বখাটেদের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে এবং অশ্লীল ছবি তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকির মুখে পটুয়াখালীতে এক মাদ্রাসাছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা এই সত্য সামনে এনেছে যে, ইভ টিজিং বা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা প্রায় এক ব্যাধির রূপ ধারণ করেছে এবং দিনে দিনে তা বেড়েই চলেছে।
শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের খালগোড়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী স্বর্ণা আক্তারকে শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া ও আসার সময় প্রায়ই বখাটেরা উত্ত৵ক্ত করত। একপর্যায়ে তারা স্বর্ণার অশ্লীল ছবি তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে স্বর্ণা। অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার আগে সে একটি চিরকুটে চার বখাটের নাম এবং তাদের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা লিখে বিচার চেয়েছে।
বখাটেরা এই বেপরোয়া সাহস কোথা থেকে পায়? তারা দীর্ঘদিন ধরে এই মাদ্রাসাছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। কিন্তু কেউ তাদের বাধা দেয়নি কেন? সবাই কি নির্লিপ্ত? নাকি বখাটেরা এতই ক্ষমতাবান যে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে কেউ সাহস পায়নি? আমরা বিভিন্ন সময় লক্ষ করেছি, এসব অপকর্ম যারা করে, তারা কোনো না কোনোভাবে প্রভাবশালী কোনো মহলের প্রশ্রয়-পৃষ্ঠপোষকতা পায়। এটা খুবই দুঃখজনক।
প্রায় প্রতিদিনই দেশে এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। বখাটেদের দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছে প্রায় সব বয়সের নারী। কেউ কেউ অতিষ্ট হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। অনেকে মানসিক বৈকল্যের শিকার হচ্ছে। স্কুল–কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে কেউ কেউ। গ্রামাঞ্চলে কিশোরীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার এটাও একটা কারণ।
বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো নারীকে উত্ত্যক্ত করলে সেই ব্যক্তি তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে। দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ কোনো নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কথা, অঙ্গভঙ্গি বা কোনো কাজ করে, তাহলে দায়ী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সাজা বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। দণ্ডবিধিতে থাকলেও উত্ত্যক্ত করার জন্য শাস্তি পাওয়ার ঘটনা খুবই কম।
আমরা মনে করি, শাস্তির নজির নেই বলে নারীদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা বেড়েই চলেছে। তাই বখাটেদের উৎপাত বন্ধ করার জন্য এসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আইনে এই দণ্ড যথেষ্ট না হলে আরও কঠোর দণ্ডের বিধান করতে হবে। এ বিষয়ে সমাজের মানুষকেও সোচ্চার হতে হবে। নারীদের উত্ত্যক্ত করার বিরুদ্ধে পাড়া–মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।