নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভটভটিচালক ইদ্রিস আলীর পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল ও কালি উৎপাদনের খবরটি আমাদের আশান্বিত করেছে। এতে পলিথিনের দূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা ও স্বল্পমূল্যে দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মোবাইল ফোনে এক ভিডিও দেখে ইদ্রিস আলী পলিথিন থেকে তেল ও কালি তৈরির উদ্যোগ নেন। তিনি বিশেষ পদ্ধতিতে সাত কেজি পলিথিন পুড়িয়ে প্রায় পাঁচ লিটার পেট্রল-জাতীয় পদার্থ ও আধা লিটার ডিজেল উৎপাদন করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি ছাপার কাজে ব্যবহার করা যায়, এমন কালি উৎপাদন করেছেন। ইদ্রিস আলীর উদ্ভাবিত জ্বালানি তেল ব্যবহার করে ইতিমধ্যে মোটরসাইকেল চালানো হয়েছে এবং ছাপাখানায় কালি ব্যবহার করে সুফল পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে দিন দিন পলিথিনের ব্যবহার বাড়ছে। আমাদের চারপাশে জমছে পলিথিনের বর্জ্য, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। পলিথিন পচনশীল নয়, তাই মাটি হারাচ্ছে তার উর্বরতা শক্তি। পলিথিনের কারণে খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছে। এর প্রভাবে বন ও জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। তাই পলিথিন পুড়িয়ে তেল ও কালিতে রূপান্তরের বিষয়টি নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে বলেই আমরা মনে করি।
তবে ইদ্রিস আলী প্রথম নন, এর আগে জামালপুরের তরুণ তৌহিদুল ইসলাম পরিত্যক্ত পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল, কালি ও এলপি গ্যাস উৎপাদন করেন। তাঁর এই উদ্ভাবনের জন্য তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত ‘উদ্ভাবকের খোঁজে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। পুরস্কার হিসেবে তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে পাঁচ লাখ টাকা এবং প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য আরও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে তৌহিদুল জামালপুর শহরে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করেছেন। সেখান থেকে ১০৫ লিটার জ্বালানি তেল, ১৫-২০ লিটার এলপি গ্যাস এবং কয়েক লিটার ছাপার কালি উৎপাদন করা হয়েছে।
দূষণ প্রতিরোধ ও ক্রমবর্ধমান তরল জ্বালানির চাহিদা মেটাতে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি ও ভারতে প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে (প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে) তৈরি হচ্ছে ডিজেল ও কেরোসিন। বাংলাদেশেও যে এটা করা সম্ভব, তা ইদ্রিস আলী ও তৌহিদুল প্রমাণ করেছেন। এখন সরকারের উচিত হবে তাঁদের এ উদ্ভাবকদের প্রণোদনা দেওয়া। ইদ্রিস আলী ও তৌহিদুলের মতো যদি আরও অনেকে পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল, কালি ও গ্যাস উৎপাদনে এগিয়ে আসেন এবং তাঁরা যদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পান, তাহলে গোটা দেশের চিত্রটাই পাল্টে যেতে পারে। সরকার বৃহত্তর পরিসরে পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদনের কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে পারে।