বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পিএইচএ ভবন, সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বাসভবন ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ করেছে। হামলা হয়েছে কয়েক দফায়: বৃহস্পতিবার সকালে হামলাকারীরা সম্মেলন কেন্দ্রের প্রবেশপথের মূল ফটক ভেঙে ফেলে; শুক্রবার সকালে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে, লুটপাট করে এবং লোকজনকে শারীরিকভাবে আঘাত করে। একই দিন বেলা সাড়ে তিনটায় হামলা চালানো হয় গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসে। প্রকাশ্য দিনের আলোয় কয়েক শ লোক ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের স্থাপনায় হামলা চালায়, হামলার পরেও তারা ওই এলাকা ঘেরাও করে রাখে। এ থেকে প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশে আইনকানুন বলে কি কিছু নেই? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেও কি কিছু নেই?
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক প্রথম আলোকে বলেছেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সম্মেলন কেন্দ্রসহ হোস্টেল ও বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তাঁরা কোনো অভিযোগ পাননি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ সম্মেলন কেন্দ্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা ঘটনার সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে জানিয়ে কোনো সহায়তা পাননি। থানার ওসি যদি বুঝিয়ে থাকেন যে প্রতিষ্ঠানটি কোনো মামলা করেনি বলে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, তাহলে সেটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরের বিষয়। কিন্তু যখন হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, লোকজনকে বাসা ও হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া ও আঘাত করার ঘটনাগুলো ঘটছিল, সেই বিপদের সময় আক্রান্ত প্রতিষ্ঠানটির লোকজনকে নিরাপত্তা দিতে ছুটে যাওয়া ছিল পুলিশ বাহিনীর পেশাগত দায়িত্ব। এমনকি ভাঙচুর–লুটপাটের পর হামলাকারীরা যখন এলাকাটি ঘিরে রেখেছিল, তখনো পুলিশ অপরাধস্থলে যায়নি।
প্রায় দুই শ সশস্ত্র দুর্বৃত্ত সংঘবদ্ধভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, অথচ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে নির্বিকার—এটা আইনশৃঙ্খলার অভাবজনিত সাধারণ ফৌজদারি অপরাধ নয়। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানা–পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক থাকতে পারে। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে দ্য কটন টেক্সটাইল ক্র্যাফট নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের মামলা করার এক দিন পরেই হামলাটি হয়েছে। যদিও এটাকে দুই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমি–বিরোধের ফল বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, তবু এমন আলামতও যথেষ্ট রয়েছে যে সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত নাগরিক সমাজের নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ অন্য স্থাপনাগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে থাকতে পারে। তা যদি হয়, তবে আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।
আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান—এই সাংবিধানিক মৌল চেতনার প্রতি সরকারের শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।