ধর্ষণের শিকার নারীকে ছুরি মেরে পুড়িয়ে হত্যা
ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যে হায়দরাবাদের এক নারী পশুচিকিৎসককে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যার বীভৎস ঘটনার রেশ মুছতে না মুছতে আবার একই ঘটনা ঘটল। এবারের ঘটনাস্থল উত্তর প্রদেশ রাজ্যের উন্নাও। সেখানে ধর্ষণের শিকার নারীকে পাঁচজন পুরুষ পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ভোরে প্রাণিচিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যায় সন্দেহভাজন চারজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আনন্দে মেতেছে হায়দরাবাদের মানুষ।
উন্নাওয়ের ওই নারীকে পেটানো ও ছুরিকাঘাত করা হয়। হামলাকারী পাঁচজনের মধ্যে ওই নারীকে ধর্ষণ মামলার দুই আসামিও ছিলেন।
গতকাল শুক্রবার শেষ রাতের দিকে দিল্লির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারী মারা গেছেন।
হাসপাতালে যাওয়ার পথে পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই নারী পাঁচ হামলাকারীর নাম পুলিশকে বলেন। ওই নারী পুলিশকে জানান, ধর্ষণ মামলার শুনানির জন্য তিনি আদালতে যাচ্ছিলেন। এ সময় উন্নাওতে তাঁর গ্রামের কাছের রেলস্টেশনে পাঁচজন তাঁকে ঘিরে ধরেন। হামলাকারীদের মধ্যে ধর্ষণ মামলার দুই আসামিও ছিলেন।
হাসপাতালে পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই নারী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ভোর চারটার দিকে আমি রায়বেরিলির ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনে যাচ্ছিলাম। তাঁরা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁরা আমাকে ঘিরে ধরেছিলেন। প্রথমে লাঠি দিয়ে আমার পায়ে আঘাত করেন। পরে আমার গলায় ছুরিকাঘাত করেন। এরপর তাঁরা আমার শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন।’
আগুনে ওই নারীর শরীরের ৯০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার পর উত্তর প্রদেশ থেকে উড়োজাহাজে করে তাঁকে সফদরজং হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওই নারী।
সফদরজং হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শালাভ কুমার বলেন, ‘রাত ১১টা ১০ মিনিটে ওই নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হন। আমরা তাঁর জ্ঞান ফেরাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাত ১১টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা যান।’
গত মার্চে ওই নারী পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, শিবম ত্রিবেদী ও তাঁর প্রতিবেশী শুভম ত্রিবেদী তাঁকে গণধর্ষণ করেন। ধর্ষণের মামলা আদালতে চলছিল। পাঁচ দিন আগে শিবম ত্রিবেদী জামিনে ছাড়া পান। শুভম ত্রিবেদী পলাতক ছিলেন। নারীর অভিযোগ, হামলার সময় শিবম, শুভম ও তাঁদের দুজনের বাবাও ছিলেন।
পুলিশ পাঁচ হামলাকারীকে বাড়ি থেকে আটক করেছে।
নারীর ধর্ষণের মামলার আসামি শিবম ত্রিবেদী কীভাবে জামিনে ছাড়া পেলেন, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যে হায়দরাবাদের এক নারী পশুচিকিৎসককে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন চার অভিযুক্ত পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ভোরে তেলেঙ্গানার সাদনগরে পুলিশের গুলিতে ওই চারজন মারা যান। পুলিশের দাবি, অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিরা পুলিশদের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে আক্রমণ করে পালানোর চেষ্টা করেন। তখনই ‘বন্দুকযুদ্ধ’।
মহাসড়কের যে আন্ডারপাসের তলায় ওই নারীর আধপোড়া মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, তার কাছেই গতকাল ভোরে চারজনের লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের হেফাজতে থাকা সন্দেহভাজন অভিযুক্তদের এমন নিহত হওয়ার খবর ভারতকে দুই শিবিরে বিভক্ত করেছে। নিহত চিকিৎসকের পরিবারের সবাই বলেছেন, ঘটনার ১০ দিনের মাথায় অপরাধীরা পাপের সাজা পেলেন। এবার ওই নারীর আত্মা শান্তি পাবে। অন্ধ্র প্রদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক স্মরণজিত সেন বলেছেন, ‘এমনটাই হওয়ার ছিল। আমি জানতাম, এ রকমই কিছু হবে। যদিও পুলিশের এই কাজ পেশাদারসুলভ নয়।’
তেলেঙ্গানার আইনমন্ত্রী এ ইন্দ্রকরণ রেড্ডি গণমাধ্যমকে বলেন, ওরা পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টা করায় পুলিশ গুলি চালায়। ঈশ্বর ওদের অপরাধের সাজা দিয়েছেন।
আর মানবাধিকারকর্মীরা সমালোচনায় মুখর। আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার বলেছেন, যা ঘটেছে তা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। পুলিশের এই ভূমিকা নিন্দনীয়। এই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ বিষয়ে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
বলিউডের অভিনেতা ঋষি কাপুর টুইট করেছেন, ব্রাভো। ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় সাইনা নেওয়াল বলেছেন, ‘হায়দরাবাদ পুলিশ দারুণ কাজ করেছে। স্যালুট।’ এতে পক্ষে-বিপক্ষে গোটা দেশ দ্বিধাবিভক্ত।