এবার পাল্টাচ্ছে বর্ধমান রেলস্টেশনের নাম
বদলে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান রেলস্টেশনের নাম। নতুন নাম হবে স্বাধীনতাসংগ্রামী বটুকেশ্বর দত্তর নামে। গত শনিবার বিহারের জক্কনপুরে বটুকেশ্বর দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিহার রাজ্যের বিজেপিপ্রধান নিত্যানন্দ রাই।
মন্ত্রী বলেন, বর্ধমান রেলস্টেশনের নাম বদলিয়ে রাখা হবে স্বাধীনতাসংগ্রামী বটুকেশ্বর দত্ত স্টেশন।
১৯১০ সালে বর্ধমান জেলায় জন্ম বটুকেশ্বর দত্তের। বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদের হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশ নেন। পরবর্তী সময়ে তিনি স্বাধীনতাসংগ্রামী ভগত সিংয়ের সহযোগী হয়ে দিল্লির ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে হামলায় অংশ নেন। ব্রিটিশ পুলিশ হত্যায় অভিযুক্ত ভগত সিংকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এই মামলায় বটুকেশ্বরকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। স্বাধীনতার পর বটুকেশ্বর দত্ত বিহারের জক্কনপুরে গিয়ে বাস করেন । ১৯৬৫ সালে দিল্লিতে মারা যান তিনি। এবার তাঁর নামে বর্ধমান রেলস্টেশনের নামকরণের উদ্যোগ নিয়েছে মোদি সরকার।
আসলে গত বছর থেকে নামবদলের খেলায় মেতেছে মোদি সরকার। হিন্দুত্ববাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন স্থানের ঐতিহাসিক নামগুলো মুছে আবার পূর্বনাম ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে উত্তর প্রদেশের বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের নাম বদলে দিয়েছেন। উত্তর প্রদেশের ঐতিহাসিক মোঘলসরাই রেলস্টেশনের নাম বদলে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশন করেছেন তিনি। এলাহাবাদের নাম হয়েছে প্রয়াগরাজ। ঐতিহাসিক ফৈজাবাদের নাম রাখা হচ্ছে অযোধ্যা। বিজেপির নেতারা নতুন করে দাবি তুলেছেন ঐতিহাসিক আগ্রার নাম বদলেরও। আগ্রার সাবেক নাম ‘আগ্রাভন’কে ফিরিয়ে আনতে চান তাঁরা।
তেলেঙ্গানা রাজ্যেও শুরু হয়েছে নামবদলের খেলা। রাজ্যের রাজধানী হায়দরাবাদের নাম ভাগ্যনগর করার জন্য দাবি তুলেছেন তেলেঙ্গার বিজেপির নেতারা। সাবেক মুসলিম শাসকেরা এই ভাগ্যনগরের নাম বদলিয়ে রেখেছিলেন হায়দরাবাদ। তেলেঙ্গানার বিজেপির শীর্ষ নেতা রাজা সিং চান ভাগ্যনগর নাম ফিরিয়ে আনতে। বিজেপি আরও বলেছে, শুধু হায়দরাবাদ নয়, সেকেন্দারাবাদ ও করিমনগরের মতো আরও কয়েকটি ঐতিহাসিক শহরের নাম বদল করতে চান তাঁরা।
উত্তর প্রদেশ, তেলেঙ্গানার মতো মোদির শহর গুজরাটেও শুরু হয়েছে নামবদলের পালা। গুজরাটের পুরোনো রাজধানী আহমেদাবাদের নাম বদল করার উদ্যোগ নিয়েছে গুজরাটের বিজেপির নেতৃত্বাধীন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানির সরকার। সুপ্রাচীন এই বাণিজ্যিক শহরের নাম পাল্টে কর্ণাবতী রাখার উদ্যোগ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন গুজরাটের উপমুখ্যমন্ত্রী নিতিন প্যাটেল।
গুজরাটের সবরমতী নদীর তীরে অবস্থান আহমেদাবাদ শহরের। এই শহরের নাম একাদশ শতাব্দীর আগে ছিল আশাপল্লি। এরপর চৌলুক্য বংশের রাজা কর্ণ এই শহর আক্রমণ করে দখল করে নেন। এরপর রাখা হয় কর্ণাবতী। তাঁর রাজত্বকালে এই শহরকে রাজধানী ঘোষণা করা হয়। ১৪১১ সালে প্রথম আহমেদ শাহ এই শহরকে সাজিয়ে তোলেন। শহরটি গুজরাটের একটি বাণিজ্য শহর হিসেবে গড়ে ওঠে। কর্ণবতীর পরিবর্তে এর নাম রাখা হয় আহমেদাবাদ।
এর আগে ভারতের গুরুগাঁওয়ের নাম বদলে রাখা হয় গুরুগ্রাম। ১৯৯৬ সালে মুম্বাদেবীর নামে বোম্বাইয়ের নাম বদলে হয়েছে মুম্বাই। ২০১৪ সালে কর্ণাটকের রাজধানী ব্যাঙ্গালোরের নাম বদলে হয়েছে বেঙ্গালুরু। ২০১১ সালে উড়িষ্যা হয়েছে ওডিশা। একই বছর পণ্ডিচেরি নাম বদলে হয়েছে পদুচেরি। আর ক্যালকাটা হয়েছে কলকাতা। নতুন করে আরও দাবি উঠেছে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের নাম শম্ভাজিনগর, মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের নাম ভোজপাল এবং সিমলার নাম শ্যামলা করার।