আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন থেকে কী ফল মিলবে, তা নিয়ে অনেকের সংশয় আছে। আগের সম্মেলনগুলোতে উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দুনিয়াকে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিপদ মোকাবিলা বাবদ যে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণ না করায় এই সংশয়ের যৌক্তিকতা সামনে চলে আসে।
ওই তহবিলের বাইরে যা-ও বরাদ্দ পাওয়া যায়, তার পেছনে নানা রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করে। যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, সে বেশি বরাদ্দ পাবে—এই সরল নিয়ম মেনে বরাদ্দ মেলে না। এর পেছনে তদবির, ‘ধরাধরি’, রাজনীতি—নানা কিছু কাজ করে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, জলবায়ু নিয়ে দেশীয় পরিসরেও একই অবস্থা চলছে। সংবাদমাধ্যমে এসেছে, দেশে এ মুহূর্তে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে খুলনা বিভাগের অবস্থান সবার ওপরে। সেই হিসাবে এই বিভাগে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়ার কথা। কিন্তু বরাদ্দ ও গৃহীত প্রকল্পের সংখ্যার দিক থেকে এই বিভাগ বেশ পিছিয়ে রয়েছে।
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের কচুবুনিয়া ও দাউনিয়াফাঁদ গ্রামের বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ে ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের দাবির মধ্যে রয়েছে, ভূমিহীনদের জন্য খাসজমির বন্দোবস্ত করা, বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা, নদীভাঙন রোধ করা, বৃক্ষ রোপণ করা, লবণসহিষ্ণু ফসল উৎপাদন, পানীয় জলের জন্য গভীর টিউবওয়েল স্থাপন করা ইত্যাদি। এই দুটি গ্রামের মতো ঝুঁকির মুখে রয়েছে খুলনা বিভাগের বেশ কিছু অঞ্চল। এর মধ্যে সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি এলাকায় এ ঝুঁকির মাত্রা ভয়াবহ।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস থেকে পর্যাপ্ত অর্থায়ন না পাওয়ায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) গঠন করে সরকার। এই তহবিল থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য বিভাগভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ১৯৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুধু খুলনা বিভাগে ব্যয় হয়েছে ২৩৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা বিভাগভিত্তিক প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয়ের মাত্র ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এই তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত গৃহীত বিভাগভিত্তিক প্রকল্পের সংখ্যা ৬২৪। এর মধ্যে শুধু খুলনা বিভাগে গৃহীত প্রকল্পের সংখ্যা ৬০, যা বিভাগভিত্তিক গৃহীত মোট প্রকল্পের এক-দশমাংশের কম। টিআইবির অভিযোগ, জলবায়ু তহবিল দিয়ে অধিকাংশ প্রকল্পই নেওয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়।
জলবায়ুর অর্থায়ন যৌক্তিকভাবেই হওয়া দরকার। যাদের প্রভাব বেশি, সেসব অঞ্চলে বেশি অর্থ যাবে; এটি কাম্য হতে পারে না। প্রয়োজনীয়তা অনুসারেই এসব অঞ্চলে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। অন্যথায় এ অঞ্চলের মানুষজনকে জলবায়ু দারিদ্র্যের ভয়াবহতা থেকে সরিয়ে আনা যাবে না।