সরকার সব ব্যবসায় লোকসান দিয়ে এখন সেটি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য জ্বালানি তেল বাবদ ভোক্তাদের পকেট কেটে চলেছে। জ্বালানি তেল এমন একটি পণ্য, যার প্রভাব প্রত্যেক মানুষের ওপর পড়ে। দাম বাড়লে ক্রেতাদের যেমন গাঁট থেকে বাড়তি অর্থ গুনতে হয়, তেমনি যাঁরা সরাসরি পণ্যটি কেনেন না, তাঁরাও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে গেলেও সরকার নানা অজুহাতে দেশীয় বাজারে তা অপরিবর্তিত রেখেছে পুরোনো লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার জন্য।
সরকারের অস্বাভাবিক মুনাফাসরকারের লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার বহু মাধ্যম আছে। প্রথমত, সরকারি কাজে যে ব্যাপক অপচয় ও দুর্নীতি হয়, সেটি বন্ধ বা হ্রাস করেই সরকার লোকসান পুষিয়ে নিতে পারে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম পড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় বাজারে দাম কমানোর দাবি মোটেই অযৌক্তিক নয়। কিন্তু সেই যৌক্তিক দাবিটিও সরকার মানতে চাইছে না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট ঘোষণার সময় জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের কথা বলে সেই অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হচ্ছে, আপাতত দাম কমানো হচ্ছে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে জ্বালানি তেলের দাম না কমানোয় বাড়তি বোঝা জনগণকেই বহন করতে হচ্ছে। কেননা, জ্বালানি তেলের দাম বেশি হলে পরিবহন, সেচ ও বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়, যার অভিঘাত এসে পড়ে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের জীবনে। বিপিসি লোকসানের যে হিসাব দিয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে কয়েক বছর লেগে যাবে। তাহলে কি দেশবাসীকে সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে?
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা এ বি আজিজুল ইসলাম জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়, তথা কমানোর কথা বলেছেন। অর্থমন্ত্রীও ক্ষমতায় না থাকলে একই কথা বলতেন বলে ধারণা করি। একটি জনমুখী সরকার কোনোভাবেই জনস্বার্থের বিপক্ষে যায়, এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। জনগণের ক্ষতি করে সরকারের লাভ করার এই নীতি পরিহার করতে হবে।