কোরবানির ঈদের আগে ছাগলবোঝাই একটি ট্রাক ছিনতাই করে পাঁচ ব্যাপারীকে ১৩ ঘণ্টা জিম্মি করে রাখার অভিযোগে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি যেমন গুরুতর, তেমনি লজ্জাজনকও। মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি অভিযোগ অস্বীকার করলেও এই ঘটনায় যাঁরা বমাল ধরা পড়েছেন, তাঁরা ছাত্রলীগেরই কর্মী।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ওই ব্যবসায়ীরা যশোর থেকে ২১২টি ছাগল নিয়ে ঢাকায় এলে ওয়াকিটকিধারী ছাত্রলীগ কর্মীরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বলে দাবি করেন এবং ছাগল বহনকারী ট্রাক আটক করে মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লার একটি ক্লাবঘরে নিয়ে যান। তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ছাগলপ্রতি ৫০ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ১৩ ঘণ্টা জিম্মি থাকার পর সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে টেলিফোনে তাঁর ভাইকে খবর দেন। এরপর ওই ভদ্রলোক বিষয়টি র্যাবকে জানালে এলাকায় টহলরত র্যাব সদস্যরা বাবর রোডের জহুরী মহল্লায় গিয়ে ২১২টি ছাগলসহ ট্রাকটি জব্দ ও ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করেন।
র্যাব ঘটনাস্থল থেকে ইয়াসির আরাফাত (২৮), জাহিদুল ইসলাম (২৯) ও মো. রায়হান (২৭) নামে ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে আটক করলেও অন্যরা পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্রলীগের মোহাম্মদপুর থানা সভাপতি মুজাহিদ আজমি ওরফে তান্না ছিলেন বলে থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়। তবে ছাত্রলীগের আজমির দাবি, ডেঙ্গু–সচেতনতার জন্য ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তাতে ব্যবহারের জন্য তাঁরা ওয়াকিটকিগুলো ভাড়া নিয়েছিলেন। এই দাবির কোনো সত্যতা নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধী ধরার জন্য যে ওয়াকিটকি ব্যবহার করে, তাদের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ তা ব্যবহার করতে পারে না।
এত দিন ছাত্রলীগের নানা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। এবার সরাসরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ভাঙিয়ে ওয়াকিটকি ব্যবহার করে যে কাজটি তাঁরা করলেন, সেটি পেশাদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এরপরও ছাত্রলীগের সভাপতি যেভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন, তাতে অনুশোচনা প্রকাশ পায়নি।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই ঘটনায় ব্যবসায়ীদের সমূহ ক্ষতি হয়েছে। তাঁরা ছাগলগুলো বিক্রি করতে পারেননি। ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আশা করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ তদন্ত করবে। তবে শুধু ছিনতাইয়ের চেষ্টার মামলা হলেই হবে না; তাঁরা যে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি ব্যবহার করেছেন, সেই মামলাও একই সঙ্গে চলতে হবে। যাঁরা চাঁদা আদায় করতে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করেছেন, তঁাদের উপযুক্ত শাস্তি হতে হবে। অন্যথায় এই সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে এ রকম চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।