কাশ্মীর ইস্যুতে লড়াইয়ের ঘোষণা ইমরান খানের
জম্মু ও কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করার ভারতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেছেন, কাশ্মীর ইস্যুটি বিশ্বের প্রতিটি ফোরামে তুলবেন। জাতিসংঘসহ প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন। তাঁর মতে, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে পৃথক করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। এর মাধ্যমে জাতিগত নিধন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে ইমরান খানের এ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার কথা তুলে ধরে জানানো হয়, কাশ্মীরের জনগণের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে পাকিস্তানে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। ভারতের ঘোষণার এক দিন পরও কাশ্মীর অঞ্চলটি এখনো অবরুদ্ধ হয়ে আছে।
কাশ্মীরকে ভারত ও পাকিস্তান দুটো দেশই নিজেদের বলে দাবি করে। দুটো দেশই কাশ্মীরের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ভারতের অংশে বহু বছর ধরে স্বতন্ত্র শাসনের জন্য লড়াই করে আসছে বিদ্রোহীরা। এ লড়াইয়ে গত তিন দশকে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, বিদ্রোহীদের মদদ দিয়ে থাকে পাকিস্তান। যদিও এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে পাকিস্তান। দেশটির ভাষ্য, স্বতন্ত্র শাসনে স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরিদের দাবির প্রতি পাকিস্তানের শুধু নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন রয়েছে।
কাশ্মীর নিয়ে ভারতের ঘোষণার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইমরান খান বলেছেন, তিনি এটি বিশ্বকে জানাবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের মাধ্যমে আমরা তা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তুলব। প্রতিটি ফোরামে প্রতিটি দেশের প্রধানের সঙ্গে আমরা এ নিয়ে কথা বলব...আমরা তা গণমাধ্যমে তুলব এবং বিশ্বকে জানাব।’
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার মাধ্যমে ভারত মুসলিম–অধ্যুষিত রাজ্যের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে মনে করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি যে ভারত কাশ্মীরে জাতিগত নিধন শুরু করবে। তারা স্থানীয় লোকজনকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করবে এবং বাইরে থেকে অন্যদের সেখানে নিয়ে এসে সংখ্যাগরিষ্ঠ বানাবে। এর ফলে স্থানীয় লোকজন দাসে পরিণত হওয়া ছাড়া আর কিছু হবে না।’
এর আগে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান বলেছিলেন, এই লড়াইয়ে কাশ্মীরিদের পাশে দাঁড়াবে তাঁর সেনারা।
প্রতিবেশী চীনও ভারতের এই পদক্ষেপকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে বিরোধিতা করেছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদের পর সেখানে ভারতের শাসনে অসন্তুষ্ট স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরিদের বড় ধরনের বিক্ষোভের আশঙ্কায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। অঞ্চলটিতে টেলিকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গণমাধ্যম পৌঁছাতে পারছে না। বিবিসি জানিয়েছে, তাদের শ্রীনগর প্রতিবেদক আমির পিরজাদা ফুঁসে থাকা এলাকার একটিতে পৌঁছাতে পেরেছেন। সেখানের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফুঁসছেন এবং নিজেদের প্রতারিত ভাবছেন।
কোনো কোনো স্থানে বিক্ষোভ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে পাথর ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় নেতাদের আটক করা হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় বসবাসরত কাশ্মীরিরা জানিয়েছেন, তাঁরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
গত সোমবার ঘোষণার দিন থেকেই বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে কাশ্মীরে। এর আগেই এলাকাটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক অবস্থানের এলাকা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এবার আরও বেশিসংখ্যক সেনা পাঠানো হয়েছে সেখানে।
ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারায় জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। পররাষ্ট্র, যোগাযোগ ও প্রতিরক্ষা ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ওই রাজ্যকে দেওয়া হয়েছিল। তাদের আলাদা পতাকা ছিল। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আলাদা সংবিধান ছিল। কালে কালে সব হারিয়ে অবশিষ্ট ছিল সাংবিধানিক ধারা ও কিছু বিশেষ ক্ষমতা। এবার সেটাও নিয়ে নেওয়া হলো। সরকারি প্রস্তাব বিল আকারে পেশও করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির নির্দেশ জারির মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার বাতিল করে দিয়েছে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা। শুধু তা-ই নয়, জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুই টুকরোও করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য থেকে লাদাখকে বের করে তৈরি করা হয়েছে নতুন এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যার কোনো বিধানসভা থাকবে না। জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তার পরিচিতি হবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে। তবে তার বিধানসভা থাকবে। দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পরিচালিত করবেন দুই লেফটেন্যান্ট গভর্নর।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার প্রথমে রাজ্যসভা ও পরে লোকসভায় এই ঘোষণা দেন। বিরোধীদের প্রবল প্রতিরোধের মধ্যে এ-সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির নির্দেশনামা তিনি পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ৩৭০ ধারা কাশ্মীরকে দেশের অন্য অংশের সঙ্গে একাত্ম করতে পারেনি।