হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহার করব, জানালেন মাহাথির
মালয়েশিয়া যতটা সম্ভব হুয়াওয়ের পণ্যগুলো ব্যবহার করে যাবে। চীনের এ কোম্পানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্ব ধারণার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এ কথাই জানালেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
টোকিওতে আজ বৃহস্পতিবার এক সম্মেলনে মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহার থেকে মালয়েশিয়াকে বিরত রাখা যাবে না। মালয়েশিয়া যতটা সম্ভব হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহার করে যাবে। চীনের বৃহৎ টেলিকম কোম্পানি হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে গোপন নজরদারিসহ নানা বিতর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারির পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
৯৩ বছর বয়সী মাহাথির এ সময় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা স্বীকার করেন। তবে, তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ কিছু গোয়েন্দাগিরি হতে পারে। কিন্তু মালয়েশিয়ায় গোয়েন্দাগিরি করার কী আছে? কারণ, আমরা একটি খোলা বই।’ তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার চেয়ে হুয়াওয়ের গবেষণা সক্ষমতা অনেক বেশি। সুতরাং আমরা যতটুকু সম্ভব তাদের প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করব। সবাই জানে, যদি কোনো দেশ মালয়েশিয়ার দিকে হাত বাড়াতে চায়, তবে তাকে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা বাধা দেব না। কারণ, এটি সময়ের অপচয়।’
এখন থেকে হুয়াওয়ের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে কিছু সেবার আর কোনো আপডেট ভার্সন দেবে না বলে জানায় মার্কিন টেক জায়ান্ট গুগল। এটাকে হুয়াওয়ের ওপর নতুন আঘাত মনে করা হচ্ছে। এতে করে নতুন হুয়াওয়ে স্মার্টফোনে গুগলের ইউটিউব, গুগল ম্যাপসের মতো অ্যাপগুলো আর থাকবে না। তবে এর পাল্টা হিসেবে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে নিজেদের আগেই প্রস্তুত করে রেখেছিল। হুয়াওয়ের নিজেদের অপারেটিং সিস্টেমের নাম ‘হংমেং’।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে গুগল জানায়, তারা আদেশ মেনেই কাজ করছে এবং এর প্রভাব পর্যালোচনা করছে। গুগলের নতুন এই সিদ্ধান্তের কারণে হুয়াওয়ে গুগলের নিরাপত্তাবিষয়ক আপডেট ও প্রযুক্তিগত সহায়তা আর পাবে না। তবে ‘ওপেনসোর্স প্ল্যাটফর্ম’-এ থাকা সফটওয়্যারগুলোই শুধু সচল থাকবে হুয়াওয়ের স্মার্টফোনগুলোয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হুয়াওয়ের নতুন ডিভাইসে ইউটিউব, জি-মেইল, গুগল ম্যাপ, ক্রোম ব্রাউজারের মতো জনপ্রিয় গুগল অ্যাপসগুলো আর থাকবে না। কারণ, এসব সেবা ওপেনসোর্স লাইসেন্সের আওতায় পড়ে না। এগুলো পেতে গুগলের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তির প্রয়োজন হয়। তবে গুগল প্লে স্টোরের অ্যাকসেস থাকা বর্তমান হুয়াওয়ের ডিভাইস ব্যবহারকারীরা এখনো গুগলের অ্যাপ্লিকেশনের আপডেট ডাউনলোড করতে পারবেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত হুয়াওয়ের ব্যবসার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। পশ্চিমে হুয়াওয়ের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোর বাদে ফোন কিনতে আগ্রহী হন না।
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করে। এর ফলে সরকারি অনুমোদন ছাড়া মার্কিন সংস্থা থেকে প্রযুক্তিসেবা নেওয়ার পথ বন্ধ করা হয় হুয়াওয়ের জন্য।
আসলে চীনা বাণিজ্য নিয়ে দ্বন্দ্বে বরাবরই হুয়াওয়েকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে আসছেন ট্রাম্প। গত বছর থেকে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে ফাইভ-জি সেবার কাজে হুয়াওয়েকে ‘নিষিদ্ধ’ও ঘোষণা করা হয়। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে টেলিকম নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা দেশগুলো। ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার না করার ঘোষণা দেয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডও। যুক্তরাজ্য প্রথমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও পরে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে হুয়াওয়ে। তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ, বিবিসি।