বাংলাদেশে এখন নির্বাচনের আবহ। দেশের নেতৃত্বভার পরের মেয়াদে কার হাতে যাবে, তা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। এরই মধ্যে বাংলাদেশের জন্য সুখবর নিয়ে এলেন শেখ মোজাহিদুর রহমান। সদ্য সমাপ্ত আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে অনুমিতভাবেই জর্জিয়া স্টেট সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পেল আমেরিকার রাজ্য পর্যায়ের আইনসভায় প্রথম বাংলাদেশি প্রতিনিধি।
গত ২২ মে ডেমোক্রেটিক দলের প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়েই শেখ রহমানের স্টেট সিনেটর হওয়াটা একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। জর্জিয়ার ডিস্ট্রিক্ট-৫ আসনে রিপাবলিকান দলের কোনো প্রার্থী ছিল না।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আমেরিকার দরজা খোলা হয়েছিল ১৯৭২ সালে। সেই সময় থেকে বহু বাংলাদেশি বিভিন্ন পন্থায় আমেরিকায় গিয়েছেন, যাঁদের অনেকেই গড়েছেন স্থায়ী আবাস। আমেরিকার পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ (২০১৪ সাল) তথ্যমতে, আমেরিকায় বর্তমানে বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতের সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি। চার বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা নিশ্চিতভাবে আরও বেড়েছে। কিন্তু আমেরিকার বিভিন্ন পর্যায়ের আইনসভায় বাংলাদেশি প্রতিনিধিত্ব একেবারেই ছিল না। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ২০১০ সালে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য নির্বাচিত হওয়া হ্যানসেন ক্লার্কের কথা উঠতেই পারে। কিন্তু ক্লাক৴ থেকে রহমান অনেকটাই এগিয়ে, নিজের শৈশব বাংলাদেশে কাটানোর কারণেই।
শেখ রহমানের জনপ্রতিনিধি হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে ২০০৮ সালে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াটা। প্রবাসজীবনের প্রথম ধাপে অন্য অনেকের মতো বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েও তিনি কখনো দমে যাননি। তাঁর নেতৃত্বগুণ তাঁকে ঠেলে দিয়েছে সামনের দিকে। আরও বেশি দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে মনোযোগী হয়েছেন তিনি। কথা বলেছেন সবার হয়ে। বর্ণবাদ, অভিবাসী অধিকার, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা তাঁকে সবার নেতা হওয়ার পথ করে দিয়েছে।
মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশের অনেকেই সক্রিয়। ড. নীনা আহমেদসহ অনেকের নামই বলা যাবে, যাঁদের জনপ্রতিনিধি হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচন ঘিরে এমন কয়েকজনকে নিয়ে বেশ আশার সঞ্চারও হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি পর্যায়ে গিয়ে তাঁদের রথ সাময়িকভাবে থমকে গেছে। সাময়িক বলা হচ্ছে, কারণ, এটা নিশ্চিত যে আমেরিকার রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবেই সাফল্যের মুখ দেখবে। অপেক্ষা শুধু সময়ের। এ ক্ষেত্রে শেখ রহমানের রাজনৈতিক অভিযাত্রাটি সবার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করবে।
বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্যে যাঁরা মূলধারার রাজনীতিতে রয়েছেন, তাঁদের জন্য শেখ রহমানের এই রাজনৈতিক পথটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি যে উদাহরণটি সৃষ্টি করলেন। তাঁর এ উদাহরণকে সামনে রেখে আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে আরও বেশি বাংলাদেশি সক্রিয় হওয়ার আত্মবিশ্বাস পাবেন, এটাই শেখ রহমান ও বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় অর্জন।