সময় এবং জন্ম—কোনোটাই থেমে নেই বিশ্বের সর্বোচ্চ জনঘনত্বের এই দেশে। এবং দেশে নেই কার্যকর জনসংখ্যা নীতি ও সচেতনতা অভিযান, নেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ, লোকবল ও অবকাঠামো। এত ‘নেই’-এর মধ্যে স্থবির হয়ে আছে জনসংখ্যার ভার সহনীয় করার সরকারি কর্মসূচি। অথচ বলা হয়, জনসংখ্যাই নাকি এক নম্বর জাতীয় সমস্যা!
গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোয় এ-বিষয়ক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, কিশোরী বিবাহ এবং কিশোরীদের মা হওয়াই অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। ভাবা যায়, এখনো এই দেশে ৬৬ শতাংশ নারীর বিয়ে হয় কিশোরী বয়সে। অন্য সমস্যা বাদ দিলেও, ওইটুকু বয়সে যে মেয়েটির দৌড়ঝাঁপ করে খেলার কথা, বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা, সেই মেয়েটিকে নিতে হচ্ছে সংসার ও সন্তান প্রজননের মতো গুরুদায়িত্ব! এ কারণেই এসব মেয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়, বড় অংশেরই স্বাস্থ্য হয়ে পড়ে নাজুক, জীবনের স্বাভাবিক সুযোগ থেকে তারা হয় বঞ্চিত। এর কারণ, সরকারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রচার-প্রচারণা ও জন্মনিয়ন্ত্রণের সুযোগের বাইরে রয়ে যাচ্ছে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ। নিরক্ষর ও হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে এর কোনো আবেদনই নেই! অথচ দেশে গণমাধ্যমের বিপুল বিস্তার হয়েছে।
নতুন এ সুযোগ কাজে লাগানোর তেমন চেষ্টাও সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আছে বলে মনে হয় না। রেডিও-টেলিভিশন-স্যাটেলাইট চ্যানেল, মুদ্রণমাধ্যম ও বিলবোর্ডের মাধ্যমেই সাধারণত জনসংখ্যা সমস্যা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রচার চালানো হয়। কিন্তু এসব প্রচারণা এতই অপ্রতুল যে, তা অজস্র বিজ্ঞাপন ও বিলবোর্ডের ভিড়ে হারিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসংখ্যাকে সম্পদ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। কথাটি সত্য। বিশ্বের ধনী কয়েকটি দেশে জন্মহার কমে যাওয়ায় জনসম্পদের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় জনসম্পদের প্রাচুর্য সুবিধার বদলে অসুবিধাই তৈরি করছে বেশি। দেশ যেহেতু বাড়ছে না, সেহেতু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতেই হবে। বাংলাদেশ জনসংখ্যা নামক একটি টাইম বোমার ওপর বসে আছে। এবং এই টাইম বোমার বিস্ফোরণের ধাক্কা কমিয়ে আনার সময়ও দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। জনসংখ্যা কমানোয় জন্মনিয়ন্ত্রণ ছাড়া তাই কোনো উপায় নেই।