগ–বাণিজ্যের অভিযোগ পেশ করেন। পরে তাঁরা উপাচার্যের কাছে প্রতিকার চেয়ে স্মারকলিপি দেন। এ ছাড়া ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান অভিযোগ তদন্ত করে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। অন্যদিকে হলের প্রাধ্যক্ষ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। এর আগে প্রাধ্যক্ষ অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটিও
করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগকারীরা হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটি মানতে নারাজ। তাঁরা মনে করেন, হল প্রশাসনের যোগসাজশেই নিয়োগ–বাণিজ্য হয়েছে। অভিযোগকারীরা সংবাদ সম্মেলনে হলের এক কর্মচারী ও এজিএস ফাল্গুনীর মধ্যকার কয়েকটি অডিও কল রেকর্ডের ক্লিপ উপস্থাপন করেছেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যদি এতটাই নিষ্কলুষ হবেন, তাহলে তাঁরা কেন এক অভিযোগকারী ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করলেন? অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু প্রাধ্যক্ষের আদেশ পেয়ে কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিতে এসে এক ছাত্রী কেন লাঞ্ছিত হলেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও ছাত্রীদের আরও অনেক আবাসিক হল আছে। সেসবের কোনোটির বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ না উঠে কেন রোকেয়া হলের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের নালিশ এল, তা–ও খতিয়ে দেখা দরকার। সাধারণ ছাত্রীদের অভিযোগ, হল প্রশাসনের আলাদা অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা বরাবর ছাত্রলীগের হয়ে ও ছাত্রলীগের স্বার্থে কাজ করে। এই অভিযোগ শুধু রোকেয়া হল নয়, কমবেশি সব আবাসিক হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
আশা করা গিয়েছিল ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো লক্ষণ নেই। গণরুমগুলো এখনো সরকার–সমর্থক ছাত্রসংগঠনটির নিয়ন্ত্রণে। তবে নিয়োগ–বাণিজ্যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে পড়া আরও গুরুতর অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি আমলে নিয়ে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক আকতার কামালের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে এবং সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে।
কিন্তু সত্য উদ্ঘাটিত হবে কি না এবং অপরাধীরা শাস্তি পাবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহমুক্ত হওয়া যাচ্ছে না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নিয়োগ–বাণিজ্যের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ঈদুল ফিতরের আগে রিপোর্ট জমা দিলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে এত লুকোচুরি কেন? আশা করি, রোকেয়া হলের ঘটনায় কমিটি বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দেবে এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবে। এ ধরনের ঘটনা শুধু হল প্রশাসন নয়, পুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।