রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তারে বাধা তুলে নিলেন সুপ্রিম কোর্ট
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চাঞ্চল্যকর সারদা ও রোজভ্যালি চিটফান্ড দুর্নীতি মামলায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তারে বাধা তুলে নিলেন সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইয়ের জেরার সময় রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
গতকাল শুক্রবার প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এক নির্দেশে জানিয়ে দেন, রাজীব কুমারকে জেরার জন্য সিবিআই তাদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করতে পারবে। তবে তা হবে সাত দিন পর। এ সময় রাজীব কুমার যেকোনো হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিতে পারবেন।
এত দিন জেরার স্বার্থে রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তার করার ওপর সুপ্রিম কোর্টের যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, গতকাল তা কার্যত তুলে নেওয়া হয়। এই নির্দেশে জোর ধাক্কা খেলেন রাজীব কুমার। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর রাজীব কুমারকে কোনো হাইকোর্ট আগাম জামিন দেবেন কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠে এসেছে।
রাজীব কুমারকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছে কলকাতার বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাঁরা বলেন, এই নির্দেশের ফলে এবার শাসক দলের মুখ পুড়েছে। তাদের এ রকম শিক্ষা দেওয়াই উচিত।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, যা হয়েছে, ঠিক হয়েছে। এটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। রাজীব কুমার আইনের রক্ষক হয়েও রাজ্য সরকারের সহায়তায় আইন ভঙ্গ করে আসছিলেন।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, যাঁরা পুলিশ প্রশাসনকে দলদাসে পরিণত করেন, তাঁদের এ রকম শিক্ষা হওয়া উচিত।
জাতীয় কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, সারদার টাকা আত্মসাৎ করে কারা সততার প্রতীক হয়েছেন, সেটা এবার স্পষ্ট হলো।
সারদার ২১ হাজার কোটি রুপি এবং রোজভ্যালির ৬০ হাজার রুটি রুপির আর্থিক দুর্নীতি মামলায় জড়িয়ে পড়েন পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের কয়েকজন নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়ক। ২০১৩ সালে ফাঁস হয় সারদার আর্থিক দুর্নীতির ঘটনা। ১৭ লাখ ক্ষুদ্র আমানতকারীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে।
অন্যদিকে, ২০১৫ সালের মার্চে ফাঁস হয় রোজভ্যালি আর্থিক দুর্নীতির কথা। অভিযোগ ওঠে, ক্ষুদ্র আমানতকারীদের বিনিয়োগকৃত ৬০ হাজার কোটি রুপি আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হন রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। আরও গ্রেপ্তার হন তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল এবং সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত আছেন তাপস পাল ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সারদা ও রোজভ্যালির কর্ণধারেরা এখনো কারাগারে। এই দুটি মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)।
সারদা, রোজভ্যালি চিটফান্ড দুর্নীতি মামলা তদন্তে প্রথম পর্যায়ে গঠন করা হয়েছিল পুলিশের বিশেষ তদন্ত টিম। এই টিমের প্রধান করা হয়েছিল তৎকালীন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে। রাজীব কুমার ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন। সিবিআই তদন্তে নামলে রাজীব কুমার অসহযোগিতা করতে থাকেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে সারদা ও রোজভ্যালি দুর্নীতি মামলার নথি লোপাট করার।
সিবিআইয়ের একটি তদন্ত দল গত ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় রাজীব কুমারের বাসভবনে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে বাধা দেয় কলকাতা পুলিশ। এ সময় কলকাতার পুলিশ সিবিআই কর্মকর্তাদের রাজীব কুমারের বাসভবনের কাছ থেকে জোর করে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে আটক রাখে কলকাতার শেক্সপিয়ার সরণি থানায়।
এদিকে রাজীব কুমারের বাসভবনে বেআইনিভাবে ঢোকার চেষ্টার অভিযোগ তুলে ওই দিন রাতেই কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে ধরনায় বা অবস্থান ধর্মঘটে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে থাকেন রাজীব কুমারও। এই ঘটনার পর সিবিআই রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের ডিভিশন বেঞ্চ ৫ ফেব্রুয়ারি এক নির্দেশে জানান, সিবিআই রাজীব কুমারকে জেরা করতে পারবে, তবে জেরার সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। আর জেরা হবে মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের সিবিআই দপ্তরে।