ভোক্তার অভিযোগ কেন্দ্র

আইনভঙ্গের প্রতিবাদ করলে ললাটে পুষ্পস্তবকের বদলে ইষ্টকস্তবক বর্ষণের আশঙ্কা সব সময়ই প্রবল। ফলে অল্প কিছু মানুষ বাদে প্রায় সবাই আইন লঙ্ঘনকে মনে মনে ধিক্কার দেয়, কিন্তু প্রতিবাদ করার মতো ঝুঁকিতে যেতে চায় না। তার চেয়েও ভয়ানক বিষয় হলো কিছু অন্যায় যে শাস্তিযোগ্য এবং সেই অন্যায়ের শাস্তিবিধানে যে সুনির্দিষ্ট আইন আছে, বহু লোক তা জানেই না।

একজন ভোক্তা বা সেবাগ্রহীতা পয়সা খরচ করে পণ্য কেনেন বা সেবা গ্রহণ করেন। যথাযথ মূল্য দেওয়ার পর যথাযথ পণ্য বা সেবা না পেলে তিনি প্রতারিত বোধ করেন। কিন্তু এর প্রতিকার কোথায় চাইতে হয় বা আদৌ এর প্রতিকার আছে কি না, তা বহু ভুক্তভোগীরই অজানা। পণ্যের মোড়কে খুচরা বিক্রয়মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা না থাকা, পণ্য ও সেবার মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্য দাবি করা, ভেজাল পণ্য বিক্রি, ওজন পরিমাপক যন্ত্রে এবং দৈর্ঘ্য পরিমাপক ফিতায় কারচুপি করা, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করা যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তা বহু ভোক্তাই জানেন না। এক জরিপে দেখা গেছে, এখনো ৩৬ দশমিক ২০ শতাংশ মানুষ জানে না দেশে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণমূলক একটি আইন আছে। ৪৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ মানুষ জানে না ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে একটি অধিদপ্তর আছে।

মানুষের কাছে এই তথ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত আছে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটি ভোক্তাদের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সহায়তার জন্য একটি আশাপ্রদ উদ্যোগ নিয়েছে। তারা চালু করেছে ‘ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র: কল সেন্টার’। ভোক্তা কোনো পণ্য বা সেবা কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই কল সেন্টারে ফোন করে অভিযোগ করতে পারবেন। একজন ভোক্তা অভিযোগ করলে ১৫ দিনের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় অভিযোগের প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা করবে কল সেন্টার। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও ভোক্তার সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তারা চালু করেছে অনলাইন পত্রিকা ‘ভোক্তাকণ্ঠ ডটকম’।

এই উদ্যোগ বাংলাদেশের ভোক্তা অধিকার পরিস্থিতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা যায়। এখন দরকার সরকারের আন্তরিকতা। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন নীতিতে দাঁড়িয়ে প্রশাসন কাউকে ছাড় না দিলেই পরিস্থিতি বদলাবে। শরীরের কোনো অঙ্গে পচন ধরলে চিকিৎসক প্রথমে তা সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ সংশোধনের প্রয়াস। এই প্রয়াস সফল না হলে শরীরের স্বার্থেই সেই অঙ্গ কেটে ফেলা হয়। এটি প্রতিহিংসা নয়। দুঃখের হলেও, আপাতনিষ্ঠুর হলেও এই পথ অবলম্বন করতে হয়। যে মৃত্যু বহু জীবনবিনাশের আশঙ্কা হ্রাস করে, তার প্রতিপাদন তিক্ত, কিন্তু মাঙ্গলিক। কোটি কোটি ভোক্তাকে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে সরকারকে এখন সেই চিকিৎসকের ভূমিকায় নামতেই হবে।