৩৯ লাশ নিয়ে চীনের সংবাদপত্রে ক্ষোভ
লরিতে ৩৯ লাশ পাওয়ার ঘটনার দায় যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অন্য দেশগুলোকেও নিতে হবে বলে চীনের সংবাদপত্রে মন্তব্য করা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ওই দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে চীনের সংবাদপত্রে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে।
যুক্তরাজ্যের একটি রেফ্রিজারেটেড লরিতে পাওয়া ৩৯ লাশের সবই চীনের নাগরিকদের বলে মনে করা হচ্ছে। নিহত ব্যক্তিরা মানব পাচারের শিকার হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আজ শুক্রবার চীনের সরকার সমর্থিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, যুক্তরাজ্য ও অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে ৩৯ লাশের ব্যাপারে অবশ্যই কিছু দায়িত্ব নিতে হবে।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পৌনে দুইটার দিকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের মধ্যাঞ্চল থেকে ২০ মাইল দূরে এসেক্সের গ্রেস শহরের শিল্প এলাকায় একটি লরির কনটেইনার থেকে ৩৯টি লাশ উদ্ধার করে যুক্তরাজ্যের পুলিশ। এ ঘটনায় লরির চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এসেক্স পুলিশের নতুন বিবৃতি অনুযায়ী, বেলজিয়াম থেকে ওই লরি যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছিল। আয়ারল্যান্ডের অন্যতম সমুদ্রবন্দর হোলিহেড দিয়ে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বেলজিয়ামের জিব্রেগা থেকে এসেক্সের পারফ্লিটে আসে লরিটি। এ ঘটনার তদন্তে মানব পাচারের বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে পুলিশ।
বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাজ্যে এভাবে ট্রাকে করে অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশের চেষ্টার ঘটনা ঘটছে। এর আগেও যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসনের এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল। ২০০০ সালে দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর ডোভারে টমেটোর ট্রাকে ৫৮ চীনা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছিল ব্রিটিশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
চীনের বহুল পঠিত ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে বলা অসম্ভব যে এই মর্মান্তিক ঘটনার দায়িত্ব কতখানি হওয়া উচিত। তবে এই ধরনের গুরুতর মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় নাগরিকদের চোখের সামনে। এটা স্পষ্ট যে, যুক্তরাজ্য ও সংশ্লিষ্ট ইউরোপীয় দেশগুলো এই ধরনের মৃত্যু রোধে তাদের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেনি।
চীনের শাসক কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র এ সংবাদপত্রে আরও বলা হয়, ‘এমনকি যদি দেশে পাচার হতেও দেখা যায়, এর জন্য ভুক্তভোগীদের মৃত্যুর জন্য তাদের দোষ দেওয়া যায় না। আশা করি, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় দেশগুলো মানবাধিকার রক্ষায় তাদের করা নানা প্রতিশ্রুতি কার্যকর করবে এবং চীনের নাগরিকদের নির্যাতন ও হঠাৎ মৃত্যু থেকে বাঁচাতে সেই সব কার্যকর করবে। দুই দশক আগে ঘটা ডোভার দুর্ঘটনা থেকে ব্রিটেন শিক্ষা নেয়নি বলে মনে হচ্ছে।’
সংবাদপত্রে বলা হয়, ‘ভাবুন তো, ইউরোপীয় নাগরিকেরা এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হলে ইউরোপীয় দেশগুলো সম্মিলিতভাবে কতটা পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যবস্থা নিত। ব্রিটিশ ও ইউরোপীয়রা নিজেদের কি জিজ্ঞাসা করতে পারবে, কেন তারা কেন একই মর্মান্তিক ঘটনা এড়াতে পারল না...ঘটনাগুলো রোধে তারা যা করতে পারত সেসব গুরুতর ব্যবস্থা কি নিয়েছে?’
চীন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মৃতদেহগুলো তাদের বলে নিশ্চিত করেনি। লন্ডনে অবস্থিত চীনের দূতাবাস আজ জানিয়েছে, এসেক্সে পুলিশের সঙ্গে তাদের প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করেছে। দূতাবাস আরও জানিয়েছে, নিহত লোকজনের পরিচয় শনাক্তের কাজ করছে ব্রিটিশ পুলিশ। এই মুহূর্তে নিহত ব্যক্তিরা চীনের নাগরিক কি না, তা বলা সম্ভব না।
এসেক্সের পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, তারা প্রাথমিকভাবে নিহত লোকজনকে শনাক্ত করার বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছে। অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারা কাজও করছে।
বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষ বলেছে, যুক্তরাজ্যে প্রবেশের আগে লরিটি কতক্ষণ সে দেশে ছিল, তারা এ বিষয়টি তদন্ত করছে।
লরিটির সামনের দিকের কাচে সাঁটানো স্টিকারে লেখা ছিল, ‘আয়ারল্যান্ড’ ও ‘দ্য আলটিমেট ড্রিম’। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকার বলেছেন, আয়ারল্যান্ড হয়ে লরিটি যুক্তরাজ্যে গিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে তদন্ত করা হবে।