বিজেপিবিরোধী সরকার গঠনে তোড়জোড়, ছুটছেন নাইডু
আর মাত্র চার দিন বাকি। ২৩ মে নিশ্চিত হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের লড়াইয়ে জয়ী হলো কারা। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম ও শেষ দফার ভোট গ্রহণ কাল রোববার। কাল বিকেলে ভোট শেষ হওয়ার পর বুথফেরত জরিপের ফলাফলগুলো প্রচার করতে পারবে ভারতীয় গণমাধ্যম। এর আগেই বিজেপিবিরোধী দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার থেকেই নানা নেতার সঙ্গে বসছেন অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও তেলেগু দেশম পার্টির নেতা নাইডু। আজ শনিবার নাইডুর সঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর বৈঠকের পর নির্বাচনের ফলাফল–পূর্ব নাটক ভিন্ন গতি পেয়েছে। আর সেই নাটকে নিঃসন্দেহে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে উঠেছেন ৬৯ বছরের নারা চন্দ্রবাবু নাইডু।
আজ রাহুল গান্ধীর বাসভবনে গিয়ে দেখা করেন চন্দ্রবাবু। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দুই নেতার বৈঠক হয়। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনী ফলাফলের আগে বিজেপিবিরোধী জোট গঠনের জন্য বৈঠকে আলোচনা হয়। ফলাফলের পর সব দলকে এক কাতারে নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন নাইডু।
রাহুলের সঙ্গে বৈঠকের আগে চন্দ্রবাবু নাইডু ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) দুই নেতা সুধাকর রেড্ডি ও ডি রাজার সঙ্গে বৈঠক করেন। মহারাষ্ট্রের এনসিপির প্রধান শারদ পাওয়ারের সঙ্গেও আজ বৈঠকে বসেন চন্দ্রবাবু। আজই তিনি বসছেন লোকতান্ত্রিক জনদা দলের (এলজেডি) প্রধান শারদ যাদবের সঙ্গে। আবার আজ রাতে নাইডু বৈঠকে বসবেন উত্তর প্রদেশ রাজ্যের দুই শক্তিশালী দল বহুজন সমাজ পার্টির প্রধান মায়াবতী এবং সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের সঙ্গে।
গতকাল শুক্রবার নাইডু বসেন সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও আম আদমি পার্টির জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেরজিওয়ালের সঙ্গে। সব বৈঠকেই আলোচনা বিষয় একটিই ছিল, বিজেপিবিরোধী জোট গঠন।
ভারতের রাজনীতিতে এখনকার দিনগুলো খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচনী রাজনীতির জটিল খেলার অন্তিম মুহূর্ত উপস্থিত। আর সেই সময় অন্ধ্রের কৃষক পরিবারের সন্তান নাইডু বড় ভূমিকায় নেমেছেন। আর সেই ভূমিকায় নেমে একজন সত্যিকারের নেতার মতো শত্রু–মিত্রও বিভেদ করছেন না। অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে হয়েছে তেলেঙ্গানা রাজ্য। সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (টিআরএস) প্রধান কে চন্দ্রশেখ রাওয়ের সঙ্গে নাইডুর তিক্ত সম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু আজ সেই তিক্ততা ভুলতে একটুও কসুর করছেন না অন্ধ্র–প্রধান। বলেছেন, ‘আমরা শুধু টিআরএস নয়, বিজেপিবিরোধী যেকোনো শক্তিকে স্বাগত জানাই। আমাদের মহাজোটে শামিল হতে এমন সব দলকেই আহ্বান জানাই।’
সাত দফার লোকসভার ভোটের শুরু হয়েছিল ১১ এপ্রিল। শেষ হচ্ছে কাল। নাইডুর অন্ধ্রে ১১ এপ্রিল লোকসভার ২৫ আসন এবং বিধানসভার ১৭৫ আসনে একযোগে ভোট হয়।
চন্দ্রবাবু নাইডুর এ তৎপরতা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? ভারতে কি তাহলে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না? আবার কি আঞ্চলিক দলগুলো ক্ষমতার নিয়ামক হয়ে উঠবে বা এসব দলগুলোর মধ্য থেকেই কেউ হয়ে উঠবেন ভারত শাসক?
নাইডু তাঁর উদ্যোগ নিয়ে বলেছেন, ‘আমি সকলের সঙ্গে কথা বলছি। কথা বলে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি করব।’
কী থাকছে সেই পরিকল্পনা তা এখনো অজানা।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার অনিতা কয়াল গতকাল নিউজএইটিন ডট কমে এক নিবন্ধে বলছেন, ‘বিরোধী শক্তিগুলোকে এক জায়গায় করার অতীত অভিজ্ঞতা নাইডুর আছে। ১৯৯৬ সালে সিপিএমের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হারকিশেন সিং সুরজিতকে সঙ্গে নিয়ে ইউনাইটেড ফ্রন্ট গঠনের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। অতীতের সেই অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাতে চান নাইডু।’
কয়ালের মতে, নাইডুর এবারের তৎপরতা ব্যর্থ হলে রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক অবস্থানে চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে তাঁর।