গত বছরের ৪ আগস্ট সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালানোর পর সরকারের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার এক বছর পার হওয়ার পরেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়া দেশের জন্য লজ্জার।
মার্শা বার্নিকাট মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ঢাকায় আসেন ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এবং চার বছর এখানে দায়িত্ব পালন শেষে গত বছরের ২ নভেম্বর দেশে ফিরে যান। কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে এই মার্কিন কূটনীতিক রোহিঙ্গা সংকটকে ওয়াশিংটনের কাছে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। মার্শা বার্নিকাট গত বছরের ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় যান । সেখানে নৈশভোজ শেষে ফেরার পথে মোটরসাইকেল আরোহীসহ একদল সশস্ত্র লোক তাঁর গাড়িতে হামলা চালায়।
কিন্তু এক বছর পার হওয়ার পরও তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়া কিংবা অপরাধী ধরা না পড়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাত্র সাড়ে চার মাস আগে হামলার ঘটনাটি ঘটে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা স্থানীয় সাংসদের অনুসারী এবং সরকারি দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, মোটরসাইকেলের নম্বর যাচাই করে কিছু লোককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখনো তদন্ত চলছে। যেখানে কিছু লোক চিহ্নিত হলো, সেখানে তদন্ত এগোচ্ছে না কেন? হামলাকারীরা সাংসদের অনুসারী কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী কি না, সেটি দেখার দায়িত্ব তাঁদের নয়। তাঁদের কাজ হলো হামলাকারীদের ধরে বিচারে সোপর্দ করা।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র সরকার মার্শা বার্নিকাটের গাড়ির ওপর হামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বাংলাদেশের কাছে জানতে চেয়েছে। তারা এ বিষয়ে কার্যকর ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়ও মার্কিন কর্মকর্তারা ওই হামলার ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় ফিরে ওই হামলার তদন্ত নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলেছেন।
ইতিমধ্যে এক বছর পার হয়ে গেছে। একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা ঘটনাকে সাধারণ অপরাধ হিসেবে দেখলে ঠিক হবে না। এর সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও মর্যাদার প্রশ্নটিও জড়িত। অতিথিপরায়ণ হিসেবে বহির্বিশ্বে যে বাংলাদেশের সুনাম আছে, সেই বাংলাদেশকে যারা লজ্জায় ফেলেছে, তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। সরকার একজন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে পারেনি। অন্তত হামলাকারীদের শাস্তি দেওয়া হোক। এই অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি না হলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কী হবে, তা নিশ্চয়ই সরকারের নীতিনির্ধারকদের অজানা নয়।