দুই বিদেশি নাগরিকের রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে যখন দেশে-বিদেশে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, সেই সময় দেশের প্রধান বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে নিরাপত্তাব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটি ধরা পড়া বাড়তি উদ্বেগের বিষয়।
উড়োজাহাজের টিকিট ও বোর্ডিং পাস ছাড়াই দুটি নিরাপত্তাচৌকি ও চারটি নজরদারির স্থান পার হয়ে এক তরুণী কীভাবে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে উঠতে পারলেন, তা একটা গুরুতর প্রশ্ন। সৌভাগ্যের বিষয়, ফ্লাইট উড্ডয়নের আগে কেবিন ক্রুদের চূড়ান্ত যাত্রী গণনার সময় ওই তরুণী ধরা পড়েছেন এবং বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যদের তল্লাশিতে তাঁর সঙ্গে বিপজ্জনক কিছু পাওয়া যায়নি। এও রক্ষা যে তিনি কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে উঠে পড়েননি।
বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে সেই সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা নিয়োজিত ছিলেন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁদের এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে, ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষের কাছেও লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছে। ব্যাখ্যা, কৈফিয়ত বা অজুহাত যা-ই দেখানো হোক না কেন, এ ঘটনায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা যে বিরাট প্রশ্নের মুখে পড়েছে, সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল বলে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে হেলাফেলা করার কোনোই সুযোগ নেই। নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে যোগ্যতা-দক্ষতার অভাব ও গাফিলতি প্রমাণিত হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটতে না পারে।
বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেছেন, টার্মিনালের ভেতরে প্রথম দুটি তল্লাশি পয়েন্টে দায়িত্ব পালনকারী নিরাপত্তাকর্মীদের পেশাদারির ঘাটতি আছে। সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক নুরুল ইসলাম মন্তব্য করেছেন, এ ঘটনায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থায় দুর্বলতা ধরা পড়েছে। তাহলে এখন কর্তব্য হচ্ছে উল্লিখিত নিরাপত্তাকর্মীদের পেশাদারির ঘাটতি ও নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় টার্মিনালের নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে নিশ্ছিদ্র করতে হবে। এটা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।