তাজমহল দেখতে গিয়ে গ্রেপ্তার সেই কিশোর ফিরছে
বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে ১১ বছরের বাংলাদেশি কিশোর মো. সামিরুজ্জামান ওরফে সমীর আহমেদ বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ঢুকে পড়ে পশ্চিমবঙ্গে। সেটা ২০১৩ সালে। তারপর লোকজন ধরে চলে আসে আগ্রায় তাজমহল দেখতে। ফেরার পথে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পাঁচ বছর পর ভারত থেকে দেশে ফিরছে সেই কিশোর। এখন তার বয়স ১৬ বছর।
তাজমহল দেখে কলকাতায় ফেরার পথে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হয় সেই কিশোর সমীর। তার বাড়ি ঢাকার মিরপুর এলাকায়। বাবা শামীম আহমেদ কাপড় ব্যবসায়ী। গ্রেপ্তারের পর সমীরকে পুলিশ ঠাঁই দেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ‘হরিপুরা আমরা সবাই সমাজ উন্নয়ন সমিতি’ বা হাসুস হোমে। জেরায় সমীর বলেছে, সে প্রথমে স্কুলে পড়াশোনা করত। তারপর মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিল। সেখানে বসেই তাজমহল দেখার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। একদিন বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। বেনাপোল সীমান্তে এসে দালালের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে। এরপর তাজমহল দেখার জন্য বিনা টিকিটে ট্রেনে করে চলে যায় আগ্রা।
সেই হাসুস হোম চার মাস আগে বন্ধ হয়ে যায়। তখন ওই হোমে থাকা ৮১ জন বন্দী কিশোরকে স্থানান্তর করা হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ বকের ঢোলা হাটের নুর আলী মেমোরিয়াল সোসাইটি পরিচালিত ‘মাতৃভূমি জুভেনাইল হোম’–এ। ওই সময় এ হোমে তিনজন বাংলাদেশি কিশোর ঠাঁই পায়। এর মধ্যে একজন সমীর। বাকি দুজন হলো আশিক (১৪) ও আপন হৃদয় (১৪)। এবার এই তিন কিশোরের মধ্যে প্রথম ছাড়া পাচ্ছে সমীর। বাকি দুজনের ছাড়া পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে হোম কর্তৃপক্ষ।
কাল রোববার বেলা ১১টায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ হরিদাসপুর-বেনাপোল সীমান্তপথে সমীরকে তুলে দেবে বাংলাদেশের হাতে। মাতৃতীর্থ হোমের সম্পাদক শেখ আসিফ ইকবাল আজ শনিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেছেন, এখন তাঁদের হোমে আরও দুজন বাংলাদেশি কিশোর বন্দী রয়েছে। কাল সমীরকে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ তুলে দেবে বাংলাদেশের হাতে। তিনি আরও বলেছেন, তাঁদের হোমে বাংলাদেশ ছাড়া নেপালের আরও দুই কিশোর রয়েছে। তিনি বলেছেন, সমীরের সঙ্গে আলাপ করে তাঁরা জানতে পারেন, বাবা–মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে সমীর গোপন পথে চলে আসে বেনাপোল-হরিদাসপুর সীমান্তে। তাজমহল দেখার শখ নিয়ে সে ট্রেনে করে আগ্রা গিয়ে তাজমহল দেখে কলকাতায় ফেরার পথে পশ্চিমবঙ্গে ট্রেনের টিকিট পরীক্ষকদের হাতে ধরা পড়ে বিনা টিকিটে চলার জন্য। জেরা করে রেল পুলিশ জানতে পারে, সমীরের বাড়ি বাংলাদেশে। এরপরই পুলিশ সমীরকে তুলে দেয় হাসুস হোমে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাইছি সমীরের মতো এই হোমে বন্দী অন্য দুই বাংলাদেশি কিশোর আশিক ও আপন মুক্তি পেয়ে ফিরে যাক তাদের বাবা–মায়ের কাছে।’