আবেদন খারিজ, কারাগারেই থাকছেন 'হীরক রাজা'
পলাতক ব্যবসায়ী পাঞ্জাব ব্যাংক কেলেঙ্কারির নায়ক নীরব মোদির জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন যুক্তরাজ্যর একটি আদালত। জামিন খারিজ হওয়ার পর কারাগারে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ২৪ মে পর্যন্ত ‘হীরক রাজা’কে কারাগারে রাখা হবে। এরপরই হবে পরবর্তী শুনানি।
ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার লন্ডনের ওয়ান্ডসওর্থ কারাগার থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আদালতের সঙ্গে যুক্ত হন নীরব মোদি। জামিন আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। আদালত জামিন আবেদন নাকচ করেন। নিজের পরিচয় দেওয়া ছাড়া শুনানিতে কোনো কথা বলেননি নীরব মোদি। আগামী ২৪ মে পর্যন্ত নীরবকে কারাগারে থাকতে হবে। এরপর ৩০ মে আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
নীরব মোদি ভারতে ‘ডায়মন্ড কিং’ বা ‘হীরক রাজা’ নামে পরিচিত। প্রতারণা ছাড়াও নীরবের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি অভিযোগ আছে। এক প্রত্যক্ষদর্শীকে খুনের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি, আরও এক সাক্ষীকে ২০ লাখ রুপি ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। পাশাপাশি নীরবের অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা। এর আগেও তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করেছেন লন্ডনের আদালত। এই নিয়ে তৃতীয়বার তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে গেল।
২০১৮ সালের আগস্টে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের (পিএনবি) ১১ হাজার ২০০ কোটি রুপির আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলায় নীরব মোদির প্রত্যর্পণের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে অনুরোধ করে ভারত। নীরবকে লন্ডনে দেখা যাওয়ার পরই তাঁকে দেশে ফেরাতে সচেষ্ট হয় ভারত। হীরা ব্যবসায়ী নীরবকে ভারতে প্রত্যর্পণ করার বিষয়টি আদালতে পাঠান যুক্তরাজ্যর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। নীরব এবং তাঁর আত্মীয় মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের মুম্বাইয়ের ব্র্যাডি হাউস শাখা থেকে প্রায় ১৩ হাজার কোটি রুপির জালিয়াতি করার অভিযোগ উঠেছে। ওই মামলার তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই দেশ ছাড়েন দুজন। এই মামলায় এখনও নীরব মোদির ১ হাজার ৮৭৩ কোটি রুপির সম্পত্তি বাজেয়াপ্তও করে ভারত সরকার।
ব্যাংকে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে নীরব মোদি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তুলে নিয়েছেন হাজার হাজার কোটি রুপি। গত বছরের শুরুতে ২৮০ কোটি রুপি জালিয়াতিতে একজন হীরা ব্যবসায়ীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রথম সন্দেহে আসে পিএনবির। হীরা ব্যবসার জন্য সুনাম রয়েছে ভারতের গুজরাটের। আর এই গুজরাটের মানুষ হলেন ৪৭ বছরের নীরব মোদি। হীরাসহ বিভিন্ন জুয়েলারির ব্যবসা তাঁর। ফোর্বস সাময়িকীর তালিকায় ২০১৬ সালে ভারতের অন্যতম ধনকুবের ছিলেন এই নীরব মোদি। পরের বছর ধনকুবেরদের বিশ্ব তালিকায় তাঁর স্থান হয় ১ হাজার ২৩৪তমতে।
২০১১ সাল থেকে ব্যাংক জালিয়াতি শুরু হলেও তা ধরা পড়তে লাগে সাত বছর। গত বছর বিদেশের শাখা থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে পিএনবিতে কড়াকড়ি আরোপ কড়া হয়। মোদির কোম্পানি যখন আবার নতুন এলওইউর আবেদন করে, তখন তাদের কাছে পুরোনো কাগজপত্র চাওয়া হয়। আর এতেই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। এরপর তদন্তে ভারতীয় গোয়েন্দারা ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে তত দিনে নীরব দেশ ছাড়েন। তবে ধরা পড়ে যান লন্ডনে। সেখানেই তাঁর বিচার চলছে।
আরও পড়ুন...