বিদায় নিচ্ছে টাটার সাধের ন্যানো গাড়ি

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ন্যানো গাড়ির উৎপাদন এবং বিক্রি বন্ধ করে দেবে টাটা। গতকাল বৃহস্পতিবার টাটা সংস্থার যাত্রীবাহী গাড়ি বিভাগের প্রেসিডেন্ট মায়াঙ্ক পারিখ এ ঘোষণা দেন।
মায়াঙ্ক পারিখ বলেন, ‘গুজরাটের সানন্দে আমাদের ন্যানো গাড়ির উৎপাদন হয়। ২০২০ থেকে দেশে নতুন জ্বালানি বিধি বিএস-সিক্স চালু হলে টাটা আর বর্তমানের ন্যানো গাড়িকে বিএস-সিক্স মানকে উন্নীত করবে না। ফলে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে বন্ধ হয়ে যাবে ন্যানোর উৎপাদন ও বিক্রয়।’
ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এই টাটা। ২০০৬ সালে সাধারণ মানুষের জন্য সস্তার গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করে তারা। কথামতো পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুরে এক লাখ টাকা দামের ন্যানো গাড়ি তৈরি কারখানা গড়ার উদ্যোগ নেয় কোম্পানিটি। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এতে সম্মতি দেন। রাজ্য সরকারের কাছ জমি পাওয়ার পর সিঙ্গুরে কারখানা নির্মাণকাজ শুরু করে টাটা। তবে পরবর্তীতে এক লাখ রুপি দাম ধরে রাখতে পারেনি টাটা। যদিও প্রথমদিকে এক লাখ রুপিতেই ন্যানো গাড়ি বিক্রি হয়।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে আপত্তি জানান সিঙ্গুরের একদল চাষি। এই অনিচ্ছুক জমিদাতাদের নিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গড়ে তোলেন জমি অধিগ্রহণবিরোধী তীব্র আন্দোলন। ফলে এই জমি নিয়ে মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টসহ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এই মামলা ও আন্দোলনের মাঝে টাটার কর্ণধার রতন টাটা ঘোষণা দেন, ন্যানো গাড়ির কারখানা পশ্চিমবঙ্গের হুগলির সিঙ্গুর থেকে সরিয়ে গুজরাটের সানন্দে নিয়ে যাওয়া হবে। সেইমতো সানন্দে গড়ে ওঠে ন্যানো কারখানা। উৎপাদনও শুরু হয়। প্রথম দিকে ন্যানো গাড়ি একটা বাজার পেলেও ধীরে ধীরে সেই বাজার সংকুচিত হতে থাকে। যদিও সানন্দে ন্যানো উৎপাদনের আগে উত্তরাখন্ডের পন্থনগরে টাটার কারখানায় ২০০৯ সালের মার্চে প্রথম উৎপাদন শুরু করে ন্যানো গাড়ি।
এর মধ্যে ভারতে অনেক কোম্পানি নতুন নতুন মডেলের গাড়ি আনে। ভাটা পড়ে ন্যানো গাড়ি বিক্রিতে। অন্যদিকে টাটা বাড়িয়ে দেয় ন্যানোর দামও। বর্তমানে ন্যানো গাড়ির বিক্রি কমে যাওয়ায় টাটাও উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। ২০১৮ সালের জুন মাসে একটি মাত্র ন্যানো গাড়ি উৎপাদিত হয়। যেখানে ২০১৭ সালের জুন মাসে উৎপাদিত হয়েছিল ২৭৫টি ন্যানো গাড়ি। আবার ২০১৮ সালের জুন মাসে ভারতের গাড়ির বাজারে মাত্র ৩টি ন্যানো গাড়ি বিক্রি হয়েছে। বিদেশেও কমে গেছে এই গাড়ির চাহিদা। ২০১৮ সালের জুন মাসে বিদেশে কোনো ন্যানো গাড়ি রপ্তানি করেনি টাটা। কিন্তু ২০১৭ সালের জুনে ২৫টি গাড়ি রপ্তানি হয়েছিল।
আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার টাটা সংস্থার যাত্রীবাহী গাড়ি বিভাগের প্রেসিডেন্ট মায়াঙ্ক পারিখ জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ন্যানোর উৎপাদন এবং বিক্রি বন্ধ করে দেবে টাটা।
প্রায় এক দশক ধরে টাটা গোষ্ঠী ন্যানো গাড়ি উৎপাদন করলেও সেভাবে বাজার ধরে রাখতে পারেনি। তবে টাটার বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ অন্যান্য গাড়ির বাজার এখনো ভারতে অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে আছে।