তেল হামলার 'উচিত জবাব' দেবে সৌদি আরব
তেল শোধনাগারে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার ‘উচিত জবাব’ দেবে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। হামলার পেছনে আবারও ইরানকে দায়ী করেছে দেশটি। এ হামলার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ শক্তিশালী দেশটি।
আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের এক খবরে বলা হয়, রিয়াদে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের হামলার ঘটনার তদন্ত শেষ হওয়ার পর যথাযথ এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান।
গত শনিবার সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হামলা চালানো হয়। আরামকোর সবচেয়ে বড় তেল পরিশোধনাগার আবকায়িক ও খুরাইস এলাকায় এ হামলার দায় স্বীকার করে ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। তবে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি ও গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, ইরানই ওই হামলার জন্য দায়ী। সৌদি আরবও হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছে। যদিও তেহরান ওই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তারা তেল শোধনাগারে হামলা প্রতিহত করতে সৌদি আরবে সেনা পাঠাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণার পর গতকাল শনিবার তেহরানে এক অনুষ্ঠানে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইরানিয়ান রেভল্যুশনারি গার্ডসের কমান্ডার-ইন-চিফ মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি। তিনি বলেছেন, যেকোনো ধরনের আগ্রাসন ঠেকাতে ইরান সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। ইরানের ওপর যে আক্রমণ করবে, তাকেই প্রতিহত করা হবে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের দাবি করেছেন, হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ইরানের। হামলার ঘটনা তদন্তের সব তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, সৌদি আরব তার মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করছে। হামলার ঘটনার তদন্ত শেষ হওয়ার পর যথাযথ এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি আবারও বলেন, আবকায়িক ও খুরাইস তেল শোধনাগারে হামলা হয়েছে উত্তর দিক থেকে।ইয়েমেনের দিক থেকে নয়। তবে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কোন জায়গা থেকে হামলা করা হয়েছে, সেটাও স্পষ্ট করেননি। তিনি এই হামলার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক হওয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মৃদুভাষী সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই কর্মকাণ্ডের পেছনে যারা রয়েছে, তাদের প্রতি নিন্দা জানানো এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিকে হুমকিতে ফেলা এই বেপরোয়া আচরণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রও এই হামলার পেছনে ইরানকে দায়ী করে বলেছে, ইরানের দক্ষিণ দিক থেকে এই হামলা চালানোর প্রমাণ পেয়েছে তারা।
হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের জনবহুল এলাকাগুলোতে একের পর এক রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধে লিপ্ত। ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেন-যুদ্ধ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। দেশটির প্রেসিডেন্ট হুতি বিদ্রোহীদের কারণে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্টকে সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব।
ইরান সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয় এবং ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ নিয়ে এ বছর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক চরম আকার ধারণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, জুন ও জুলাই মাসে উপসাগরীয় এলাকায় দুটি তেল ট্যাংকারে হামলা চালানোর ঘটনার পেছনে ইরানের হাত রয়েছে। তবে দুটি অভিযোগই অস্বীকার করেছে ইরান।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে ইরানের নেতাদের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আরোপের নীতির প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন পাওয়া যায়। তবে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েমেনে তার দেশের চার বছর ধরে বোমা হামলার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি। এর পরিবর্তে তিনি এটা স্পষ্ট করেছেন, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এই মুহূর্তে সৌদি আরবের পশ্চিমা মিত্রদের সমর্থন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের।